আজ মুক্তি পাচ্ছে সিনেমা ‘নকশীকাঁথার জমিন’, যা বললেন পরিচালক
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫০ এএম
আকরাম খান পরিচালিত ও জয়া আহসান অভিনীত ‘নকশীকাঁথার জমিন’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। আজ থেকে ঢাকায় স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা সিটি, সীমান্ত সম্ভার, সনি স্কয়ার, চট্টগ্রামের বলি আর্কেড শাখা আর কেরানীগঞ্জের লায়ন সিনেমাসে ছবিটি মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এ সিনেমা মূলত একাত্তরে প্রান্তিক দুই নারীর সংগ্রামের গল্প ‘নকশিকাঁথার জমিন’। এ সিনেমায় সংলাপ খুবই কম, নীরবতার ভেতর দিয়েই যাতনা থেকে দ্রোহ, বিপরীত বহু ভাবকে পর্দায় বাঙ্ময় করে তুলেছেন পরিচালক আকরাম খান। গত বুধবার সন্ধ্যায় স্টার সিনেপ্লেক্সের সীমান্ত সম্ভার শাখায় ছবিটির প্রিমিয়ার হয়।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের গল্প ‘বিধবাদের কথা’ অবলম্বনে নির্মাণ করা হয়েছে ‘নকশিকাঁথার জমিন’। এ বিষয়ে নির্মাতা আকরাম খান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় প্রান্তিক নারীর কণ্ঠস্বর খুব একটা উঠে আসে না। আমরা সাধারণত পুরুষদের বীরত্বের গল্পই জানি। সারা পৃথিবীতে যেখানেই যুদ্ধ চলছে, সেখানেই নারীদের সংগ্রাম ও লড়াই রয়েছে। কিন্তু নারীরা স্বীকৃতি পায় না। যাদের কণ্ঠ আমরা শুনতে পাই না, তাদের কথা তুলে ধরার প্রতি আমার আলাদা একটা আগ্রহ রয়েছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি, কোনো না কোনোভাবে চলচ্চিত্রে নারীদের স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সারা পৃথিবীর যুদ্ধের প্রতিবিম্ব এই গল্পের মধ্যে আছে। এ কারণে এটা করার আগ্রহ থেকেই নির্মাণ করেছি ছবিটি।
মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় হাত দেওয়ার আগে পরিচালক বানিয়েছেন ঘাসফুল ও খাঁচা। এ প্রসঙ্গে নির্মাতা বলেন, ভেবেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্রটা একটু পরিপক্ব না হলে করতে পারব না। ফলে তৃতীয় সিনেমায় এসে নির্মাণ করলাম। চলচ্চিত্র একটি সম্মিলিত শিল্পমাধ্যম। সবাই মিলে কাজটা করেছি। আমার ইউনিট মেধাবী ও সৃজনশীল। প্রত্যেকের অবদানে ছবিটি নির্মিত হয়েছে।
নির্মাতার এর আগের দুই চলচ্চিত্রেই সংলাপের বাহুল্য নেই। 'নকশিকাঁথার জমিন'-এও অনেক নীরব দৃশ্য রয়েছে। এটিকে নির্মাতার ‘সিগনেচার স্টাইল’-ও বলা যেতে পারে। এ বিষয়ে আকরাম খান বলেন, অনেক সংলাপ দিয়ে গল্প বলে দেওয়ার চেয়ে ইঙ্গিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পছন্দ করি। ফলে আমার সিনেমায় নীরবতা বেশি থাকে। মুখের অভিব্যক্তি ছাড়াও হাত ও পায়ের মতো অঙ্গের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছি।
নকশিকাঁথার জমিন সিনেমায় আলাদা করে নজর কেড়েছে রাহেলা। চরিত্রটিকে প্রাণ দিয়েছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। মুখে কোনো কথা নেই, চোখের ভাষাতেই বহু কথা বলেছেন তিনি। এ বিষয়ে একটি গণমাধ্যমে জয়া বলেন, ‘চরিত্রটার চোখের পাতা খুব একটা পড়ে না। দুঃখ ভারাক্রান্ত থাকে, চরিত্রটাই সেভাবে নির্মাণ করা হয়েছে।’ রাহেলার বোন সালেহা চরিত্রে অভিনয় করেছেন সেঁওতি। দুই ভাইয়ের চরিত্রে ইরেশ যাকের ও রওনক হাসানকে দেখা যাবে। গুরুত্বপূর্ণ দুই চরিত্রে আছেন দুই ভাই দিব্য জ্যোতি ও সৌম্য জ্যোতি।
উল্লেখ্য, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক নির্মাতা আকরাম খানের। তার গল্প থেকে এর আগে খাঁচা সিনেমা নির্মাণ করেছিলেন তিনি। লেখকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মহামারিকালে নকশিকাঁথার জমিন-এর শুটিং শুরু করেন আকরাম খান। সিনেমার দৃশ্যধারণ শেষ হওয়ার আগেই ২০২১ সালের নভেম্বরে মারা যান হাসান আজিজুল হক। মৃত্যুর আগপর্যন্ত নিয়মিত ছবিটির খোঁজখবর নিয়েছেন। রাহেলা ও সালেহা চরিত্রে কে অভিনয় করছেন, আরও কারা থাকছেন—এসব নিয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন। নির্মাতা বলেন, ‘উনি দেখে যেতে পারলেন না— এটাই আমার কাছে দুঃখের ও আফসোসের।