পপির বিরুদ্ধে বোনের অভিযোগ, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে যা জানাল পুলিশ

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫২ পিএম

জমিকাণ্ড ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই আলোচনায় ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিকা পারভীন পপি। মারধর ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় পপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তার বোন ফিরোজা বেগম।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পৈতৃক জমি নিজ দখলে নিতে স্বামী ও তার সহযোগীসহ সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় সোনাডাঙ্গার শিববাড়িতে জড়ো হন তারা। বাধা দিলে একপর্যায়ে ফিরোজা পারভীনসহ সবাইকে হুমকি দেন পপি ও তার স্বামী।
ফিরোজা বেগমের দাবি, পপি তাকে মারধর করেছেন এবং পপির স্বামী তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এ অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। তবে চিত্রনায়িকা পপি অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
পারিবারিক বিরোধের কারণে পপির বিরুদ্ধে করা এই অভিযোগের তদন্তের অনুমতি চেয়ে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ আদালতে আবেদন করেছে। সম্প্রতি খুলনার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই আবেদন করেন সোনাডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক খালিদ উদ্দিন।
এ বিষয়ে সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, চিত্রনায়িকা পপির বিরুদ্ধে জিডি করেছেন তার ছোট বোন। সেটির তদন্তের অনুমতি চেয়ে খুলনা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর জিডির ঘটনার আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, পপির বোনের জিডির পর আমরা অনানুষ্ঠানিকভাবে ঘটনার খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছি। যতটুকু জেনেছি, তাতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জমি দখলের কোনো বিষয় সেখানে নেই। ওয়াসা ও বিদ্যুতের নামজারির বিষয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। অভিযোগকারী পপির ছোট বোন যে ফুটেজ আমাদের দিয়েছিলেন, সেটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাতে পপি মারধর করেছেন, এমন কোনো ফুটেজ সেখানে নেই। যা আছে, সেটি হচ্ছে কোনো নায়িকা গেলে উৎসুক লোকের ভিড় জমে যায়, সেখানেও তা–ই হয়েছিল। তবে ফুটেজে একটি মোবাইল সেট পড়ে যেতে দেখা গেছে।
এদিকে পপির অভিযোগ, তার মা এবং ভাইবোনেরা তার সম্পত্তি জোরপূর্বক ভোগদখল করে আসছেন। তিনি তার বৈধ জমিতে বিদ্যুৎ ও ওয়াসার মিটার সংযোগের জন্য খুলনার সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন করেছিলেন। আবেদনটির যাচাই–বাছাই শেষে অফিসের কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শনে এসেছিলেন। ওই সময় তিনি তার জমির কাগজপত্রসহ সব প্রমাণ দেখান। কোনো কিছু না বলে তার বোন ফিরোজা তাকে মারধর করেন এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। মা ও ভাইবোনেরা মিলে তার সম্মান নষ্ট করার উদ্দেশ্যে তার নামে থানায় মিথ্যা জিডি করেছেন। এই জিডির কোনো ভিত্তি নেই।
পপি বলেন, আমি আমার মা ও ভাই–বোনের অনেক নির্যাতন সহ্য করেছি। আর সহ্য করব না। ওরা আমার নামে অনেক মিথ্যা, কুৎসা রটিয়ে যাচ্ছে। আমি যাদের জন্য এত করলাম, আমার জীবনের সর্বস্ব নিংড়ে দিলাম, তারাই আমাকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমার মানসম্মান নষ্ট করছে। আমাকে হয়রানি করছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনি ব্যবস্থা নেব।
অন্যদিকে অভিযোগকারী পপির বোন ফিরোজা বেগম গণমাধ্যমকে বললেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সেদিন পপি আমাকে মারধর করেছে। আর তার স্বামী আমাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছে। আমি নিজের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের জন্য বাধ্য হয়ে নিজের বোনের বিরুদ্ধে জিডি করেছি। আমি বিচার চাই।
এ বিষয়ে খুলনা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) শেখ মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, চিত্রনায়িকা পপির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, সেটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হবে। একজন এসআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষেই বলা সম্ভব হবে, বাস্তবে সেখানে কী ঘটেছিল। তদন্ত করে যা পাওয়া যাবে, তা আদালতকে প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানানো হবে।