
বাংলা বিনোদন দুনিয়ার প্রায় সব খ্যাতনামা শুক্রবার শুটিংয়ের ব্যস্ততা ভুলে রঙের নেশায় মাতেন। দেব থেকে অঙ্কুশ হাজরা, যশ দাশগুপ্ত, নুসরত জাহান, মধুমিতা সরকার, ঊষসী চক্রবর্তী— সবাই রঙিন আজকের দিন। কেউ গানের তালে মাথা ঢেকে উদ্দাম নেচেছেন, কেউ সঙ্গিনীকে সঙ্গে নিয়ে ফাগ আবিরে রাঙা! আবার কেউ তো সাজসজ্জায় ‘মৃচ্ছকটিক’ নাটকের ‘বসন্তসেনা’। বাড়তি আকর্ষণ– ডায়েট ভুলে দেদার খানাপিনার আয়োজন।
কেমন হলো বাংলা বিনোদন দুনিয়ার খ্যাতনামাদের দোল উদযাপন?এমন প্রশ্নে অঙ্কুশ কখনো উদযাপনের সুযোগ ছাড়েন না বলে জানান। নিজের বাড়িতে হোক কিংবা স্টুডিওতে— অভিনেতা সব সময় রসেবশে। দোলে তিনি যে ঐন্দ্রিলা সেনকে নিয়ে মনের আনন্দে রঙ খেলায় মাতবেন, অনুরাগীরা জানতেন। সেসব মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন যুগল। পরনে সাদা টি-শার্ট আর শর্টস, মাথা ঢেকেছেন পরচুলায়। পোশাক, শরীর রঙে মাখামাখি। নেপথ্যে অমিতাভ বচ্চনের ‘সিলসিলা’ সিনেমার বিখ্যাত গান ‘রঙ বরষে’ বাজছে। তাল মিলিয়ে উদ্দাম নৃত্য অভিনেতার! নাচতে নাচতেই তিনি রঙ মাখিয়েছেন ঐন্দ্রিলাকে ও বন্ধুদের। প্রেমিকার সঙ্গে আদুরে ছবি তুলতেও ভোলেননি!
মিমি চক্রবর্তী আধ্যাত্মিক। সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত এ নায়িকার বাড়িতে উৎসব মানে ঈশ্বরের আরাধনা। এদিনও সেই পর্ব বাদ যায়নি। মিমি নিজে হাতে গোপালের পূজা করেছেন। সঙ্গী দুই সারমেয় ‘সন্তান’, মা-বাবা। বড়দের পায়ে আবির আর দুই সন্তানের কপালে ছোট্ট করে ফাগের টিপ। নিজেও বেশ খানিকটা লাল রঙে রঙিন। মিমির দোল জমে গেছে এভাবেই।
প্রযোজক-অভিনেতা-সংসদ সদস্য দেব। এদিন তিনি আক্ষরিক অর্থেই ‘খোকাবাবু’। দিনটি শুরু করেছেন মায়ের হাতে আবির মেখে। ঝাঁকড়া চুল, দাড়ি-গোঁফে ঢাকা ‘রঘু ডাকাত’ মায়ের সামনে যেন শিশু! ব্যস্ত ছেলেকে হাতের কাছে পেয়ে মা-ও মনের সুখে তাকে আবির মাখিয়েছেন। দেবের বাবা গুরুপদ অধিকারীও ছিলেন সেই দলে। পরে দেবের রঙে রঙ মেশাল রুক্মিণী মৈত্রও।
দেব যখন মায়ের ‘খোকাবাবু’, তখন তার ‘কিশোরী’ ইধিকা পাল কী করছেন? তিনিও মাটির থালায় রকমারি রঙ সাজিয়ে হাজির। পরনের সাদা শাড়িতে ফুলেল নকশা। চুলে বাসন্তী গাদা ফুল। এদিন তিনি ‘কিশোরী’র মতোই প্রাণোচ্ছ্বল! কিন্তু তার গালে রঙ দিল কে? রহস্য সেটাই।
এদিকে যশ দাশগুপ্ত, নুসরাত জাহানকে দেখুন! জুটিতে সাদা পোশাকে রঙমিলন্তি। তার পরেই ডুব দিয়েছেন লাল, নীল, সবুজ রঙের আবির-ফাগে। দুই ছেলেই বেশ ছোট। দুজনে তাই দুজনের রঙ খেলার দোসর। বিধায়ক-অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী সব দর্শক-অনুরাগীকে দোলের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
