Logo
Logo
×

বিনোদন

স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে মানিকের দুই দশকের লড়াই

Icon

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১০ এএম

স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে মানিকের দুই দশকের লড়াই

ছবি: সংগৃহীত।

বাংলাদেশে অভূতপূর্ব এক গণঅভ্যুত্থানে চমকে ওঠে গোটা পৃথিবী। ছাত্র-জনতার রক্ত, অঙ্গহানী, অন্তর্ধান এবং আহত শরীরের বিনিময়ে আসে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সকাল। তবে, এ সকাল নির্মাণে প্রায় দুই দশক ধরে সংগীতাঙ্গনে লড়াই করছেন হাতেগোনা কয়েকজন শিল্পী। তাদের মধ্যে অন্যতম আমিরুল মোমেনীন মানিক। 

স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রায় দুই দশক ধরে গান, লেখালেখি ও সাংবাদিকতার মাধ্যমে জাগরণ তৈরির নিরন্তর চেষ্টা করছেন তিনি। ২০১৪ সালে প্রকাশিত জীবনমুখী গানের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তীর সঙ্গে গাওয়া ‘আয় ভোর’ শিরোনামের গানটি আলোড়ন তৈরি করে। এরপর যৌথভাবে প্রকাশিত হয় সচেতনতামূলক গান ‘নীল পরকীয়া’। 

এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নচিকেতার সঙ্গে প্রকাশিত হয় আরেকটি জাগরণী সংগীত ‘সকাল হবে কি?’। গণঅভ্যুত্থানের বুনিয়াদ তৈরিতে এ গানটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জোগায়। মানিকের লেখা, সুর করা এবং নচিকেতার সহযোগে গাওয়া ‘সকাল হবে কি?’ গানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক মুক্তির বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়।

২০১০ সালে জনজীবনের নানা অসংগতি ও দুর্ভোগ নিয়ে কণ্ঠশিল্পী আগুনের সঙ্গে প্রকাশিত হয় মানিকের ‘মা গো তুমি কেমন আছ?’ শিরোনামের জীবনমুখী গান। ২০১১ সালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ফেলানী হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হলে শিল্পী হিসাবে প্রথম সোচ্চার হন মানিক। তিনি লেখেন ‘সীমান্ত প্রহরী’ শিরোনামের গান। গানটি বিজিবির সৈনিকদের কাছে অঘোষিত থিম সংয়ে পরিণত হয়।

২০২০ সালে মানিকের কথা এবং হাবিব মোস্তফার সুরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়ের ‘আগুনের জুতো পায়ে হাঁটছি’ শিরোনামের একটি গান প্রকাশ হলে বোদ্ধামহলে বিপুল সাড়া জাগে। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতা, রক্তচক্ষু এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বৈষম্যের শিকার হয়েও মানিক থেমে থাকেননি। তিনি একের পর এক গানের কথা ও সুর দিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন। 

এসবের ধারাবাহিকতায় খায়রুল বাবুইয়ের কথায় ‘মানুষ কবে মানুষ হবে?’ নচিকেতার কথায় ‘তুমি কোন পার্টির লোক’ গান প্রকাশিত হয়। দুটি গানেই মানুষের বিবেকহীনতা এবং রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কঠোর শব্দমালা উচ্চারিত হয়।

২০২১ সালে রাষ্ট্রীয় জুলুমের বিরুদ্ধে আলামিন হাওলাদারের কথায় ‘জাগো’ শিরোনামের গান প্রকাশিত হলে বিভিন্ন পক্ষ থেকে হুমকির সম্মুখিন হন আমিরুল মোমেনীন মানিক। ২০২২ সালে প্রকাশিত হয় মানিকের স্ট্যান্ডবাই সং ‘মধ্যবিত্ত চুচু ভাই’। ফেসবুকে এটি ভাইরাল হয় এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠে।

সদ্য বিদায়ী বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে পুনরায় শুরু হয় নানামুখী ষড়যন্ত্র। এ সময় মানিক কণ্ঠে তোলেন ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ/তিতুমীর থেকে আবরার, প্রেরণা দেয় বারবার’। পরবর্তিতে মানিকের গানের এ দুটো লাইন পরিণত হয় জনপ্রিয় স্লোগানে।

ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে নিজের সাংগীতিক লড়াই নিয়ে আমিরুল মোমেনীন মানিক বলেন, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত করতে গত দুই দশক ধরেই নানা অঙ্গনে নানাভাবে বুনিয়াদ তৈরির কাজ করতে হয়েছে। সংগীতে সময়কে ধারণ করতে গিয়ে মানুষের পক্ষে থাকার অব্যাহত চেষ্টা করেছি। গানের কথা ও সুরের নানা অনুসঙ্গ দিয়ে একদিকে মানুষের মধ্যে জাগরণ তৈরি এবং অন্যদিকে, নিপীড়কদের প্রতি ঘৃণা ও দ্রোহ উচ্চারণ করার কাজটি আমরা স্বার্থকভাবে করতে পেরেছি। এটাই বড় সাফল্য।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম