কাল রাতে মরেও যেতে পারতাম, তবুও আমি থামব না: ঋতুপর্ণা
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৮ পিএম
ছবি : সংসৃহীত
পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে বুধবার রাত দখলের কর্মসূচিতে নেমেছিল কলকাতাবাসী। আর সেই কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়েই হেনস্তার শিকার হয়েছেন টালিউড অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
কলকাতার শ্যামবাজারের ওই কর্মসূচিতে গিয়ে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় অভিনেত্রীকে। গাড়ি থেকে নামতেই শোনা যায় ‘গো ব্যাক, গো ব্যাক’ স্লোগান। তারপরও তিনি প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে দ্রুত অভিনেত্রীকে গাড়িতে তোলেন তার দেহরক্ষীরা।
এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে ঋতুপর্ণা জানান, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আন্দোলনে যোগ দিতে এসেছেন তিনি। কিন্তু কেন এমন বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল তাকে, তা স্পষ্ট নয়।
ঋতুপর্ণা বলেন, চার পাশ থেকে উলুধ্বনি এবং শঙ্খ বাজিয়ে ব্যঙ্গ। এতে কিছু মনে করেছি, এমন নয়। কিন্তু তারপর গাড়িতে জুতা ছোড়া হল। তখন আমি দরজা খুলে বলি আপনারা এমন করবেন না। আপনাদের সঙ্গে কথা বলতেই এসেছি, বসতে এসেছি। কিন্তু কেউ কোনো কথাই শুনলেন না। আসলে আমার মনে হয়, কিছু মানুষ প্রতিবাদের কথা মাথায় না রেখে, হুজুগে চলে গিয়েছিলেন জমায়েতে। বুঝতে পারছি, সকলেই ক্ষুব্ধ।
তবে কলকাতার প্রতিবাদী চেহারার মধ্যে এই চেহারাটা দেখে আমি লজ্জিত, আহত, কম্পিত।
তিনি বলেন, বুধবার রাতে আমার প্রাণটাও চলে যেতে পারত। আমি একজন অরাজনৈতিক, নিরপেক্ষ মানুষ হিসাবে, একজন মহিলা হিসাবে অন্য মহিলার পাশে দাঁড়াতে এসেছিলাম। কিন্তু বিরাট সংখ্যক মদ্যপ এই ঘটনা ঘটাল। আচমকাই একটা জনস্রোত ধাক্কা দিতে শুরু করল। এত চিৎকার হচ্ছিল যে, কারও কোনো কথা শুনতে পাচ্ছিলাম না। আমি তো কাল কোনও তারকা হিসাবে নয়, মানুষ হিসাবে গিয়েছিলাম। যেখানে ঘটনাটা ঘটল, সেখানে নিহত চিকিৎসকের মা-বাবাও এসেছিলেন। ভেবেছিলাম, একবার দেখা করব তাদের সঙ্গে।
ওই রাতে আমি একা তো নয় সোহম, শোলাঙ্কিরাও ছিল। গান গাইছিল ওরা। আমি ওদের সঙ্গে মিশে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এমন কিছুর সাক্ষী হব, ভাবতে পারছি না এখনও।
আমি তো রাজনৈতিক ব্যক্তি নই তাও কেন এমন আক্রোশের শিকার হলাম উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী বলেন, কারণ বুঝতে পারলাম না কেন এই আক্রোশ। আমি তো রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। আমি এই শহরের সকলের সঙ্গে রাত জাগতে গিয়েছিলাম। ওই ভিড়ের মাঝে ‘চটিচাটা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে আমাকে। এমন অসভ্যতা। আসলে যারা এটা করলেন তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য আন্দোলন করা নয়। একজন তারকাকে হেনস্তা করা। কাউকে পাচ্ছেন না, সামনে ঋতুপর্ণা ছিল ব্যস, ঝাঁপিয়ে পড়লেন। আমাকে অনেকেই বলেছিলেন জমায়েতে শামিল না হতে। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম মানুষ হিসাবে সঙ্গে থাকব। এমন নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটল, এখনও ঘোর কাটছে না।
আন্দোলনকারীদের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করতে চাই আমার সমবেদনা জানানো কি অন্যায়? একটি মেয়ের হয়ে তারা আন্দোলন করছেন আর অন্য একজন নারীকেই হেনস্থার শিকার হতে হল! আসলে হয়ত এই মানসিকতা আমাদের বর্বরতার দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।