হলিউড অভিনেত্রী জুডি গারল্যান্ড তার ‘দ্য উইজার্ড অফ ওজ’ সিনেমায় অভিনয়ের সময় পরেছিলেন এক জোড়া রুবি স্লিপারস। সেই জুতাজোড়াই শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের এক নিলামে বিক্রি হয়েছে ২৮ মিলিয়ন ডলারে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৩৫ কোটি টাকা।
নিলামে বিক্রি হওয়া এই জুতাজোড়াই ছিল ওই চলচ্চিত্রের জন্য ব্যবহৃত চার জোড়া জুতার একটি। যেগুলো আগে মিনেসোটা মিউজিয়াম থেকে চুরি হয়েছিল।
এক মাস আগেই নিলামের অনলাইন বিডিং শুরু হয়। তখন ধারণা করা হয়েছিল যে, জুতাজোড়া সর্বোচ্চ ৩ মিলিয়ন ডলার (৩৫ কোটি টাকা) পর্যন্ত বিক্রি হবে। তবে বাস্তবে এটি বিক্রি হয়েছে তার চেয়েও ২৫ মিলিয়ন ডলার বেশি দামে।
নিলামঘর হেরিটেজ অকশনস এই জুতাজোড়াকে ‘হলিউড স্মৃতিচিহ্নের পবিত্র গ্রেইল’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, এটাই নিলামে বিক্রি হওয়া সবচেয়ে মূল্যবান চলচ্চিত্র স্মারক।
রুবি স্লিপারসের ইতিহাস
অভিনেত্রী জুডি গারল্যান্ড যখন ‘দ্য উইজার্ড অফ ওজ’ সিনেমায় ডরোথি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। ১৯৩৯ সালের এই মিউজিক্যাল সিনেমাটি এল. ফ্র্যাঙ্ক বাউমের ১৯০০ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বই দ্য ওয়ান্ডারফুল উইজার্ড অফ ওজ অবলম্বনে নির্মিত।
বইটিতে জুতাজোড়া রূপার তৈরি ছিল। তবে চলচ্চিত্র নির্মাতারা জুতাজোড়াকে লাল রঙে রূপান্তরিত করেন, নতুন টেকনিকালার প্রযুক্তির সুবিধা নিতে।
গল্পে ডরোথি জুতায় তিনবার কড়া নাড়িয়ে ‘There's no place like home’ বলে জাদুর দেশ ওজ থেকে তার বাড়ি কানসাসে ফিরে যান।
জুতাজোড়ার অনন্য ইতিহাস
ওই সিনেমায় ব্যবহৃত চার জোড়া জুতার মধ্যে অবশিষ্ট থাকা এই জুতাজোড়া এখন স্মিথসোনিয়ানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ আমেরিকান হিস্টরিতে প্রদর্শিত হচ্ছে। তবে এই জুতাজোড়ার এক ভিন্ন গল্প রয়েছে।
জুতাজোড়া সংগ্রাহক মাইকেল শ’র মালিকানাধীন ছিল। যিনি সেগুলো জুডি গারল্যান্ড মিউজিয়ামে ধার দিয়েছিলেন। ২০০৫ সালে টেরি জন মার্টিন নামে এক চোর জুতার কেস ভেঙে সেগুলো চুরি করেন। তার ধারণা ছিল, জুতাজোড়া বুঝি আসল রত্নখচিত।
চোর জন মার্টিন যখন একজনের কাছে জুতাজোড়া বিক্রি করতে যান, তখন তিনি জানতে পারেন যে, সেগুলো আসলে কাচের তৈরি। তাই হতাশ হয়ে তিনি জুতাজোড়া অন্য একজনকে দিয়ে দেন।
২০১৮ সালে এফবিআই একটি স্টিং অপারেশনে জুতাজোড়া উদ্ধার করে। তবে চুরি হওয়ার ১৩ বছরের মধ্যে সেগুলো কোথায় ছিল, তা এখনো অজানা।
এদিকে ২০২৩ সালে টেরি জন মার্টিন যখন তার অপরাধ স্বীকার করেন, তখন বয়স ছিল ৭০ এবং তিনি হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতেন। তাকে সময়ের সাপেক্ষে শাস্তি দেওয়া হয়।
এদিকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জুডি গারল্যান্ড মিউজিয়ামের কিউরেটর জন কেলশ তখন বলেন, চুরি হওয়া সত্ত্বেও এগুলো পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, এটিই আমাদের জন্য একটি স্বস্তি।
তিনি আরও বলেন, ‘এর মূল্য রত্নের জন্য নয়, এটি একটি জাতীয় সম্পদ। এটি চুরি করা সত্যিই অবিবেচনাপ্রসূত’। সূত্র: বিবিসি