নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের প্রতিবাদে সরব তারকারা

রিয়েল তন্ময়
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১০:০৩ পিএম

গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে নারীর প্রতি সংহিসতা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। তবে মাগুরার ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দেশের মানুষ হতবাক। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছে। নিরব নেই শোবিজ অঙ্গনও। ধর্ষকের বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ জানিয়েছেন শোবিজের তারকারা।
দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান অভিনয়ের পাশাপাশি নারীদের নিয়ে ব্যক্তি ও অর্গানাইজেশনের উদ্যোগে বিভিন্ন ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়ে থাকেন। নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে প্রায়ই কথা বলেন এ অভিনেত্রী।
তারই অংশ হিসাবে ‘নো মোর’ নামে একটি ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়ে জয়া বলেছেন, ‘নির্যাতন নয়, নারীর জন্য প্রয়োজন ভালোবাসা ও সম্মান। হতে পারে এই অত্যাচার যৌন নিপীড়ন। হতেই পারে মারধর, গৃহ নির্যাতন। অনন্তকাল ধরে এসব নীরবে সহ্য করে আসছেন নানা বয়সের মেয়েরা। এবার বলার সময় এসেছে, ‘আর না’।’
সংগীতের যুবরাজখ্যাত শিল্পী আসিফ আকবর। যেকোনো অন্যায়-অবিচারে তিনি সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় তুলেন। মাগুরার শিশু ধর্ষনের ঘটনায়ও চুপ থাকেননি এ শিল্পী। সামাজিক মাধ্যমে আওয়াজ তুলেছেন।
শিশুটিকে নিজের মেয়ের সঙ্গে তুলনা করে আসিফ বলেন, ‘সেই ছোট আছিয়া আমার মেয়ের (আইদাহ্) মতো। আমি এমন ঘটনায় বাকরুদ্ধ। কিছু বলার মতো নেই। লিখতেও পারছি না কিছু। চেষ্টা করছিলাম বিষয়টি নিয়ে কিছু লিখব, কিন্তু অসাড় আমি।’
ঢাকাই সিনেমার নায়ক শাকিব খানকেও নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে। ৮ বছরের শিশু আছিয়া ধর্ষিত হওয়ার খবরে শুরুতে চুপ থাকলেও শেষে ফেসবুকে স্টেটাস দিয়ে আওয়াজ তুলেছেন এ নায়ক। তিনি ধর্ষকের বিচার দাবি করেছেন। দেরীতে হলেও নিরবতা ভেঙে শাকিবের এ প্রতিবাদে অনুরাগীরা বেশ খুশি হয়েছেন।
ঢাকাই সিনেমার ব্যস্ততম নায়িকা শবনম ইয়াসমিন বুবলী। তিনিও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। নারীদের প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়ে বুবলী বলেন, ‘একজন নারী আপনার মা, মেয়ে, স্ত্রী বা বোন। নারীদের অসম্মান করার আগে একবার ভাবুন। ধর্ষনের মতো ঘৃণিত একটি কাজ করার আগে নিজের ঘরের দিকেও একবার তাকান। আমি বিশ্বাস করি আপনার মনে বাস করা পশুটি শান্ত হবে। এরকম ঘটনার খবর আমরা আর শুনতে চাই না।’
এ ঘটনায় মর্মাহত চিত্রনায়ক রুবেল। তিনি মনে করছেন ধর্ষণ থেকে রক্ষা পেতে নারীর কারাতে শিক্ষা জরুরী। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি নারীদের জন্য মার্শাল আর্ট অপরিহার্য। এমনকি প্রতিটি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় তরুণীদের শেখা উচিত। আমরা যদি নারীদের কারাতের শিক্ষাটা দিতে পারি তাহলে ধর্ষণ থেকে ৭০ ভাগ পরিত্রাণ পাব।’
নাটক ও সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা আব্দুন নূর সজল কাজের ব্যস্ততার মাঝেও এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা নিয়ে কথা বলতে একটুও কার্পণ্য করেননি। ধর্ষনের মতো অপরাধে একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার বলে মনে করছেন তিনি। সজল বলেন, ‘আমার মতে ধর্ষণের ঘটনায় এমন আইন বা শাস্তি হওয়া উচিত যা আমাদের সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এবং খুব দ্রুত সেটা করা উচিত।’
ধর্ষকের মৃত্যু চেয়েছেন মডেল ও অভিনেত্রী রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা।
তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার ৮ বছর বয়সী কন্যা শিশু! কিন্তু এটি নতুন কোন ঘটনা নয়। এই অভাগা দেশে প্রতি বছর গড়ে ছ’শো থেকে হাজার খানেক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। শিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা মানে না বয়স, পোশাক, সামাজিক অবস্থান, ধর্ম, বর্ণ, জাত, পরিচয়। কখনো মানেনি, মানবেও না। তাই আমি ধর্ষকের মৃত্যু চাই! ধর্ষণের বিচার চাই।’
অভিনেত্রী ও মডেল রুনা খান নারীদের সঙ্গে এমন ঘটনায় বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে নারীদের প্রতি সহিংস আচরণ করা হয়। সেটা পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়ভাবেই। নারীদের প্রতি এই আচরণ খুব ভয়াবহ ব্যাপার। অন্য নারীরা নিরাপদ বোধ করেন কি না জানি না, অন্তত আমি আমি নিজে নিরাপদ বোধ করি না।’
নাটক সিনেমার জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী মনিরা আক্তার মিঠু। তিনি বলেন, ‘নারীরা আগেও যেমন নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগেছেন এখনো ভুগছে। এখন যা হচ্ছে, অতীতেও এ রকম আমরা অনেক দেখেছি। এর জন্য আমি বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থাকে দায়ী করব। কারণ আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা একেবারেই খারাপ।’
নাটকের অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া সামাজিক মাধ্যমে ধর্ষকের ৪০ দিনের মধ্যে ফাঁসির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা হওয়া উচিত মৃত্যুদন্ড। দুদিন পর ধর্ষক জামিন পেয়ে সমাজে ঘুরে বেড়াবে সেই সুযোগ যেন না দেওয়া হয়।’
অভিনেত্রী কাজী নওশাবা এমন ঘটনায় ব্যথিত এবং শঙ্কিত হয়ে বলেন, ‘মাগুরায় যে ঘটনা (শিশু ধর্ষণ) ঘটল এবং অন্যান্য জায়গায়ও যেসব ঘটনা ঘটছে, এসব শুনে বা দেখে ভালো থাকার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। দ্রুত এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
এছাড়াও শোবিজের অনেক তারকা বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আওয়াজ তুলেছেন। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছেন ও ধর্ষণের মতো জগণ্যতম কাজ যেন পুনরায় আর না ঘটে, এ বিষয়ে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক একটি ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন অনেকে।