দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশ কিছু দিন ধরে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলন করছেন। এ আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে কথা বলেছেন একুশে পদক পাওয়া ও পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী।
তিনি বলেন, কদিন ধরে ঘুমাতে পারছি না। নানা এলোমেলো স্মৃতি, চিন্তা মস্তিষ্ককে ক্রিয়াশীল করে রাখছে। কিছুতেই স্বাভাবিক থাকতে পারছি না।
একটি হিন্দি গানের কয়েকটি চরণ মনে করে তিনি বললেন, এটা কী হলো, কী করে হলো, কেন হলো, যা হবার হয়েছে, যেতে দাও...।’ না— যা হবার হয়েছে, যেতে দাও বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। আমাদের এ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। সন্দেহ নেই দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সন্তান হারানো প্রত্যেক বাবা-মায়ের প্রতিটি অশ্রুফোঁটার মূল্য দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ ও সমাজের সর্বক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাসের প্রতিফলনই হতে পারে এই মূল্য পরিশোধ করতে।
সৈয়দ হাদী বলেন, কদিন ধরে সেই দৃশ্য এবং সেই সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অকুতোভয় তরুণ শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্যটি এসে ভিড় করে। হৃদয় কেঁদে ওঠে, ঘুম চলে যায়। মাথার ভেতর প্রশ্ন এসে পীড়া দেয়, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও এই দৃশ্য দেখতে হলো?
তিনি বলেন, কী অপরাধে এতগুলো তরুণ প্রাণকে বাবা-মায়ের বুক শূন্য করে অকালে ঝরে যেতে হলো। আমার দীর্ঘ জীবনে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া এমন মৃত্যুর মিছিল তো দেখিনি। এটা তো আমেরিকার গৃহযুদ্ধও নয় বা ফরাসি বিপ্লবও নয়।
অতীতের কথা স্মরণ করে সৈয়দ আব্দুল হাদী বলেন, একসময় আমার বন্দুক দিয়ে পাখি শিকার করার খুব শখ ছিল। একবার আমি ও কাদেরি কিবরিয়া (রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী) ভোলার এক দুর্গম জায়গায় রাজহাঁস শিকার করতে গেলাম। দুটো রাজহাঁস দেখতে পেলাম। গুলি করলাম। একটি পড়ে গেল, অপরটি দাঁড়িয়ে রইল। পাখিটাকে আনতে এগিয়ে গেলাম কিন্তু তার সঙ্গী পাখিটি দুই ডানা বিস্তার করে আগলে রাখল। কিবরিয়া বন্দুক তাক করল মারার জন্য। তাকে সঙ্গে সঙ্গে থামতে বললাম। এমন ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও সাহস মনুষ্য সমাজেও বিরল। এ দৃশ্য আমি আজও ভুলিনি। সেদিন থেকে আমিও শিকার করা ছেড়ে দিলাম।