
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৮ পিএম
‘লজ্জা’ সিরিজের চরিত্রের সঙ্গে আমার জীবনের মিল খুঁজে পাই: প্রিয়াংকা

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৯ পিএম

আরও পড়ুন
বিনোদন জগতের টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রিয়াংকা সরকার। মাঝে মধ্যেই গণমাধ্যম সাক্ষাৎকারে এসে নানা কথা বলেন তিনি। সবাই বলেন— 'চিরদিনই তুমি যে আমার' ছাড়া আমার কোনো হিট সিনেমা নেই। কেউ তো বলেন না, আরও একটা ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ কেন তৈরি হয় না? সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে 'লজ্জা' সিনেমা নিয়ে আবারও তার মনের কথা ভক্ত-অনুরাগীদের জানালেন অভিনেত্রী।
লাল সাহসের প্রতীক, শক্তিরও। লালের নানা স্তরবিন্যাস তার পোশাকে থাকে। সঙ্গে কাজ করা সাদা জ্যাকেট। খোঁপায় বাঁধা চুল, কাঁধ ছোঁয়া দুল, অল্প রূপটান— প্রিয়াংকা যেন একই সঙ্গে শান্তি ও শক্তির প্রতীক! ‘লজ্জা’ সিরিজের ‘জয়া’ বুঝি এমনই? প্রশ্ন রাখতেই গালে টোল পড়ল অভিনেত্রীর। তিনি বললেন, কাজ নিয়ে, নিজের জীবন নিয়ে এবং অভিনীত সিনেমা নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই— কোনো লজ্জাও নেই।
প্রিয়াংকা সরকার দ্বিতীয়বার ‘লজ্জা’ দিতে আসছেন?—এমন প্রশ্নের উত্তরে হেসে তিনি বলেন, খুব ভালো বলেছেন। হ্যাঁ, আর লজ্জা পেতে নয়, এবার লজ্জা দিতে আসছি।
প্রিয়াংকা বলেন, আমি শুধু এখনকার কথা বলব না। ‘লজ্জা’র প্রথম পর্ব মুক্তির পর যেভাবে সামাজিক মাধ্যম ছেয়ে গিয়েছিল, যে কোনো অভিনেত্রীর কাছে সেটি গর্বের। অনেকে নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে নিয়েছেন। কত কিছু জানতে পেরেছি। আমি কিন্তু এটাই চেয়েছিলাম। ‘লজ্জা’ যেন সব মানুষের মনের আগল খুলে দেয়।
এবারের পর্বে কী দেখানো হবে? অভিনেত্রী বলেন, আগের গল্প যেখানে শেষ হয়েছিল, সেখান থেকেই পরের পর্বের সূচনা। অনেক বিষয় রয়েছে। যেমন— এই ‘ভার্বাল অ্যাবিউজ’ নিয়ে কথা তো রয়েইছে। আগের পর্বে দম্পতির অন্দরমহলের মান-অপমান প্রকাশ্যে এসেছিল। এবার সেই বৃত্ত আরও একটু বড় হয়েছে। সমাজ কীভাবে লাঞ্ছিতার সঙ্গে ব্যবহার করে, কোন তকমা সাঁটিয়ে দেয় তার গায়ে — এসব দেখানো হবে। লাঞ্ছিতা তার সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নেবে, পথে বন্ধু হিসাবে কার হাত ধরবে, কার হাত ধরবে না— সেটিও একই সঙ্গে বুঝতে হবে তাকে। এসব স্পর্শকাতর দিকগুলো দেখানো হয়েছে।
সমাজে প্রচলিত— লজ্জা নারীর ভূষণ, পুরুষের লজ্জা পেতে নেই? এ প্রসঙ্গে প্রিয়াংকা বলেন, এই প্রচলিত ধারণাই বুঝিয়ে দিচ্ছে— সমস্যা কত গভীরে ছড়িয়ে গেছে। লজ্জা পুরুষেরও। কষ্ট হলে পুরুষেরও কান্না পায়, সেটিই স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, যদিও সমাজ আমাদের শিখিয়েছে, চোখের জল, যন্ত্রণা, লজ্জা— সবটাই শুধু নারীর। একেবারেই তা নয়। আমরা প্রথম সিরিজ দেখানোর পর যা যা ফিডব্যাক