টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য। ছোটপর্দার এ অভিনেত্রী বড়পর্দাতেও সফল। পর্দায় তার সরব উপস্থিতি নজর কাড়ে দর্শকদের। অভিনয় দক্ষতা তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু ইদানীং বারবার সেই চেনা ইমেজ ভেঙেচুরে একেবারে নতুনভাবে ধরা দিচ্ছেন অপরাজিতা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি তার জীবনের নানা মুহূর্তও তুলে ধরেন ভক্তদের মাঝে। সেখানে প্রশংসার পাশাপাশি কটাক্ষের শিকারও হন এ অভিনেত্রীকে। সম্প্রতি একটি পোস্ট দিয়ে কটাক্ষকারীদের জবাব দিয়েছেন অপরাজিতা।
তিনি লিখেছেন— দিল তো বাচ্চা হ্যা জি! বলা যতটা সহজ, নিজের অন্তরের শিশুকে বাস্তবিকভাবে লালন করে চলা আসলে ততটাই কঠিন! সমাজতত্ত্বে, মনস্তত্ত্বে শিশুসুলভতার মধ্যে যে পবিত্রতা, যে মমত্ব লিখিত ও প্রমাণিত সত্য, তাকে বাস্তবিকতায় আলিঙ্গন করতে গেলেই রে রে করে উঠবে চারপাশ, ঘটে যাবে অনর্থ । তিনি বলেন, কথায় বলে— যা কিছু তাত্ত্বিক, তা বইয়ের পাতাতেই ভালো! জীবন সাধারণ ছাপোষা নিয়মে বাঁচাই শ্রেয়, আর সেটি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্যই সত্যি। এবার নারী যেহেতু সবকিছুতেই দ্বিতীয়ত, আর সেটা নিয়ে সামাজিকতায় কোনো প্রশ্ন নেই, কাজেই এ ক্ষেত্রেও যে নারীর ওপর হম্বিতম্বি একটু বেশি হবে, সেটিই তো স্বাভাবিক!
অপরাজিতা বলেন, পূর্ণবয়স্ক নারী, তিনি হতেই পারেন ব্যাংক কর্মী, শিক্ষিকা, গবেষক, শিল্পী, গৃহবধূ, কিন্তু তিনি যাই হোন না কেন, তিনি যদি নিজের শিশু সুলভতার ভিত্তিতে জীবনের ইঁট গুলো প্রতিস্থাপন করতে চান, বা করেন, তিনি হয়ে যাবেন ন্যাকা, আল্লাদি, বেহায়া, ঢঙি, ইত্যাদি ইত্যাদি । তা তখন তার নাম অপরাজিতা আঢ্য হোক বা আনোয়ারা বিবি, নিতান্ত ন্যাকা ছাড়া তাকে সমাজ আর কোনো নামেই ডাকবে না ।
তিনি বলেন, পরিবারের ভিতর “তুমি বড্ড ছেলেমানুষ!” “বাচ্চাদের মতো করো না!” থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে “বিশ্বন্যাকা” “একেবারে অসহ্য! কচি খুকি!” শুনতে শুনতে অভ্যস্ত আমি মাঝে মাঝে ভাবি, আমার উপর তো এত মানুষের আশীর্বাদ, আমিই যদি এত শুনি, না জানি অসাধারণভাবে সাধারণ নারীদের আরও কি কি শুনতে হয়, যা কানে নেওয়ার নয়, তা না নেওয়াই শ্রেয় জানি। তবু যার কাছে সেটা ছাড়া আর কোনো উপায়ই অবশিষ্ট নেই, তাদের যন্ত্রণার কথা ভাবলে শিশু দিবস আপাদমস্তক ব্যর্থ লাগে!
এ অভিনেত্রী বলেন, আর রইল বাকি সেই সমস্ত মানুষের কথা, যাদের বয়সে বড় হলেও, মন থেকে বড় হওয়ার সৌভাগ্য দেননি ঈশ্বর, তাদের পাগল দাগিয়ে দেওয়া ছাড়া কি বা করলাম আমরা, যা কিছু সংখ্যালঘুর, তাই পাগলামি বলে দাগিয়ে দেয় সমাজ । কেউ তাদের ভেতরের শিশুর দিকে তাকায় না, তাদের বাবা-মায়ের যন্ত্রণার কথা ভাবে না।
তিনি বলেন, আমার মা চিরকাল বলে গেলেন— আমার ছেলে যেন আমার সঙ্গেই চলে যায়! দাদার মানসিক ভারসাম্য তার কাছে এতই মর্মভেদী ছিল যে, শেষ দিন পর্যন্ত মানুষটাকে সমাজ যন্ত্রের কাছে মনে মনে মাথা নোয়াতে হলো । তবে আর শিশু দিবস পালন করে কি জিতে নিলাম আমরা । কি পারলাম? পাউডার ক্রিমে আবৃত ঝকঝকে শিশু মুখের দিকে তাকিয়ে আদরে ঢলে পড়লাম, পথেঘাটে থাকা নাক দিয়ে সিকনি গড়ানো শিশুদের দিকে ঘুরেও দেখলাম না । শিশুত্বের দিকে আঙুল তুলে ন্যাকা বা পাগল বলতেও দ্বিধা বোধ করলাম না, আর শিশুদিবস টা বেমালুম চলে গেল ।
অপরাজিতা বলেন, এখন কেউ কেউ বলতেই পারেন— আপনিই বা কেন লিখছেন? আপনি কি করেছেন?! তাদের বলি, সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই তাই লিখ— আরও না হয় একটু বেহায়া কচি খুকি হলাম,তাতে আমার শিশুসুলভ মন কিন্তু আনন্দই পাবে। অন্তরের শিশুর চোখ দিয়ে দেখুন, নিষ্পাপ মুক্তির কামনায় আপনারও একটি বার বেঁচে নিতে ইচ্ছা করবে।’’