
প্রিন্ট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২২ এএম
অমিতাভকে পালিয়ে বিয়ের প্রস্তাব কঙ্কনার!

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম
-67e10278ba820.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাস টালিউড অভিনেত্রী তথা চিত্রপরিচালক কঙ্কনা চক্রবর্তীর। বাংলাটা অবাঙালিদের মতো। বরং ইংরেজি উচ্চারণে খাঁটি সাহেবিয়ানা। ৫ ফুট সাড়ে ৯ ইঞ্চি লম্বা, ঘাড় ছাঁটা চুল, ছিপছিপে মেয়েটির ভাত, মাছ ও মিষ্টিতে প্রবল আপত্তি। কিন্তু মা বিরিয়ানি রেঁধে দিলে সাপটে খান। এখনো সুযোগ পেলে চুরমুরে ডুব দেন। লেকটাউনের মেয়ে। পড়াশোনা কলকাতার একাধিক প্রথম সারির ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল-কলেজে। সেই সময় বিষয় ছিল সাংবাদিকতা।
কিন্তু বিষয় হিসাবে কেন বেছে নিলেন সাংবাদিকতা? অমিতাভ বচ্চনের সাক্ষাৎকার নেবেন বলে? পরে অবশ্য নিউইয়র্ক ফিল্ম অ্যাকাডেমি থেকে অভিনয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন।
তার মেয়ের নামে নাম হলেও দূর-দূরান্তে অপর্ণা সেনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই কঙ্কনার। উল্টো ‘পরমা’ পরিচালকের ‘দ্য রেপিস্ট’ সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ তার কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে। তাই নিয়ে তার খুব আফসোস।
এই কঙ্কনা এখন অভিনয়ের পাশাপাশি ছোট ছোট সিনেমাও তৈরি করছেন। যেমন— সদ্য বানিয়ে উঠলেন ‘রি রাউটিং’। সেই সিনেমার ট্রেলার প্রথম প্রকাশ করেছেন অমিতাভ বচ্চন। তার স্বপ্নের পুরুষ। সিনেমার গল্প ও চিত্রনাট্য কঙ্কনার। তার সঙ্গে সিনেমাতে অভিনয় করেছেন বরুণ চন্দ, প্রদীপ ভট্টাচার্য।
দুই মানুষের একটি নিশিযাপনের গল্প। যারা পরস্পরের সমস্যার সমাধানে ব্যস্ত। কঙ্কনার এ সিনেমাটি আসলে ‘সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার’। তাই এর থেকে বেশি বলা নিষেধ। এই যার জীবনীপঞ্জি তিনি রবিবারের পড়ন্ত বিকালে ফোনে চুটিয়ে আড্ডা দিলেন একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে।
ডাবিং চলছিল পরিচালক-অভিনেতার। তাই ফোন বাজার সঙ্গে সঙ্গে ধরতে পারেননি। তার জন্য বার চারেক দুঃখপ্রকাশ করতেই প্রথম প্রশ্ন— কঙ্কনা কি মেমসাহেব? চলনে, বলনে ও চেহারায় তো বটেই। ভাবনা ও আচরণেও কি তথাকথিত বাঙালিয়ানা বিবর্জিত? নইলে ফোন না ধরতে পারার জন্য এত দুঃখপ্রকাশ কেন? নিটোল গলায় মিষ্টি হেসে জবাব দিলেন পরিচালক— হলিউডে কাজ করি। ওখানে প্রত্যেকে ভীষণ সময়ানুবর্তী। ফলে যে কোনো কাজ ১০ মিনিট আগে করার চেষ্টা করি; ১০ মিনিট পরে নয়। ওই জন্যই...।
তিনি আরও বললেন, তাই বলে কলকাতার উপরে টান নেই, এমন বদনাম নিন্দুকেও দেবে না। জানেন দক্ষিণ কলকাতার সাদার্ন অ্যাভিনিউ আমার খুব প্রিয়। ওখানে এখনো রাস্তার দুই পাশে গাছ। এই বসন্তে পথের দুই পাশে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, শিমূল ফুল ঝরে। সঙ্গে মিষ্টি হাওয়া... শহরটার প্রেমে পড়ার জন্য যথেষ্ট, হাসতে হাসতে এসব বললেন কঙ্কনা চক্রবর্তী। ব্যক্তিজীবনে তিনি বার তিনেক প্রেম ইতোমধ্যে করে ফেলেছেন। আরও প্রেমে পড়ার স্বপ্ন দেখেন।
অমিতাভ আপনার সিনেমার ট্রেলার শেয়ার করে নিচ্ছেন। বলতেই পাল্টা উচ্ছ্বাস ভেসে এলো—আমার সব কাজ স্যারকে পাঠাই। ওর যেটা ভালো লাগে সেটি নিজে থেকেই শেয়ার করে নেন। বলতে হয় না!
কঙ্কনার অমিতাভ-প্রীতি দশম শ্রেণি থেকে। তখন তিনি ষোড়শী। ঠাকুমা ‘দো আনজানে’ দেখছিলেন। হঠাৎ তার চোখ পড়ে ৬ ফুট ৪ ইঞ্চির পুরুষালি অভিনেতার দিকে। সেই শুরু। একটানা তিন বার ‘দো আনজানে’ দেখার পর তিনি পাকাপাকি প্রেমে পড়েছিলেন। পাগল ‘বিগ বি’র জন্য। প্রতি মাসে একটি করে চিঠি। পরের মাসে তার প্রত্যুত্তর আসত! রীতিমতো প্রশ্রয় দিতেন আমায়। স্যার প্রশ্রয় না দিলে সংবাদিকতা নিয়ে না পড়ে অর্থনীতির ছাত্রী হতাম। জানতেই পারতাম না আমিও পরিচালনা ও অভিনয় পারি। ভক্তদের পাগলামিতে অমিতাভ বচ্চন ভীষণ প্রশ্রয় দেন। এটাই হওয়া উচিত, বক্তব্য অমিতাভের বাঙালি অনুরাগিণীর।
এ কারণেই নাকি প্রতি রবিবার বলিউড ‘শাহেনশাহ’ দর্শন দেন অনুরাগীদের। যদিও তিনি বলেন, তার ঈশ্বর দর্শন হচ্ছে।
ধীরে সেই পাগলামি বয়সের সঙ্গে স্তিমিত। কঙ্কনার কাছে অমিতাভ তার পথপ্রদর্শক। এমন অনেক কথা আছে, যা তিনি বাড়িতে বলতে পারেন না অবলীলায় বর্ষীয়ান অভিনেতাকে বলেন। তার প্রথম তথ্যচিত্রতে অমিতাভ সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন।
যিনি সারাক্ষণ অমিতাভময় পর্দায় তিনি কেন তার সহ-অভিনেতা নন? কিংবা পরিচালক?
এমন প্রশ্ন শুনে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কঙ্কনা বললেন, এই ইচ্ছাটাই পূরণ হওয়া বাকি। ওর সঙ্গে অভিনয়, ওকে পরিচালনা। পরক্ষণেই উচ্ছ্বসিত হয়ে তিনি বলেন, তবে বাংলায় অমিতাভ স্যারের কিছু গুণ খুঁজে পেয়েছি সব্যসাচী চক্রবর্তীর মধ্যে। ওকে নিয়ে দুটি সিনেমা করেছি। আর বরুণ স্যারের মধ্যে। ফের থেমে নিজেকে গুছিয়ে বলেন, অমিতাভ স্যারকে যতটা ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি; ততটাই বরুণ স্যারকেও। ‘রি রাউটিং’ করতে গিয়ে খুব কাছ থেকে ওকে দেখলাম। আচরণে-ব্যবহারে দুজনের মধ্যে অনেক মিল। আফসোস, বিনোদন দুনিয়া সেভাবে ওকে আবিষ্কারও করতে পারল না। ব্যবহারও করতে পারল না। পরিচালনার পাশাপাশি হলিউড ছাড়াও বাংলা, বলিউড, অহমিয়া সিনেমাতে কাজ করেছেন কঙ্কনা। তার শেষ হিন্দি কাজ ‘এভরিবডি লাভস শোরাব হন্ডা’। পরিচালনায় রজত কাপুর। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘প্রেম ট্রেম’ ছাড়াও ‘শব্দ জব্দ’, ‘রহস্য রোমাঞ্চ’ সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। খুব ইচ্ছা— গৌতম ঘোষ, অপর্ণা সেন, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, প্রতীম ডি গুপ্তের পরিচালনায় কাজ করবেন। যদিও আমি মোটেই নায়িকাসুলভ দেখতে নই। ওই ছক একমাত্র ভেঙেছিলেন স্মিতা পাটিল। এখনো ইন্ডাস্ট্রি নায়িকার মধ্যে তথাকথিত সৌন্দর্য খোঁজে। আমার তাই ভালো অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছা। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, টোটা রায়চৌধুরীর সঙ্গে পর্দা শেয়ার করতে পারলে খুব ভালো লাগবে। সাফ জানালেন বাংলায় এদের বাইরে আর কোনো অভিনেতা তার মনে দাগ কাটতে পারেনি!
পেশাজীবনে অভিনয় তার প্রেম। পরিচালনা নেশা। কখনো অমিতাভের সঙ্গে রেখার প্রেমের কথা শুনে ‘ব্যক্তি’ কঙ্কনার হিংসা হয়েছে? তিনি বলেন, একেবারেই না। জবাব দিলেন একটুও না ভেবে। তারপরই গোপন কথা ফাঁস—তখন আমি একটু বড়। অমিতাভ আমার চোখে সেরা পুরুষ। বাবাকে ওর মতো করে দাড়ি রাখতে বাধ্য করেছি। তখন একবার টুইট করেছিলাম, ঘর বাঁধব। চলুন পালাই! অমিতাভ কি খুব রেগে গিয়েছিলেন? একেবারেই না। বরং কঙ্কনাকে পাল্টা লিখেছিলেন, তোমার সব ইচ্ছা পূরণ হোক। কেবল টুইটে লেখা ইচ্ছা ছাড়া। ওটা আর সম্ভব নয়। সেদিন কঙ্কনার জন্মদিন ছিল।
যাকে প্রতিমুহূর্তে ভেবে অনুপ্রাণিত পরিচালক-অভিনেত্রী, সেই অভিনেতা নাকি অবসর নিতে চলেছেন? কঙ্গনা বলেন, না। এই প্রশ্ন কঙ্কনা অমিতাভকে করার প্রয়োজন বোধ করেননি। তার দাবি, স্যার কাজ ছাড়া থাকতে পারেন না। অভিনয় ছেড়ে দিলে তার সময় কাটবে কী করে? এ-ও জানিয়েছেন অভিনয়ের পাশাপাশি ‘পা’ লেখালেখি করেন, গানে সুর দেন। অভিনয় ছেড়ে দিলেও তিনি কোনো দিন চুপচাপ বসে থাকবেন না।
অমিতাভের এই মন্ত্রে দীক্ষিত কঙ্কনা নিজেও। তাই আপাতত ব্যস্ত তার সিনেমা মুক্তি নিয়ে। সম্ভবত সিনেমাটি আগামী মাসে নন্দনে মুক্তি পেতে পারে। ইতোমধ্যে তার ঝুলিতে আছে ‘উইমেন প্রেড অ্যান্ড প্রাইড আপ অন’, ‘রিটেন বাই’, ‘মিরর ইমেজ’-এর মতো ছবি। এবার একটা বড় ছবি পরিচালনা করতে হবে। বাংলাতেই করব হয়তো। অমিতাভ থাকবেন? শুনেই দমকা হাসি। জানালেন ক্রমশ প্রকাশ্য। তার পরেই আবদার জুড়লেন—এখনো নিজে শাড়ি পরতে পারি না! কিন্তু পরতে খুব ভালোবাসি। ছবিমুক্তির দিন ইচ্ছা শাড়ি পরার। এর মধ্যে শিখে উঠতে পারব? কোনো টিপস থাকলে দিন না।
উল্লেখ্য, চিত্রপরিচালক কঙ্কনা চক্রবর্তীর একাধিক স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিনেমা ইতিপূর্বে দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র উৎসবে সমাদৃত হয়েছে। তার এবারের সিনেমা ‘রি রাউটিং’ একটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। ২০২০ সালে অভিনেত্রী এ সিনেমার গল্পটি লেখেন। সেই সময় কলকাতাকে ছবির প্রেক্ষাপট হিসাবে চিত্রনাট্য লেখা হয়। কিন্তু পরে সিনেমার গল্পকে তিনি অসমের প্রেক্ষাপটে সাজান।
দুই চূড়ান্ত আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তি অবিনাশ ও কুহুকে নিয়ে এ সিনেমার কাহিনি আবর্তিত। এক রাতের একটি ঘটনার জেরে এই দুই ব্যক্তির সাক্ষাৎ কোন দিকে মোড় নেয়, তাই দেখা যাবে ‘রি রাউটিং’ সিনেমায়।