ছবি: সংগৃহীত
বাংলার পতৌদি পরিবারের নবাব বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খান বুধবার (১৫ জানুয়ারি) গভীর রাতে নিজ বাড়িতে দুষ্কৃতকারীর হাতে আক্রান্ত হওয়ার পর মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে শয্যাশায়ী হন। পরে তাকে অস্ত্রোপচার করানো হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বাড়ি ফেরেন অভিনেতা।
এর আগে বান্দ্রার বাড়ির সামনে গভীর রাতে মুমূর্ষু সাইফের স্বজনরা যখন চিৎকার করে অটোওয়ালাকে ডাকছিলেন, তখন প্রাণ রক্ষার্থে ছুটে যান মুম্বাইয়ের এক অটোচালক। অভিনেতাকে নিয়ে ছুটে যান লীলাবতী হাসপাতালে। এরপরই অভিনেতাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার পর থেকেই অটোচালক ‘ভাইরাল’।
গত ১৬ জানুয়ারি ভোরে রক্তাক্ত সাইফ আলি খানকে বান্দ্রার বাড়ি থেকে লীলাবতী হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিলেন ভজন। এক প্রকার ‘নতুন জীবন’ই উপহার দিয়েছিলেন পতৌদির ‘ছোট নবাব’কে। কিন্তু ওই রাতের পরই বদলে দিয়েছে ভজনের জীবন। কতটা বদলে গেল অটোচালকের জীবন? জানতে চেয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন।
বুধবার সকাল থেকে ভজনের ফোন ব্যস্ত। ফোন বাজলেও ধরছেন না। তিনি কি অটো চালাচ্ছেন! সাবধানতার কারণে ফোন ধরছেন না? জানার উপায় নেই। তবে বুধবার রাত প্রায় সাড়ে ১০টায় ফোন ধরলেন ভজন। দিনের শেষে সবে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর ফোনের ওপার থেকে ক্লান্ত কণ্ঠস্বর ভেসে এলো— আমি সাক্ষাৎকার দিতে চাই না, যা বলার আগেই সব বলে দিয়েছি। আর নতুন করে সাক্ষাৎকার নিতে চাইলে দয়া করে দেখা করুন। কে কোথা থেকে ফোন করছেন? আমি কিছু বুঝতে পারছি না, মুখোমুখি কথা বলব।
জানালেন গত কয়েক দিনে লাগাতার গণমাধ্যমের চাপ তিনি আর সহ্য করতে পারছেন না। তার ছবি ব্যবহার করে নেটদুনিয়ায় অজস্র ‘ফেক ভিডিও’ ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তিনি। দুটো কথা জানিয়েই ফোন রাখার উপক্রম করলেন ভজন। সাইফ নন, যদি শুধু তাকে নিয়ে দুটি প্রশ্ন করা হয়, উত্তর দেবেন তিনি? কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর রাজি হলেন আদতে উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা ভজন সিং রানা।
উত্তরাখণ্ডের খতিমা শহরে বড় হয়েছেন ভজন। মুম্বাইয়ে প্রায় ২০ বছর অটো চালাচ্ছেন তিনি। থাকেন খার অঞ্চলে। প্রতিদিনের মতো ১৫ জানুয়ারি রাতেও গিয়েছিলেন বান্দ্রা অঞ্চলে, ভাড়ার সন্ধানে। তার পরের ঘটনা সবাই জানেন। গত মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে ভজনের সঙ্গে দেখা করেন সাইফ।
বুধবার দুজনের একসঙ্গে তোলা সেই ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। ভজন বলেন, জানি না কীভাবে ছবিগুলো ভাইরাল হয়েছে। তার পর থেকে আরও সবাই বিরক্ত করছেন। আমি একটু বিশ্রাম চাই। দেশের বাড়ি থেকেও একের পর এক ফোন।
ভজন জানতেন না, যে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন, তিনি অভিনেতা সাইফ আলি খান। ভবিষ্যতেও কি এভাবেই তিনি কারও বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িতে দেবেন? হেসে বললেন, কেন করব না? অবশ্যই করব। ধনী বা গরিব— এই বিভাজন না রেখেই মানুষকে সাহায্য করা উচিত।
ভজন কোনো দিন কলকাতায় আসেননি। তবে কলকাতার হলুদ ট্যাক্সির কথা জানেন, নির্দিষ্ট রুটে অটোর কথাও শুনেছেন। শহরে বিভিন্ন কারণে ট্যাক্সি বা অটোচালকদের সমালোচনা যেমন হয়, তেমনই তাদের ভালো কাজের প্রশংসাও করা হয়। এ মুহূর্তে ভজন তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
কথা প্রসঙ্গেই তার ‘বাঙালি ভাই’দের প্রতি বার্তা দিলেন ভজন। তিনি বললেন, মানুষকে সাহায্য করুন। হয়তো কোনো পথদুর্ঘটনা হয়েছে, দেখি অনেক চালক ভয় পেয়ে যান। ভয় পাবেন না। কাউকে সাহায্য করার পর দেখবেন, নিজেরই মনটা আনন্দে ভরে উঠবে।
এক রাতের ঘটনায় তার নামের সঙ্গে ‘তারকা’ তকমা জুড়ে গেছে। জীবন কি বদলে গেছে তার?—এমন প্রশ্নের উত্তরে ভজন বলেন, সংবাদমাধ্যমে যা বলা হচ্ছে, মানুষ দেখছেন। আমি কোনো তারকা হতে চাই না। আমার যা করার সেটি করে দিয়েছি। সামাজিক মাধ্যমে চর্চা— সাইফ নাকি ভজনকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু ভজন এ রকম গুজবকে উড়িয়ে দিলেন। তার জায়গায় অন্য কেউ হলে, হয়তো সাইফের হাত ধরেই আরও সুরক্ষিত পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবতেন। ভজন তা করেননি। তিনি বলেন, আমি তার থেকে কিছু চাইনি। কিছু অনুরোধ করার চেষ্টাও করিনি। উনি খুশি হয়ে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন, আর কী চাই।
তার কাজের প্রশংসাস্বরূপ ইতোমধ্যে মুম্বইয়ের একটি সংস্থা ভজনকে ১১ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছে। আর হাসপাতালে দেখা হওয়ার পর সাইফের পরিবার তার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছে। কিন্তু টাকার প্রসঙ্গ উঠতে ভজন চুপ করে গেছেন, কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন তিনি। সাইফের পরিবারের সদস্যরা তাকে কী বলেছেন? এ প্রসঙ্গ তুলতেই ভজন বলেন, আমি তারকা হতে চাই না, যা করেছি মানবিকতার খাতিরে। ওর পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা হয়েছে। তারা আমার প্রশংসা করেছেন। আর কিছু চাই না।
আর কোনো প্রশ্ন করা গেল না। ক্লান্ত ভজন রাতের খাবার খেতে বসবেন। আগামী কাল থেকে কী পরিকল্পনা তার? বললেন, আমি এবার শুধু কাজে ফিরতে চাই।