নবাবখ্যাত বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খান গত ১৫ জানুয়ারি গভীর রাতে নিজ বাসায় দুষ্কৃতকারীর হামলায় গুরুতর আহত হয়ে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে তার অস্ত্রোপচার করা হয়। পাঁচ দিন হাসপাতালে থাকার পর মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বাড়ি ফেরেন অভিনেতা। এই বিভীষিকা আজীবন তাকে তাড়া করে বেড়াবে বলে পুলিশকে জানান অভিনেতা।
এর আগে সেদিনের ঘটনার বর্ণনায় অভিনেতার স্ত্রী কারিনা কাপুর খান জানান, অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী সাইফের শরীরে একের পর এক ছুরির আঘাত হেনেছিলেন। এ কথা নিজ বয়ানেও পুলিশকে জানিয়েছেন সেই দুষ্কৃতকারী।
জেরার সময় প্রায় একই কথা বলতে শোনা গিয়েছিল তারকা দম্পতির ছোট ছেলে জেহ-র দেখভালকারীর থেকেও। এবার আক্রান্ত সাইফ আলি খানের সঙ্গে সেদিন কী ঘটেছিল, সেই বর্ণনা পুলিশকে দিলেন অভিনেতা নিজেই।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর পুলিশের কাছে দেওয়া বয়ানে অভিনেতা সাইফ আলি খান বললেন, সেই রাতে আমি আর কারিনা ১১ তলায় আমাদের শোবারঘরে ছিলাম। আচমকা জেহর ঘর থেকে ওর দেখভালকারী এলিয়ামা ফিলিপের চিৎকার শুনতে পাই। আমরা দৌড়ে সেই ঘরে গিয়ে দেখি এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি সেখানে দাঁড়িয়ে।
সাইফ বলেন, নিজের ঘরে অচেনা একজনকে দেখে ছোট্ট জেহ ভয় পেয়ে কাঁদছে। এসব দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারিনি। সন্তানকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ি দুষ্কৃতকারীর ওপর।
অভিনেতা জানান, দুষ্কৃতকারীও সঙ্গে সঙ্গে জেহর বদলে নিশানা বানান অভিনেতাকে। এলোপাতাড়ি ঘাড়ে, হাতে ও পিঠে ছুরি দিয়ে কোপাতে থাকেন তিনি। আঘাতের পর আঘাত সহ্য করতে করতে একটা সময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন সাইফ। সেই অবস্থাতেই ধাক্কা দিয়ে হামলাকারীকে ছোট ছেলের থেকে দূরে সরিয়ে দেন তিনি। এ সুযোগে এলিয়ামা দ্রুত জেহকে কোলে তুলে নিয়ে অন্য ঘরে পালিয়ে যান। এ সময় অন্য কর্মচারীরা এসে দুষ্কৃতকারীকে একটি ঘরে আটকে রাখেন।
হামলাকারীকে আটকাতে গিয়ে সাইফের সঙ্গে সেদিন এলিয়ামাও আহত হয়েছিলেন। একটু ধাতস্থ হয়ে তিনি গৃহকর্তাকে জানান, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিটি জেহকে অপহরণ করতে এসেছিলেন। এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিলেন।
এরপরই বড় ছেলে তৈমুরকে নিয়ে সাইফ অটোয় চড়ে পৌঁছে যান লীলাবতী হাসপাতালে। চিকিৎসকরা দ্রুত তাকে ভর্তি করে নেন। নিয়ে যাওয়া হয় জরুরি বিভাগে। চিকিৎসকদের একটি পর্যবেক্ষণ দল গঠিত হয়। তারা অস্ত্রোপচার করে সাইফের মেরুদণ্ডের কাছে বিঁধে থাকা ছুরির ভাঙা অংশটি বের করে আনেন। ঘাড় ও বাহুর আঘাতের জন্য প্লাস্টিক সার্জারি করেন। গত মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) হাসপাতাল থেকে অভিনেতাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, চুরির উদ্দেশ্যেই সাইফের ঘরে ঢুকেছিলেন দুষ্কৃতকারী শরিফুল ইসলাম শেহজাদ। মুম্বাইয়ের ঠাণে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সাইফ আলি খানের বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে সংগৃহীত আঙুলের ছাপ শরিফুলের সঙ্গে মিলে গেছে। অভিযুক্ত অভিনেতার বাড়ির ১১ তলায় ডাক্ট পাইপ বেয়ে উঠেছিলেন। সেখানেও তার হাতের ছাপ পাওয়া গেছে।
জেহর ঘরের দরজার হাতলে এবং বাথরুমের দরজায়ও অতিরিক্ত ছাপ পাওয়া গেছে। সেসব ফরেনসিক তদন্তে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের ধারণা, সেই ছাপগুলোও অভিযুক্তের আঙুলের ছাপের সঙ্গে মিলে যাবে।