হ্যারি পটার সিনেমায় যেভাবে ভক্তদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়

খালিদ হাসান
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪৮ পিএম

অ্যালবাস ডাম্বলডোর চরিত্রে দেখা যাবে বিখ্যাত তারকা জন্য লিথগোকে। হ্যারি পটার ভক্তদের জন্য এ ঘোষণা যতটা না স্বস্তির, তার চেয়ে বেশি যেন প্রশ্নই বয়ে আনছে। তিনি কেমন করবেন আইকনিক এই চরিত্রে, ‘গবলেট অফ ফায়ার’ বই আর সিনেমার দৃশ্যের মতো বিখ্যাত ‘ভুল’ এর পুনরাবৃত্তি সিরিজে ঠেকানো যাবে কি না, এসব প্রশ্ন এসে ভর করতেই পারে পটারহেডদের মনে।
তবে ‘দ্য ক্রাউন’, ‘ডেক্সটার’, এবং ‘থার্ড রক ফ্রম দ্য সান’ এর মতো সিনেমা যার পোর্টফোলিওতে আছে, সে জন লিথগো খারাপও করবেন না এই চরিত্রে এমনটা বলেই দেওয়া যাচ্ছে।
তবে সিনেমায় অভিনেতা মাইকেল গ্যাম্বনও কি খুব খারাপ করেছিলেন? গ্যাম্বনকে দোষ দেওয়া সহজ, কারণ তিনি তার ছদ্মবেশী পোশাক পরিধান করে সিনেমায় অভিনয় করে গিয়েছিলেন। তবে আসল দোষি তো গ্যাম্বন নন, বরং যারা তাকে ভুল দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং ডাম্বলডোরের পোশাক পরিবর্তন করেছিলেন তারাই প্রকৃত দোষী। মানে সিনেমাগুলোর পরিচালকরা।
এর কারণ হল- জে কে রওলিং রচিত ‘হ্যারি পটার’ এর কাহিনী সম্বলিত বইগুলোতে যেভাবে চরিত্রগুলো বর্ণনা করা হয়েছে, সিনেমায় কিন্তু হুবহু সেভাবেই উপস্থাপন করা হয়নি। কিছু কিছু চরিত্রে বিশাল পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাই যারা বইগুলো পড়েছেন, তারা যদি সিনেমাগুলো দেখতে বসলে একটু ধাক্কা খান বৈকি।
হ্যারি পটার সিরিজের প্রকৃত বিষয়গুলো একমাত্র বই পড়লেই জানা সম্ভব। গল্পটা কেমন এবং এর চরিত্রগুলো সম্পর্কে হুবহু জানার জন্য বইয়ের বিকল্প হতে পারে না। আজকের এই লেখায় হ্যারি পটার সিরিজের এমন কিছু দিক তুলে ধরা হলো যা বইতে মোটেও পাওয়া যায়নি।
জিনি কখনোই হ্যারির জুতা বাঁধে না
যদিও জিনি উইজলিকে সিনেমাগুলোর মধ্যে বাদ দেওয়া সম্ভব ছিল না, তবে পরিচালকরা যেন তার চরিত্রটিকে একেবারে বিকৃত করে দিয়েছেন। সিনেমায় দেখায় যায়, হ্যারির পেছনে দাঁড়িয়ে জিনি হ্যারির জুতা বাঁধছে। তবে বইয়ের জিনি কখনোই এইভাবে হ্যারির জুতা বাঁধেনি। জিনি অনেক বুদ্ধিমতী এবং তার তীব্র বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমেই তিনি হ্যারিকে মুগ্ধ করেছিলেন।
এছাড়া রনের প্রতি জিনির খুব একটা সহনশীলতা ছিল না এবং সে তার বড় ভাই বিলের বাগদত্তা ফ্লোয়া প্রতিও বিরক্ত ছিল, যা সে এমনভাবে প্রকাশ করেছিল যে, সে ফ্লোয়াকে দেখতে পেয়ে বমি করার ভান করেন। এমন দৃশ্য দেখে হ্যারি তার নাস্তার টেবিলে অস্বস্তি বোধ করতে থাকে।
কোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ মনোলগ ক্যামেরায় উপস্থাপন করা কঠিন, তবে বইয়ের কোথাও হ্যারি কখনোই তার জুতা নিয়ে ভাবেনি, না জিনি, না অন্য কেউ। তাই কেন আমরা এমন এক বিরক্তিকর জুতা বাঁধার দৃশ্য দেখতে বাধ্য হলাম, তা একটা রহস্য।
বইয়ের হ্যারি কখনোই সিনেমার হ্যারির মতো ডেথলি হ্যালোসের ক্যাম্পে হারমাইওনির সঙ্গে ধীরভাবে নাচতে চায়নি। যেমন বইয়ের হ্যারি রনকে বলেছিল, হারমাইওনি তার বোনের মতো।
পিভস ভূতের অস্তিত্ব গায়েব!