পেয়েছি, অনেকের জীবনের যা যা ঘটনা জানতে পেরেছি— সেসব নিয়ে দ্বিতীয় পর্ব তৈরি হয়েছে। দর্শক দেখে বলবেন, আসলে লজ্জা কার। সম্পর্ক ততক্ষণই সুস্থ, যতক্ষণ সেখানে আত্মসম্মান বজায় থাকবে— এটিও দেখানো হবে। আমরা ভাবি, স্বার্থত্যাগ বুঝি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চাবিকাঠি এবং সেটা শুধুই মেয়েদের করতে হবে। একেবারেই না। নারী-পুরুষ উভয়কেই সম্পর্কের খাতিরে স্বার্থত্যাগ করতে হবে। পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকলে তবেই না একটা সম্পর্ক আজীবন থেকে যায়।
‘জয়া’ হতে গিয়ে নাকি প্রিয়াংকা খুব কষ্ট পেয়েছেন। ওর জীবন উঠে এসেছে। এমন প্রশ্নের উত্তরে একটু থেমে, বড় করে শ্বাস নিয়ে অভিনেত্রী বললেন, আমার অভিনীত প্রতিটি চরিত্রেই আমার জীবনের ছায়া পড়ে। অবশ্যই আমি কখনো ঘরে, কখনো পেশাজীবনে খারাপের মধ্য দিয়ে গেছি। পেশাজীবনে যতটা পাওয়ার কথা ছিল, ততটা পাইনি। মুখচোরা বলেই হয়তো।
তিনি বলেন, হ্যাঁ, জয়া হয়ে উঠতে গিয়ে তাই খুব কষ্ট হয়েছে। একটা সময় জয়ার চরিত্রের সঙ্গে আমার একাত্মতাও তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে, পর্দার মেয়ের সঙ্গে যখন মায়ের দৃশ্যগুলো করেছি। একই ভাবে যখন পর্দায় আমার আর আমার মায়ের দৃশ্যগুলো। একজন মুখচোরা মেয়েকে নিজের বেতরটা খুলে দেখাতে হচ্ছে! খুব যন্ত্রণার। কষ্টও পেয়েছি, সেই কষ্ট সহ্য করতে করতে দৃশ্যগুলোকে জীবন্ত করার চ্যালেঞ্জও নিয়েছি।
হেসে প্রিয়াংকা বলেন, ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখি। আমি খুব ঈশ্বরভক্ত। আসলে কী জানেন— জীবন কখনো মসৃণ, পেলব নয়। অনেক ওঠাপড়া সেখানে। এটা মেনে নিতে হবে। সেটি না থাকলেই বরং জীবন পানসে। কাজের জায়গা বলুন কিংবা সম্পর্ক— এই ওঠাপড়া না থাকলে একটা সময়ের পর আপনিও একঘেয়েমিতে ভুগবেন। এই ওঠাপড়া থেকে ভালো দিকটা আপনি নেবেন, না কি মন্দ দিকের ধাক্কায় অবসাদে ডুবে যাবেন, সেটি আপনার ওপর নির্ভর করছে। আমি অন্তত এই ওঠাপড়া থেকে ভালোটাই নেওয়ার চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, খুব দুঃখের সময় আশায় বুক বেঁধেছি। এর পর ভালো কিছু হবে, হয়েওছে। খারাপ সময় থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেছি— কীভাবে ওই সময় অতিক্রম করতে হয়। কোনো মানুষের জীবনে শুধু খারাপ বা শুধু ভালো হয় না। লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। যখন খারাপ সময় আসে, মনে মনে বলি— এই সময়টাও কেটে যাবে। এই বিশ্বাস আঁকড়েই পথ চলছি। আমার অনুরাগীদেরও সেই বার্তাই দেব— ধৈর্য ধরতে হবে।
সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায় লিখলেন, অদিতি রায় বানালেন, আর প্রিয়াংকা সরকার অভিনয় করলেন— সিরিজ হিট। প্রিয়াংকা বলেন, কাহিনিকার সম্রাজ্ঞী, পরিচালক অদিতিদি ভীষণ স্পর্শকাতর। ওরা খুব খুঁটিয়ে বিষয়টি দেখেছেন। অভিনেত্রী বলেন, ভেবে দেখুন— একজন পুরুষকে গালাগাল দেওয়ার জন্য কিন্তু বেশি শব্দ তৈরি হয়নি। মেয়েদের জন্য বাছা বাছা গালাগালি রয়েছে। এই দিকটা সম্রাজ্ঞী গবেষণা করে জেনেছেন। তারপরও বলব, কিছু পুরুষ না থাকলে দর্শক দেখতে পেতেন না। যেমন— প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা ও মহেন্দ্র সোনি। ওরা মেয়েদের যন্ত্রণা অনুভব করেছেন। আর ছিলেন পুরুষ অভিনেতা ও চিত্রগ্রাহক। প্রচার ভিডিও তৈরি করেছেন যারা, তাদের মধ্যেও পুরুষ রয়েছেন। তিন নারীর পাশে পুরুষরাও ছিলেন, তাই সিরিজ সফল।
মেয়েরা শুধুই মেয়েদের শত্রু নন। এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, মেয়েরা পাশে থাকতে পারেন। সাপোর্ট সিস্টেম হয়ে উঠতে পারেন। আবার মেয়েরাই মেয়েদের বড় সমালোচক। সেই জায়গা থেকে বলব— মেয়েরা যদি মেয়েদের যন্ত্রণার কথা মন দিয়ে শোনেন, তাতেও অনেক সমস্যা লঘু হয়ে যায়।
বাস্তবে মুখচোরা প্রিয়াংকা কতটা কথা বলতে শিখেছেন। প্রিয়াংকা বলেন, অনেকটা শিখেছি। প্রত্যেকটা চরিত্র থেকেই কিছু না কিছু শিখি। জয়া দেখিয়েছে, মুখ খুলতে না পারলে একজন মেয়েকে কতটা যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। যারা আমাকে জানেন, তারা বোঝেন— খুব মিশুকে নই আমি। এক দেখাতেই প্রচুর কথা বলতে পারি না। জয়া হয়ে উঠতে গিয়ে এর প্রয়োজনীয়তা বুঝেছি। শুধুই জয়া নয়, দর্শকের নানা মন্তব্য ও অনুপ্রেরণাও আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। তাদের জীবনের নানা ঘটনা পড়ে বুঝতে পেরেছি, কথা বলা খুব দরকার এবং একই সঙ্গে কথা শোনাটাও জরুরি।
কর্মক্ষেত্র মানুষের দ্বিতীয় বাড়ি। সেখানেও কথার তীরে হৃদয় রক্তাক্ত। সেই পর্ব কি সিজন তিনে?—এমন প্রশ্নের উত্তরে অভিনেত্রী বলেন, ওরে বাবা। আগে দ্বিতীয় সিজন মুক্তি পাক। অবশ্য ঠিকই বলেছেন, কথার তীর-ই বটে, যা একবার বেরিয়ে গেলে ফেরানো যায় না। এবারের সিহন দেখে দর্শক কী প্রতিক্রিয়া দেন সেটির ওপরেই নির্ভর করছে সিজন থ্রি।
যে অভিনেত্রীর অনুরাগীর সংখ্যা লক্ষাধিক, তার ঝুলিতে হিট সিনেমা বলতে— ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’, প্রিয়াংকার খামতি কোথায়? একটু চুপ থেকে প্রিয়াংকা বলেন, হ্যাঁ, আমিও জানি সেটি। কিন্তু সবটা তো আমার হাতে নেই। আমি বরাবর দর্শককে ভিন্ন স্বাদের চরিত্র উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেছি। অভিনয়ের সময়েও নিজেকে নিংড়ে দিয়েছি। তারপরও সিনেমা দর্শকদের মন ছুঁতে পারে না। আমার চেষ্টার কমতি ছিল না। হয়তো কোনো চিত্রনাট্য বা সিনেমা সঠিক বাছাই করিনি, সেটিও হতে পারে। ঠিক জানি না।
এই খামতিই কি প্রিয়াংকার জীবনের ‘লজ্জা’? অভিনেত্রী বলেন, আমার কোনো লজ্জা নেই। কোনো আক্ষেপও নেই। ব্যক্তিজীবন বলুন বা পেশাজীবন— প্রত্যেক ভূমিকায় আমি আমার মতো করে সফল। মেয়ে হিসাবে, স্ত্রী হিসাবে, মা হিসাবে এবং অভিনেত্রী হিসাবে— ফাঁকি দিইনি। তাই যা পেয়েছি, যেভাবে আছি তাতেই খুশি। আমার হয়তো এটুকুই পাওনা। বাকিটা ঈশ্বরের হাতে ছেড়ে দিয়েছি।