পরিবারের কাছে ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’ ছিলাম: পপি

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:০৮ পিএম

ঢাকাই সিনেমার এক সময়কার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিকা পারভীন পপি দীর্ঘদিন ধরেই শোবিজ অঙ্গনের বাইরে আছেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেও নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ অভিনেত্রী। মাঝে শোনা যায়, অভিনেত্রী বিয়ে করেছেন এবং তার একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।
তবে সম্প্রতি তার বোনের করা এক জিডির পর থেকে ব্যাপক আলোচনায় আছেন এ নায়িকা। সম্প্রতি তার মা ও বোন অভিযোগ তুলেছেন, পপি তার স্বামীকে নিয়ে পৈতৃক সম্পত্তি দখল করার চেষ্টা করছেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রথমে চুপ থাকলেও এবার মুখ খুলেছেন নায়িকা। সম্প্রতি গণমাধ্যমে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় বিস্তারিত তুলে ধরেছেন তিনি।
ওই ভিডিওতে তার বিরুদ্ধে মা-ভাই-বোনের আনা সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে অভিনেত্রী বলেন, আমি পপি। দীর্ঘ ২৮ বছর সুনামের সঙ্গে চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু এই মুহূর্তে ক্যামেরার সামনে কথা বলছি একজন ব্যর্থ মানুষ হিসেবে। ব্যর্থ মানুষ বলছি এই কারণে— সবার মন জয় করতে পারলেও দীর্ঘ ২৮ বছর যাদের জন্য কাজ করেছি, এই হাতে যাদের লালন পালন করেছি, তাদের কাছে আমি অযোগ্য একজন মানুষ। তাদের মন মতো চলতে পারিনি। সেজন্যই বলেছি আমি একজন ব্যর্থ মানুষ। মানুষ তো সবসময় সবার কাছে ভালো হতে পারে না। আমি যখন ইনকাম করেছি, দুহাতে দিতে পেরেছি, তখন আমার পরিবারের কাছে অনেক প্রিয় একজন মানুষ ছিলাম। এখন তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দিতে পারি না। তাই তাদের কাছে গলার কাঁটা, শত্রু এবং অপছন্দের মানুষ।
পপি বলেন, দুদিন যাবত দেখলাম আমার পরিবার কতটা নিচে নামতে পারে। কত হিংস্র ব্যবহার করতে পারে। কত নোংরা শব্দ ব্যবহার করতে পারে। মিডিয়ার কাছ থেকে সবসময় আমি সহযোগিতা পেয়েছি। পরিবারের কয়েকটা মানুষের মিথ্যা কিছু কথাবার্তা, মিথ্যা অভিনয়-নাটক, মিথ্যা অভিযোগ বলার সঙ্গে সঙ্গে যে মানুষগুলো আমাকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করার কথা তারাই মানুষের কথা অনুযায়ী আমাকে ভুলভাবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে বাজেভাবে উপস্থাপন করেছেন। এর থেকে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না। যাদের জন্য কাজ করেছি আজ তারা আমার না। আল্লাহ বলেন, কেয়ামতের মাঠে কেউ কাউকে চিনবে না।
এবার আসল কথায় আসি, আজ যে অভিযোগগুলো আমার মা-বোন করছে, শক্তভাবে আমি প্রতিবাদ করছি। এর পুরোটাই বানোয়াট। তাদের স্বার্থ উদ্ধার হয়নি বলে সত্য একটা জিনিসকে অসত্য বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। আমি একজন শিল্পী। আমি কি ভূমিদস্যু? যাদেরকে এই দুই হাতে ছোটবেলা থেকে লালন পালন করেছি, জীবনের যে সময়টা উপভোগ করার সেই সময়টা তাদের জন্য ব্যয় করেছি। এটা আমার দায়িত্ব না। তারপরও ভাইবোনকে নিজের সন্তান হিসেবে লালন পালন করেছি। নিজের ভবিষ্যৎ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা অনেক কিছুই বাদ দিয়েছি। শুধু আমার ভাইবোনকে মানুষ করার জন্য। কিন্তু এখন এসে দেখলাম মানুষ তো হয়ইনি। হিংস্র পশুরও কৃতজ্ঞতা থাকে, এদের মধ্যে সেই কৃতজ্ঞতাও নেই।
অভিনেত্রী আরও বলেন, কাদের নামে অভিযোগ করব? অভিযোগ তো করে বাইরের মানুষের নামে। যেহেতু আমার ভাইবোন বাবা মাকে অনেক ভালোবাসি। তাই তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। তাদের দ্বারা আমার জীবনে অনেক কিছু ফেস করেছি। নির্যাতিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত হয়েছি। আমি যে আয় করেছি তারা সব নিয়ে নিয়েছে। আমার সঙ্গে বেইমানি করেছে। আমার টাকা দিয়ে কেনা সম্পত্তি আমার নামে ছিল না। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শূন্য ছিল। আমার দেহটা ছাড়া কোনো কিছুই আমার ছিল না। সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আমিও তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলাম। একটা পর্যায়ে এসে মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য অবলম্বন লাগে। একটা সময় যখন জানতে পারলাম আমার পরিবার আমাকে ঠকিয়েছে। জানার পরও চুপ ছিলাম। তাদের দ্বারা অনেক নির্যাতিত হয়েছি। আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে। আমার টাকা চুরি করেছে। আমাকে খুন করতে খুনিকে টাকা দিয়ে ভাড়া করেছে। আমার আপন মা ভাই বোন জড়িত ছিল।
তার কথায়, পৃথিবীতে সব মা-ই মা না। খারাপ মা-ও আছে। দুর্ভাগ্যবশত আমার মা হয়তো আমাকে সেই পরিমাণ ভালবাসতে পারেনি। আমার পরিবারের কাছে সবসময় সোনার ডিম পাড়া একটা হাঁস ছিলাম। দুধ দেওয়া একটি গরু ছিলাম। টাকা ছাপানোর মেশিন ছিলাম। সন্তান হিসেবে কখনোই ভালোবাসাটা পাইনি। তারপরও কোনো অভিযোগ নেই। এখনো নেই।
অভিনেত্রী আরও বলেন, একটা মানুষ যখন মেশিনে পরিণত হয়, তখন তার মূল্য মেশিন হিসেবেই থাকে। মানুষ হিসেবে থাকে না। আমার বাবা মা আমার সঙ্গে অনেক বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমার সব টাকা-পয়সা বোনের অ্যাকাউন্টে ছিল। তারপরও কিছু বলিনি। ২০০৭-এর ঘটনা বলছি। তখন জানতে পারলাম কোনো কিছুই আমার নেই। তখন সিনেমার মুরুব্বীরা মিলে সবকিছু ঠিকঠাক করে দিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে পা রাখেন পপি। কিন্তু তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘কুলি’। এই চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন ওমর সানী। সিনেমাটি সেই সময়ে ৭ কোটি টাকা ব্যবসা করে মাইলফলক অর্জন করে। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি পপিকে।

