আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের বীজ বুনেছিল মা: ঋতুপর্ণা
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৯ এএম
সংগৃহীত
টালিউডের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের মা নন্দিতা সেনগুপ্ত মারা গেছেন। দীর্ঘ দিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। শনিবার বিকালে ৩টা নাগাদ বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৭৬।
অভিনেত্রী সেই মাকে নিয়ে স্মৃতিকথা জানালেন আনন্দবাজারে। মাকে হারানোর কষ্ট আর এক বুক ভালোবাসা নিয়েই এ অভিনেত্রী বললেন, মায়ের জোরেই আজ আমি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। মা স্পষ্ট জানিয়েছিল— সব কিছুতে এগিয়ে যেতে হবে তোকে। তিনি বলেন, আজ সেই মা চলেই গেল। আটকাতে পারলাম না। সব কেমন ওলটপালট।
অভিনেত্রী ঋতুপর্ণার কথা সবাই জানে। নন্দিতা সেনগুপ্তের মেয়েকে কতজনই বা জানত! আমার জীবনে এগিয়ে যাওয়া, সফল ভাবে কাজ করা, ভেঙে পড়া, উঠে দাঁড়ানো— সব মায়ের কঠোর সমর্থনে বলে জানান ঋতুপর্ণা।
তিনি বলেন, শুধুই মা। মা আমার দুর্গা। আমার মনের জোর। জন্ম থেকে আমার মধ্যে যে আত্মবিশ্বাসের বীজ বুনে দিয়েছিল, সে মা। তার জেরেই আমি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সব কিছুতে এগিয়ে যেতে হবে আমাকে, এটাই মায়ের স্পষ্ট বার্তা ছিল। তিনি আরও বলেন, মেয়ে বলে আলাদা করে মানুষ করা, এমন কখনো দেখিনি মায়ের মধ্যে।
ঋতুপর্ণা বলেন, মা আচমকাই অক্টোবরের শেষের দিকে হাসপাতালে ভর্তি হলো। আগেও হয়েছে। কিন্তু ফিরে এসেছে। সে কারণেই ভাবলাম, যার এত মনের জোর সে ঠিক ফিরবেই। কিন্তু ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হতে শুরু করল। একদিন মনে হলো কার কাছে যাব? মা বাড়িতে নেই। মা কথাও বলছে না। কাছে যাচ্ছি কিন্তু গেলেও তো জড়িয়ে ধরে সব কথা, সমস্যার কথা বলতে পারছি না। কী করি?
এ অভিনেত্রী বলেন, হাসপাতালে মাকে দেখে রবিনসন স্ট্রিটে মায়ের বাড়ি চলে গেলাম। অস্থির মন। মাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজছি। মন ডুকরে উঠছে। কোথায় মা? কী মনে হলো, মায়ের শাড়ির আলমারি খুললাম। ওখান থেকে আর সরতে পারি না। কত শাড়ি। আমার কত স্মৃতি জড়িয়ে ওই আলমারিতে। আর তখনই মায়ের গন্ধটা পেলাম। মাকে না পেয়ে ওই শাড়িগুলোই ঘাঁটছিলাম আমি। মনটা সেদিন স্থির হলো। যেন মাকেই খুঁজে পেলাম।
তিনি বলেন, তখনো ভাবিনি মাকে হাসপাতালেই শেষ দেখব। বিগত কয়েক দিন ধরে হাসপাতালের ঘেরাটোপে আমার মাকে শুধু কষ্ট পেতেই দেখলাম। আমি কাজের জন্য যেমন নিয়মিত বাইরে যাই, এবার আর যাইনি। দুটো দিন জরুরি কাজ ছিল, তাই যেতেই হলো। বাকি দিনগুলো শহর ছাড়িনি। মনে হতো মায়ের কাছেই আছি।
ঋতুপর্ণা বলেন, ছোটখাটো প্রতিটা সুখ-দুঃখের অনুভূতি মনে পড়ে যাচ্ছিল। স্কুলজীবনে ভোর চারটে নাগাদ আমাকে ঘুম থেকে তুলে দিত মা। আমাকে পড়াত। এত সুন্দর বাংলা লিখতে পারত। মায়ের থেকেই সব শিখেছি আমি। এই কিছু দিন আগেও রবিঠাকুর বা নজরুল মা অনায়াসে আবৃত্তি করতে পারত। সারাটা জীবন দেখে এলাম মায়ের ঘরে রাত তিনটে পর্যন্ত আলো জ্বলছে। মা যেখানেই থাকুক রাতে আগে বই পড়ে তার পরে ঘুম।
তিনি বলেন, রবীন্দ্রসংগীত মা খুব ভালোবাসত। অন্য গানও ভালোবাসতো। আমার ছোটবেলা মায়ের সঙ্গে খুব আনন্দে কেটেছে, নিশ্চিত আশ্রয়ের কোল, আমার মায়ের কোল। ছোট বয়স থেকেই মা শিখিয়েছিল, যার যা নেই আমার থাকলে তাকে সেটি দিতে হয়। তখন থেকেই সামাজিক সচেতনতার বোধ তৈরি হয়েছিল আমার মধ্যে। তাই কিছু যদি দিতে পারি কাউকে, আমার খুব আনন্দ হয়। মা বুঝিয়ে দিয়েছিল দায়িত্ববোধ কী। এগুলো নিয়ে চলতে চলতেই জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়।
এ অভিনেত্রী বলেন, বকাও খেতাম খুব মায়ের কাছে। বড় হয়েও সেসব চলত পুরো মাত্রায়। খাবার নষ্ট করলে খুব রেগে যেত মা। আমার ছেলেমেয়েদেরও একই শিক্ষা দিয়েছে আমার মা।
তিনি বলেন, সব গুলিয়ে যাচ্ছে আমার। কোনো কথা বলতেই ভালো লাগছে না। এখন মায়ের কোলে মাথা রেখে একলা বড় একটা আকাশের তলায় যদি চলে যেতে পারতাম! কার কাছে পরামর্শ নিতে যাব আমি? কে বলবে—তুই কাজ করে যা, সব ঠিক হয়ে যাবে, ভেঙে পড়বি না! কার সঙ্গে মন খুলে ঝগড়া করব?