মধুমিতা সরকার এমনিতেই রঙিন। সব রকম উৎসব নিজের মতো করে উদ্যাপন করেন। দোলে সাজপোশাকে, ভঙ্গিতে যেন রাই কিশোরী! সাদা শার্ট পেটের কাছে ‘নট’ করা। সঙ্গে ডেনিম শর্টস। খোলা চুল বসন্তের হাওয়ায় এলোমেলো। মুখে, পোশাকে, চুলে রঙবাঙার। ঋতুরাজ যেন নিজের হাতে যত্ন করে রঙিন করেছে তাকে! এমন মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি না করে থাকা যায়! কিন্তু ছবিগুলো তুললেন কে? নায়িকার ছবি যে বারে বারে এই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।
এক মাত্র সন্তান ধীর আগের তুলনায় বড়। ছেলেকে নিয়েই তাই রঙের উৎসবে মাতোয়ারা চক্রবর্তী পরিবার। গৌরব চক্রবর্তী এবং ঋদ্ধিমা ঘোষের পোশাক এ দিন সাদা। থালায় সাজানো নানা রঙের ফাগ। তাতে ছোট্ট ছোট্ট আঙুল ডুবিয়ে ঠাম্মা মিঠু চক্রবর্তীর গাল রঙিন করেছে একরত্তি। নাতির দেওয়া রঙে রঙিন হতে হতে খুশির হাসি সব্যসাচী চক্রবর্তীর ঘরনির চোখেমুখে।
শ্রীলেখা মিত্র ব্যতিক্রমী। রঙ খেলতে তিনি ভালোবাসেন— সে কথাও জানিয়েছেন। আবার রঙ খেলার দোসর নেই তার— এ কথা জানাতেও ভোলেননি তিনি। তা হলে কি তিনি মনোকষ্টে ভুগছেন? না, তিনি বেশ ভালই আছেন পোষ্যদের নিয়ে। তারাও যাতে ভাল থাকে তার জন্য সাধারণকে সতর্ক করতেও ভোলেননি। মনে করিয়ে দিয়েছেন, 'ওরা অবলা। ওরা তাই বলতে পারে না, রঙ ওদের জন্য ক্ষতিকারক। দোল ওদের জন্য নয়। আপনারাই বরং বিষয়টি মনে রেখে রঙ থেকে ওদের দূরে রাখুন। ওদের রঙ মাখিয়ে কষ্ট দিয়ে নিজে আনন্দ পাবেন না।
শেষ হইয়াও হইল না শেষ— ঊষসী চক্রবর্তী। তিনি এ দিন সাজসজ্জায় যেন ‘মৃচ্ছকটিকম’ নাটকের ‘বসন্তসেনা’। এ দিন তিনি আপাদমস্তক সাদা পোশাকে সেজেছেন। কাঁচুলির মতো ব্লাউজ, শিফনের শাড়িতে তার বাঁধভাঙা সৌন্দর্য। কোমরে সাদা পাথরের সরু চেন। সঙ্গে হাজার ওয়াটের হাসি। অভিনেত্রীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ এক অনুরাগী মন্তব্য বিভাগে অভিনেত্রী লিখেছেন— এ যে কলকাতার মালাইকা! সে খবর আনন্দবাজার ডট কমকে জানিয়েছেন তিনিই।
যোগাযোগ করতেই ফোনের ওপার থেকে হাসি ছড়িয়ে দিলেন ঊষসী। বললেন, উদযাপনকে সামনে রেখে নিজেকে ভালোবাসার পাঠ পড়িয়েছি। দেখুন, নিজেকেই কীভাবে নানা রঙে রঙিন করেছি। তার মতে, নিখুঁত কেউ নন। কিন্তু খুঁতগুলো আঁকড়ে ধরে খুঁতখুঁতে না হয়ে নিজেকে খুঁতসহ ভালোবাসুন। তা হলেই আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দরী।