পর্দার সিরিজগুলোতে দেখা যায়, পিভস দ্য পলটারগাইস্টের কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নেই। তার একমাত্র কাজ হচ্ছে হগওয়ার্টসের তত্ত্বাবধায়ক আর্গাস ফিল্চকে কাঁদানো। পিভস তার সময় ব্যয় করেন পরিষ্কার করা করিডোরগুলো নোংরা করে এবং নিজের গান লিখে। হগওয়ার্টসের শিক্ষকদেরকে তিনি নিজের জিভ বের করে বিরক্ত করেন, বিদ্যালয়ের মূল্যবান কেবিনেটগুলো মেঝে ফেলে ভেঙে ফেলেন। এছাড়াও তিনি ছাত্রদের উপর পানি বোমা ছোঁড়েন এবং লর্ড ভোলডেমর্টের পতন ঘোষণা করতে একটি কবিতা রচনা করেন, যার শিরোনাম ছিল, ‘ওল্ড ভোল্ডি’স গৌন মোল্ডি। তবে বইয়ের পিভস কিন্তু সম্পূর্ণই ভিন্ন।
হ্যারি পটারের মতো একটি বইয়ের সিরিজ যা হত্যাযজ্ঞ ও অরাজকতায় ভরা, সেখানে পিভস হচ্ছে আলোর প্রতীক। তিনি বইয়ের ভক্তদের মনে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বিশেষ করে হগওয়ার্টসের ফ্রেড ও জর্জ উইজলির বিদায়ের সময় পিভসের স্যালুট এবং ঘৃণিত অধ্যাপক ডলোরেস আমব্রিজকে শয়তান বলে আখ্যা দেওয়ার কারণে পাঠকদের মনে তিনি গেঁথে আছেন।
‘ক্যাপ্টেন’ অলিভার উডের উচ্চাকাঙ্ক্ষা
বইয়ের তৃতীয় পর্বে ‘প্রিজনার অফ আজকাবান’-এ একটি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ অধ্যায় রয়েছে, যা পুরোপুরি কুইডিচের ফাইনাল নিয়ে। ফাইনালটি সংগঠিত হয় গ্রিফিন্ডোর ও স্লিদ্যারিন হাউজের মধ্যে।
সেখানে অলিভার উড গ্রিফিন্ডোর কুইডিচ দলের অধিনায়ক, যিনি এই প্রতিযোগিতার জন্য অনেক দিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তার উত্তেজনা ছিল আকাশছোঁয়া।
তবে সিনেমায় অলিভার উডকে শুধু তার চেহারা এবং আকর্ষণীয় উচ্চারণের জন্য রাখা হয়েছে। দুঃখজনকভাবে সিনেমায় অলিভার উডের কুইডিচ নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো নির্মমভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। সিনেমার দর্শকরা জানেন না যে, বইয়ের অলিভার উড একজন নিষ্ঠাবান কুইডিচ ক্যাপ্টেন, যিনি ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও তার বাহিনীকে অনুশীলন করান।
যার ফলে তার দলের একজন সদস্য মন্তব্য করে, ‘আগস্ট থেকে আমি একটুও ভালোভাবে শুকাতে পারিনি।’ অবশেষে ফাইনালে উড তার দলের সঙ্গে কুইডিচ কাপ জয় করে।
বইয়ের পাঠকরা এই কাহিনীগুলো কখনোই ভুলতে পারবেন। তবে দুঃখজনকভাবে সিনেমায় তা দেখা যায়নি।
সুতরাং, টেলিভিশন সিরিজ নির্মাতাদের প্রতি হ্যারি পটার বইয়ের পাঠকদের চাওয়া, জিনি উইসলির চরিত্রকে ঠিকভাবে উপস্থাপন করুন, পিভসের এমন রুক্ষতা বাদ দিন এবং অলিভার উডকে এমন এক প্রকৃত অধিনায়ক হিসেবে দেখান যিনি সঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করেন।