![ঢাকাই সিনেমায় ফের অশনিসংকেত](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/02/13/film-67ad6e7fabb23.jpg)
ফাইল ছবি
ঢাকাই সিনেমা আশার বদলে যেন আরও নিরাশায় ডুবিয়ে দিচ্ছে। বছরের শুরুতেই বড় ধরনের ধাক্কা খেল সিনেমাশিল্প। নতুন বছর শুরুর দেড় মাসে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ছয়টি সিনেমা। যার একটিও বাণিজ্যিকভাবে সাফল্য পায়নি।
সিনেমার দুর্দিনে এমন ব্যর্থতা সিনেমাশিল্পের জন্য ‘অশনিসংকেত’ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মুক্তি পায় চারটি সিনেমা। ‘মধ্যবিত্ত’ (৩ জানুয়ারি), ‘মেকাপ’ (১০ জানুয়ারি), ‘কিশোর গ্যাং’ (১৭ জানুয়ারি), ‘রিকশা গার্ল’ (২৪ জানুয়ারি)। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মুক্তি পায় দুটি সিনেমা ‘বলী’ ও ‘দায়মুক্তি’। জানুয়ারির চার সিনেমার মধ্যে একটিও আশানুরূপ ফল আনতে পারেনি। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পাওয়া দুই সিনেমা নিয়েও দর্শকদের সে রকম কোনো আগ্রহ নেই।
সিনেমা হিট না হলে প্রযোজকরা নিরাশ হয়ে পড়েন। লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত না পেলে, নতুন সিনেমায় লগ্নি করার সাহস পান না। আর তাতে কমে যায় সিনেমা নির্মাণ। এর ফলে ক্ষতির সম্মুখীন দেশি সিনেমা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলা সিনেমার প্রতি দর্শকের আগ্রহ কমেছে। এখন সুস্থ ধারার বাণিজ্যিক সিনেমা নির্মাণের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। মৌলিক গল্পের সিনেমার পাশাপাশি সংগীত, অভিনয় ও পরিচালনার দিকেও মনোযোগী হতে হবে। এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে এখন মানহীন সিনেমা মুক্তির বিষয়েও কড়া নজর রাখতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত দশকের তুলনায় দেশে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা কমে এখন শতকের নিচে। চালু প্রেক্ষাগৃহগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হলেও ভালো সিনেমা প্রয়োজন। কিন্তু সেটা নেই। সিনেমা হয়ে গেছে এখন ঈদকেন্দ্রিক। প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের অভিযোগ, সারা বছরের মধ্যে দুই ঈদেই তারা একটু ভালো দর্শক পান। বছরের বাকি দিনগুলো তাদের লোকসান গুনতে হয়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচাতে প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রাখছে। সারা বছর লোকসান গুনেও শিল্পটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এখন যদি ভালো মানের সিনেমা মুক্তি না পায় তাহলে এ শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে কী করে। নতুন সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেগুলো চালিয়ে আমাদের কোনো ফায়দা হয় না, দর্শক টানতে ব্যর্থ হচ্ছে সিনেমাগুলো।’
এছাড়া দর্শক খরার পেছনে ‘মানহীন সিনেমা’ তৈরির বিষয়টিকেও কারণ হিসাবে তুলে ধরেন প্রদর্শকরা। বাংলা সিনেমার এ ব্যর্থতাকে নির্মাতারা ‘প্রেক্ষাগৃহ ও শিল্পী সংকট’ বলেও চালিয়ে দিচ্ছেন।
এদিকে প্রযোজকদের দাবি, লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত না পাওয়াতে বড় বাজেটের সিনেমা নির্মাণে তারা সাহস পাচ্ছেন না। সিনেমার মাদার অর্গানাইজেশন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতিও দীর্ঘদিন ধরেই অকার্যকর হয়ে রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রির জন্য এটি মোটেও সুখকর নয়।
বিষয়টি নিয়ে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকেই। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও শিল্পী সমিতি নিজেদের কাজ থেকে অনেক দূরে সরে রয়েছেন বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, সংগঠনের কাজ কী তা হয়তো ভুলে গেছেন কর্তাব্যক্তিরা।
দেশের সিনেমা এখন ঈদকেন্দ্রিক। সচল প্রেক্ষাগৃহের পাশাপাশি বন্ধ কিছু প্রেক্ষাগৃহ চালু হয় ঈদের সময়। কারণ বছরের দুটি ঈদেই প্রেক্ষাগৃহে কিছুটা দর্শক সমাগম হয়। তাই বড় তারকা ও বড় বাজেটের সিনেমাগুলো ঈদেই মুক্তি দিতে মুখিয়ে থাকেন প্রযোজক-পরিচালকরা। সিনেমার এ দর্শক খরায় লগ্নি তুলতে ঈদের সিনেমার দিকে তাকিয়ে থাকবেন প্রযোজক, এটাও স্বাভাবিক।
তবে সিনেমা শিল্পের উন্নয়নে এ ধারার পরিবর্তনও জরুরি বলে মনে করছেন অনেকে। ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার প্রচার-প্রচারণা। ঈদুল ফিতরে মুক্তির আভাস দিয়েছে প্রায় হাফ ডজনের মতো সিনেমা। তার মধ্যে রয়েছে শাকিব খান-ইধিকা পাল অভিনীত সিনেমা ‘বরবাদ’, সিয়াম-শবনম বুবলীর ‘জংলি’, আফরান নিশো-তমা মির্জার ‘দাগি’, আদর আজাদ অভিনীত দুই সিনেমা ‘পিনিক’ ও ‘টগর’, মেহজাবীন চৌধুরীর ‘সাবা’, আরিফিন শুভ অভিনীত দুটি সিনেমা ‘নীলচক্র’ ও ‘ঠিকানা বাংলাদেশ’।
এছাড়া ঈদে মুক্তির মিছিলে যোগ হবে আরও একাধিক সিনেমা। এদিকে ঈদে ভালো কিছু সিনেমা মুক্তি পেলেও সারা বছর যাচ্ছেতাই মানহীন সিনেমা মুক্তি দেওয়াটাও সিনেমার জন্য ‘অশনিসংকেত’।