দেবকে পেতে চান চয়নিকা
ভারতের ছবিও দেখেন চয়নিকা চৌধুরী। শাহরুখ খানের ‘কভি খুশি কভি গম’ তার প্রিয়। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধাঙ্গিনী’ তাকে কাঁদিয়েছে।
বিনোদন জগতের শুরুটা ছিল ২০০১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। ‘শেষবেলায়’ টেলি-নাটকের মধ্য দিয়ে ঢালিউডে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন চয়নিকা চৌধুরীর। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ছোটপর্দার অন্যতম জনপ্রিয় কাহিনিকারও তিনি।
আনন্দবাজার অনলাইনের এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী বলেছেন, একদিনের জন্য তিনি পরিচালনায় বিরতি নেননি। ২৪ বছরের পরিচালনার পর ঝুলিতে ৪০০-রও বেশি নাটক, তিনটি ছায়াছবি করেছেন। তিনি বলেন, শিগগিরই শুরু করবেন চতুর্থ ছবি ‘সখা সোলমেট’-এর শুটিং। পরিচালক বলেন, বুধবার সকাল থেকেই তিনি স্মৃতিমেদুর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতীত বিহার করেছেন। প্রথম দিনের কথা মনে পড়ে?
তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা পঙক্তি আজ খুব মনে পড়ছে। কবিগুরু লিখেছিলেন—মনে রে আজ কহো যে/ ভাল-মন্দ যাহাই আসুক/ সত্যেরে লও সহজে’। সেই অনুভূতি থেকে বলতে পারি, আমি ভাগ্যবান। দুটো যুগের সাক্ষী আমি। নতুন-পুরোনো সময়ের সব ভালো গ্রহণ করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, পরিচালকের ছাত্রদশা এখনো ঘোচেনি। পাশাপাশি ভোলেননি প্রথম দিকের লড়াই। চয়নিকার মনে আছে— একে নারী পরিচালক। তার ওপরে আনকোরা। তার প্রথম নাটকে তাই কোনো নায়ক অভিনয় করতে চাননি! তিনি বলেন, আমি অবশ্য সেই অনুভূতি ধরে রাখিনি। তবে শিক্ষা নিয়েছি এ ঘটনা থেকে। এ ধরনের লড়াই তাকে আরও জেদি করেছে। তিনি পেশাজীবনকে আরও আঁকড়ে ধরেছেন।
কলকাতার বাংলা ছবির মতো বাংলাদেশেও বাণিজ্যিক আর সমান্তরাল ধারার ছবি বানানোর চল রয়েছে। চয়নিকা কোন ধারায় স্বচ্ছন্দ?—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ২৪ বছর ধরে পরিচালনার পর আমি নিজেকে ‘মিশ্র’ বলতে ভালোবাসি। নিজের কথার পক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন তিনি। এ পরিচালক বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মেলানো সবসময় দরকার। তার মানে এই নয়, তিনি গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসাতে ভালোবাসেন। তার ছবিতে অতীত আর আধুনিকতা হাত ধরাধরি করে জায়গা করে নেয়। চয়নিকা বলেন, আগেকার পারিবারিক গল্পের সঙ্গে এই প্রজন্মের ভাবনা মিলিয়ে তাই ছবি বানানোর চেষ্টা করি।
চয়নিকা বলেন, আমার সময়ে ‘নয়নমণি’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘বসুন্ধরা’-র জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিল। এখন ‘তুফান’, ‘রাজকুমার’ দেখছি। আমার কিন্তু খারাপ লাগছে না। কারণ আমরা এখন হইচই, নেটফ্লিক্স, হটস্টারের মতো ওয়েব প্ল্যাটফর্ম দেখি। ফলে বাংলাদেশের ছবির গতিও আগের তুলনায় এখন অনেক দ্রুত। একইভাবে তিনি ভারতের ছবিও দেখেন। শাহরুখ খানের ‘কভি খুশি কভি গম’ তার প্রিয়। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধাঙ্গিনী’ তাকে কাঁদিয়েছে।
চয়নিকা উচ্ছ্বসিত দেবকে নিয়ে। তিনি বলেন, টালিউডে আমার পছন্দের একগুচ্ছ মানুষ আছেন। সবসময়ের প্রিয় উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেনের ছবি। ভালো লাগে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, রেখা, কাজল, মাধুরী দীক্ষিতকে। কিন্তু দেবকে কী যে ভালো লাগে! ওর মধ্যে নায়কের সব গুণ রয়েছে। খুব আপন মনে হয় ওকে। দেবকে নিয়ে একটা প্রেমের ছবি বানানোর স্বপ্ন দেখি। লোকে বলে, আমি নাকি প্রেমের গল্প খুব ভালো বানাতে পারি। এ পরিচালক বলেন, তিনি এর আগে টালিউডে যৌথ পরিচালনার ডাক পেয়েছিলেন। তখন ব্যস্ততার কারণে সাড়া দিতে পারেননি। এবার তিনি একা একটি ছবি পরিচালনা করতে চান। দেবের বিপরীতে বেছে নিতে পারেন তার দুই ‘মানসকন্যা’ পরীমনি কিংবা বুবলীকে। তিনি বলেন, আমার প্রথম মেয়ে যেমন দেখতে, তেমনই মিষ্টি স্বভাবের। দ্বিতীয় জন দুর্দান্ত পেশাদার।
দীর্ঘ পথ পেরিয়ে চয়নিকা বুঝতে শিখেছেন— কিছু মানুষ চলার পথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। কিন্তু কাজ কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করে না। আজীবন সঙ্গে থেকে যায়। দীর্ঘ দিন থেকে যায় মানুষের অন্তরে।