
প্রিন্ট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম
সিনেমার উন্নয়নের চেয়ে বাণিজ্য নিয়ে বেশি ব্যস্ত এফডিসি

রিয়েল তন্ময়
প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ০৭:৩১ এএম

ফাইল ছবি
আরও পড়ুন
ঢাকাই সিনেমার আঁতুড়ঘর’খ্যাত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। ১৯৫৭ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে সিনেমার উন্নয়নে এফডিসি কাজ করলেও একটা সময়ে এসে এটি হয়ে গেছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। যেখানে সিনেমার উন্নয়নের চেয়ে, সমিতি, সংগঠন, মিটিং, রাজনীতি, আন্দোলন, সভা-সমাবেশের চর্চাই বেশি হয়ে থাকে।
এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে যারাই আসেন, কেউই সিনেমার উন্নয়নে সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারেন না বলেও অভিযোগ সিনেমাসংশ্লিষ্টদের। আর তাতেই ধীরে ধীরে কোমায় চলে গেছে সিনেমার প্রাণকেন্দ্র এফডিসি। যেখানে দিন-রাত লাইট-ক্যামেরা অ্যাকশনের শব্দে ও শিল্পীদের পদচারণায় মুখর থাকত, এখন সেই এফডিসি যেন এক ‘ভূতুড়ে নগরী’। একটু সদিচ্ছা ও সিনেমার প্রতি ভালোবাসা থাকলে, সিনেমার জৌলুস ফেরাতে এফডিসি আবারও ভূমিকা রাখতে পারত।
অনেকের অভিযোগ, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে এফডিসির দায়িত্বে যারাই এসেছেন, তাদের সবাই সিনেমার প্রতি আন্তরিক ছিলেন না। যে কারণে সিনেমার কোনো উন্নয়ন তো হয়নি বরং এ অঙ্গনকে রসাতলে ডুবিয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঠিকমতো বেতন ভাতাও পায়নি। যা নিয়ে আন্দোলন প্রতিবাদও কম হয়নি।
এফডিসি যে শুধুই বাণিজ্যিক কেন্দ্র এটি প্রমাণ করে গেছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। আওয়ামী শাসনামলে ২০১৮ সালে এফডিসির বিভিন্ন শুটিং ফ্লোর ভেঙে ৯৪ কাঠা জমির ওপর বহুতল কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করেন তিনি। তখন সময় বলা হয়, সরকার আধুনিকায়নের জন্য এ ভবন নির্মাণ করছে, তাতে এফডিসির আয় বাড়বে। কারণ ভবনে থাকবে বিভিন্ন অফিস, হোটেল, শপিংমল, ফুডকোর্ট। তৎকালীন সরকারের এমন সিদ্ধান্তে তখন ক্ষোভ জানিয়েছেন সিনেমাসংশ্লিষ্টরা। তাদের প্রাণের জায়গা ও স্মৃতিবিজড়িত শুটিং ফ্লোরগুলো ভেঙে সরকারের এমন বাণিজ্যিক চিন্তায় নিন্দাও প্রকাশ করেছিলেন অনেকে। এ রকম ভবন সিনেমার কোনো উন্নয়নে আসবে না, বরং সিনেমার উন্নয়নে জরাজীর্ণ এ ফ্লোরগুলোকে আরও মেরামত করা যেত। তৈরি করা যেত সিনেমার শুটিং করার পরিবেশ।
প্রযোজকদের মতে, বহুতল ভবন নির্মাণের আগে সরকারের উচিত ছিল প্রেক্ষাগৃহগুলোর দিকে নজর দেওয়া। প্রেক্ষাগৃহ না থাকলে সিনেমা চালাবে কোথায়?
এদিকে গত বছর জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যায় স্বৈরাচার হাসিনা। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চলা আওয়ামী দুঃশাসনের অবসান হয়। নতুন বাংলাদেশ সংস্কারে কাজ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়েও আসছে পরিবর্তন। তারই ধারাবাহিকতায় এফডিসিতে নিয়োগ পেয়েছেন নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা রহমান তানি। তার নিয়োগের খবরে ফের প্রতিবাদের আওয়াজ তুলেছে বৈষম্যবিরোধীরা। ও নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত এমডি একজন ফ্যাসিস্টের দোসর বলে দাবি তাদের।
হাজারো শহিদ শিক্ষার্থী-জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এ বাংলাদেশে, ফের আওয়ামী পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এমডির অপসারণে ‘বৈষম্যহীন চলচ্চিত্র স্বার্থরক্ষণ কমিটি’র ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশও করে বৈষম্যবিরোধীরা। নতুন করে সিনেমা বিষয়ে অনভিজ্ঞ ও ফ্যাসিস্টের দোসরকে এফডিসির দায়িত্ব দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক উজ্জ্বল।
তিনি বলেন, ‘এফডিসি তো প্রায় মরেই গেছে। এ প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখতে আমরা সিনেমার মানুষরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, অথচ সরকারের সুদৃষ্টি পাচ্ছি না। ১৬ বছর ধরে সিনেমার কোনো উন্নয়ন নেই, বাণিজ্য নিয়েই ব্যস্ত ছিল এফডিসি। প্রতিষ্ঠানটিকে বাণিজ্যিকভাবেই প্রতিনিয়ত ব্যবহার করা হয়েছে। সিনেমার উন্নয়নে তৎকালীন সরকারের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। তারা ব্যবসা করতে এসেছিলেন এফডিসি নিয়ে। ব্যবসা করতে গিয়ে সিনেমার প্রাণকেন্দ্রটিকে তারা ধংস করে গেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন নতুন করে এখানে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যিনি ফ্যাসিস্টের লোক। এটা আমরা মেনে নেব না। সিনেমার স্বার্থরক্ষায় আমরা এর প্রতিবাদ করছি। সিনেমা অঙ্গনকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।’
এদিকে নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা রহমান তানি গত ২ মার্চ একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে এফডিসির পাওনা আদায়ে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানান। অথচ সিনেমার উন্নয়নে কী ব্যবস্থা নেবেন বা এ বিষয়ে কতটা কঠোর হবেন এ নিয়ে ছিল না তার কোনো তাড়াহুড়া। তিনিও ব্যস্ত অর্থের হিসাব মেলাতে।
মাসুমা বলেন, ‘অনেকের কাছে এফডিসি টাকা পায়। তাদের একাধিকবার চিঠি পাঠানো হলেও কাজ হচ্ছে না। কোটি কোটি টাকা তাদের কাছে পাওনা। আমরা এ বিষয়ে এখন আইনি পদক্ষেপ নেব।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কীভাবে ভালো সিনেমা নির্মাণ করা হবে, তার জন্য এফডিসি কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। সিনেমা চালাতে প্রেক্ষাগৃহ দরকার, সে প্রেক্ষাগৃহ কীভাবে বাঁচানো যায় সে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল, সেটিও নেওয়া হচ্ছে না। এফডিসি তো ব্যবসা করার জন্য বানানো হয়নি। এফডিসিকে ক্যাসিনোবাজদের দখলে না দিয়ে, শিল্প সংস্কৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসুন। ইতিহাস ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করুন।’