বাবার ২৫ কাঠার জমি নিয়ে যে অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন রুনা খান

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:১৭ পিএম

জমিকাণ্ড নিয়ে সম্প্রতি খবরের শিরোনাম হয়েছেন চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। ভাইবোনদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিবাদের বিষয়টি আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। এই পরিস্থিতির মাঝে সামনে এসেছে অভিনেত্রী রুনা খানের বাবার সম্পত্তি বণ্টনের বিষয়। তবে এখানে কোনো দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়নি, বরং তার ভাই তুহিন সঠিকভাবে বাবার সম্পত্তি ভাগ করেছেন।
এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দীর্ঘ এক পোস্টে নিজের অনুভূতি শেয়ার করেছেন অভিনেত্রী রুনা খান। তিনি জানান, তার বাবার ২৫ কাঠার একটি জমি ছিল। সেই জমি বিক্রির টাকা তার ভাই তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে।
ফেসবুকে রুনা খান লিখেছেন, তুহিন বয়সে আমার দেড় বছরের ছোট, কিন্তু পড়াশুনায় ৫ বছর পেছনে। আম্মা-আব্বু আমাকে ৫ বছর বয়সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলে সরাসরি ক্লাস টু-তে ভর্তি করান। আর তাকে ৫ বছরে প্লে-গ্রুপ থেকে ক্লাস-টু উঠতে উঠতে তার বয়স ১০।
অভিনেত্রী লেখেন, আব্বু ১৯৯৮ সালে বিএডিসি থেকে গোল্ডেন-হ্যান্ডশেকে রিটায়ার করেন। আমি এসএসসি পাশ করেছি মাত্র, তুহিন ক্লাস সেভেনে পড়ে। সরকারি সৎ চাকরীজীবীর ছোট্ট মহাসুখী পরিবার, অঢেল প্রাচুর্য নেই তবে আর্থিক সংকট কী জিনিস তাও জীবনে কখনো দেখিনি। আব্বুর বেতনের টাকায় মহাসুখে খেয়ে-দেয়ে দুই ঈদে নতুন জামা-জুতো পড়ে কেটেছে আমাদের দুই ভাইবোনের জীবন। আমি এইচএসসি পাশ করার পর জানতে পারলাম, আব্বুর রিটায়ারমেন্টের সব টাকা শেষ, আব্বুর চোখে রেটিনা সমস্যা, তিনি দেখতে পান না ঠিক মতো। কোনো কাজ বা রোজগার তিনি আর করতে পারবেন না! সম্পদ বলতে সখিপুরে বাবার চাকরির টাকায় কেনা ২৫ কাঠা জায়গার ওপর বিশাল এক বাড়ি। শাক-সবজি, ফলমূল, মুরগি-ডিম-গরুর দুধ-বাড়ি ভাড়া কিছুই লাগে না-সব নিজেদের। কিন্তু মাসিক কোনো রোজগার নেই!
রুনা খান লেখেন, ততদিনে আমি ইডেনে অনার্স ভর্তি হয়ে গেছি, তুহিন ক্লাস নাইনে। পরিবারে আমিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। টিউশনি-কোচিংয়ে পড়ানো, কুরিয়ার-সার্ভিস অফিসে চাকরি-এসব করে ঢাকায় নিজে চলি, বাড়িতে টাকা পাঠাই। সেই টাকায় ভাইয়ের লেখাপড়া,বিদ্যুতের বিল ও অন্যান্য খরচ চলে। তারপর শুরু হলো টিউশনির পাশাপাশি অভিনয় করে উপার্জন। এভাবেই চলছিলো সংসার। ভাইয়ের পড়াশোনা শেষ হলো। তারপর ২০০৯-এ আমার বিয়ে। ২০০১-২০০৯ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি থেকে ২০০৯-২০২৫ এমন জীবন-যাপন করছে রুনা..যেখানে তার ১ টাকা সংসারের পেছনে খরচ করতে হয় না, না নিজের সংসার, মা-ভাইয়ের সংসার! দায়িত্ব ফুরালো রুনাবিবির! রয়ে গিয়েছিল সখিপুরের ২৫ কাঠার বাড়িটা।
এরপর অভিনেত্রী লেখেন, জমি বিক্রির টাকা ভাগ করার সময় সবাই তুহিনকে বলেছে, তোমার সম্পত্তি এক টাকা হলে রুনার ১০ টাকা। ও তোমার চেয়ে দশগুণ আয়ও করে। জবাবে তুহিন বলেছে, ‘রুনার আমার থেকে ১০ গুন বেশি আছে, তাই অর্ধেক দিলাম, নইলে ওকে পুরাটা দিতাম। বাপের ২৫ কাঠা জমি যে ২৫ বছর আগেই বেঁচে খেতে হয়নি, তার কারণ রুনা। আব্বুর রিটায়ার করার পর কোনো একটা আত্মীয়-স্বজন এক টাকা দিয়ে সাহায্য করেনি, রুনা জীবনে ১টা টাকা কারোর কাছে সাহায্য চায়নি, ধার করেনি। ১৮ বছর বয়স থেকে টিউশনি করে নিজে চলেছে-সংসার চালিয়েছে-আমাকে মানুষ করে! এইজন্যই তো এই জমি আছে, নইলে তো জমি কবেই বেঁচে খেতে হতো! আব্বুর জমির পুরাটা ওর ভাগ। ওর অনেক আছে তাই ওর ভাগ থেকে অর্ধেক আমি নিলাম’।
পোস্টের শেষে অভিনেত্রী আক্ষেপ করে জানিয়েছেন, এমন ভালো সংবাদগুলো নিয়ে কেউ আলোচনা করে না, গণমাধ্যমেও এসব নিয়ে সংবাদ হয় না।