
প্রিন্ট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১০ পিএম
সুচিত্রা সেনকে নিয়ে বিরল স্মৃতিচারণ চিরঞ্জিতের

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৫ পিএম

ছবি:সংগৃহীত
আরও পড়ুন
বাঙালির বনলতা সেন বলা হয় মহানায়িকা সুচিত্রা সেনকে। গতকাল (৬ এপ্রিল) ছিল এ অভিনেত্রীর জন্মদিন। একজন ভারতীয় অভিনেত্রী হলেও তার শেকড় ছিল বাংলাদেশে। জন্মসূত্রে তিনি বাংলাদেশি। তার আসল নাম রমা দাশগুপ্ত। অভিনেত্রী মূলত বাংলা ও হিন্দি সিনেমায় অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রে মহানায়ক উত্তম কুমারের বিপরীতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। সেই জন্মদিন উপলক্ষ্যে স্মৃতিচারণ করেন টালিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী।
অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনকে চাক্ষুস দেখা এ অভিনেতা বললেন তার স্মরণীয় মুহূর্তের কথা। পর্দা থেকে বিদায় নিয়েও যে অভিনেত্রী রয়ে গেছেন সিনেমাপ্রেমীদের মাঝে। এমন একজনকে দেখার শখ তো অনেকেরই ছিল; কিন্তু সবাই তার দর্শন পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। তবে টালিউড অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী তাকে স্বচক্ষে দেখেছিলেন।
সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে স্বপ্নের নায়িকা সুচিত্রা সেনকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন চিরঞ্জিত। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী রত্নাবলীর মামা ছিলেন বিখ্যাত ব্যারিস্টার। আমি আর আমার স্ত্রী প্রায়ই মামার কাছে দেখা করতে যেতাম। মামার চেম্বারে সোজা ঢুকে গিয়ে বসতাম আমরা। অভিনেতা বলেন, নব্বই দশকের মাঝামাঝি, একদিন তাপস মামার চেম্বারেই ঢুকতে গিয়ে বাঁধা পেলাম। আমাদের মামা বললেন— একটু পরে আমার চেম্বারে এসো, এখন দোতলায় মামির কাছে গিয়ে বসো।
চিরঞ্জিত বলেন, 'আমরা খেয়াল করলাম, আমাদের দেখেই একজন ভদ্রমহিলা মাথার ঘোমটাটা টেনে নিলেন। তিনি আর কেউ নয় সুচিত্রা সেন। বাইরে বেরোলে মিসেস সেন মাথায় ঘোমটা দিয়ে সানগ্লাস পরে বের হতেন। যেহেতু মামার ঘরে বসেছিলেন, তাই সানগ্লাস ছাড়াই ঘোমটা খুলে বসেছিলেন। আমাদের আসার আভাস পেয়েই ঘোমটা টেনে নিলেন। কিছু সময়ের মধ্যেই উনি উঠে বেরিয়ে গেলেন। পরে যখন আমি আর আমার স্ত্রী মামার চেম্বারে গেলাম, মামা বললেন— সুচিত্রা প্রায়ই আমার এখানে আসে।
এদিকে সুচিত্রা তনয়া মুনমুন সেনের অন্যতম নায়ক ছিলেন চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। মুনমুন আর চিরঞ্জিতের ওপর দৃশ্যায়ন হয়েছিল কিশোর কুমারের সেই অমর গান— আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো। মুনমুন সেনের নায়ক হয়েও কি চিরঞ্জিত সুচিত্রার দেখা পাননি? চিরঞ্জিত বলেন, না! আর দেখার সুযোগ হয়নি মিসেস সেনকে।
উল্লেখ্য, ১৯৬৩ সালে 'সাত পাকে বাঁধা' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করে। ২০০৫ সালে তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল; কিন্তু সুচিত্রা সেন জনসমক্ষে আসতে চাননি বলে এ পুরস্কার গ্রহণ করেননি। ২০১২ সালে তাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা বঙ্গবিভূষণ প্রদান করা হয়।
ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্তর্গত সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার অন্তর্গত সেন ভাঙাবাড়ি) গ্রাম সুচিত্রা সেনের পৈতৃক নিবাস। পাবনা জেলার সদর পাবনায় সুচিত্রা সেন জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন পাবনা পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও মা ইন্দিরা দেবী ছিলেন গৃহবধূ। তিনি ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান ও তৃতীয় কন্যা। পাবনা শহরেই তিনি পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন কবি রজনীকান্ত সেনের নাতনি।
১৯৪৭ সালে বিশিষ্ট শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের বিয়ে হয়। তাদের একমাত্র কন্যা মুনমুন সেনও একজন খ্যাতনামা অভিনেত্রী।
১৯৫২ সালে সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত হন। 'শেষ কোথায়' সিনেমার মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয় কিন্তু সিনেমাটি মুক্তি পায়নি। স্বামী মারা যাওয়ার পরও তিনি অভিনয় চালিয়ে গেছেন, যেমন হিন্দি ছবি আন্ধি। এই চলচ্চিত্রে তিনি একজন নেত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। বলা হয়, যে চরিত্রটির প্রেরণা এসেছে ইন্দিরা গান্ধী থেকে। এই সিনেমার জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং তার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করা সঞ্জীব কুমার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতেছিলেন।