‘কেউ কুপ্রস্তাব দিলেও উত্তরে আমি কী বলব তা সবাই জানে’
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৪, ০১:৫৮ পিএম
টালিউড অভিনেত্রী ঋত্বিকা সেন শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। আঠারো পেরোনোর আগেই বাণিজ্যিক সিনেমায় সফল এ অভিনেত্রী। নজর কেড়েছিলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘শাহজাহন রিজেন্সি’ ছবিতেও। এর পরও ঋত্বিকা সেন টালিউড থেকে কীভাবে যেন হারিয়ে গেলেন।
কেন এত কম দেখা যাচ্ছে? টালিউডে সেই ছোট থেকে কাজ করার পরও কি আপনার কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হয়নি? এ প্রশ্ন আসতেই অভিনেত্রী বলেন, আসলে সহকর্মীরা কখনো বন্ধু ছিল না। যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, ভালো সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু বন্ধু শব্দটা আমার কাছে অনেক বড়। ইন্ডাস্ট্রির বাইরে আমার বেশ কয়েকজন বন্ধু রয়েছে। তাদের সঙ্গে দেখা হলে খুব ভালো সময় কাটে। সেই সঙ্গে এ কথাও জানান এ অভিনেত্রী, মনের মতো সঙ্গী খুঁজে পাওয়ার আগে নিজে আরও একটু পরিণত হতে চান। আপাতত কাজ ও পড়াশোনায় মন দিতে চান তিনি।
‘বরবাদ’ এর মতো বাণিজ্যিক ছবিতে কাজ করেছেন। অন্যদিকে অপর্ণা সেনের পরিচালনায় ‘আরশিনগর’। কিন্তু সেই তুলনায় তার হাতে এখন কাজ খুব কম; কিন্তু কেন? আনন্দবাজারের এক সাক্ষাৎকারে ঋত্বিকা বলেন, এই প্রশ্নটা আমাকে কেন করছেন? আরও তো অনেককেই সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। তা ছাড়া পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ঋত্বিকা বলেন, এরকম প্রশ্ন বোধহয় চলচিত্র জগতের নির্মাতাদের করা উচিত, তাই না? বাংলায় আরও ভালো কাজ হওয়া দরকার। সেই ধরনের ছবি হচ্ছে কোথায়? তেমন কোনো কাজের প্রস্তাব পেলে নিশ্চয়ই করব। ভালো গল্প সেভাবে তো দেখতেই পাচ্ছি না। বহুদিন পর একটা ভালো ছবি দেখলাম— ‘অযোগ্য’। একটা সময় মানুষ ছবির জন্যই বাঙালিকে চিনত। সেই জায়গায় এখন বাঙালি অভিনেতাদের ভালো কাজের সুযোগ কমেছে তো বটেই।
তিনি বলেন, ভেবেচিন্তে বাংলা ছবি থেকে দূরে থাকছেন— এমন নয়। দক্ষিণের ছবিতে কাজ শুরু করার পর বাংলায় কম সময় দিতে পারছেন। কিন্তু বাংলায় কাজ করতেই তিনি বেশি আগ্রহী।
বাংলা ছেড়ে দক্ষিণের ছবিতে যাওয়ার কারণ কী— এমন প্রশ্ন ঋত্বিকা বলেন, দুটি ইন্ডাস্ট্রি প্রায় একই রকম। ভাষাটা শুধু আলাদা। তবে হ্যাঁ, পারিশ্রমিক ওখানে অনেক বেশি। এতে লুকানোর কিছু নেই। বাংলার শিল্পীরা সত্যিই খুবই প্রতিভাবান। পেশাদারিত্বের বিষয়ে অবশ্য কিছু বলতে পারব না। তিনি আরও বলেন, আমার কাছে দক্ষিণে কাজ করার প্রস্তাব এসেছিল। গল্প ও চরিত্র ভালো লেগেছিল বলে আমি রাজি হই। যদিও ওখানে আমি বাংলারই প্রতিনিধিত্ব করি। আমায় সবাই বাঙালি অভিনেত্রী হিসেবেই চেনেন।
কলকাতার পরিচালকরা কি তা হলে ঋত্বিকাকে নিয়ে ভাবেন না— এ প্রশ্নে অভিনেত্রী বলেন, আমরা অভিনেত্রী। তাই ভিন্ন চরিত্র ভিন্নভাবে তুলে ধরাই আমাদের কাজ। চরিত্র নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে না পারলে আর কী করলাম! তবে বহুদিন পর মনের মতো একটা চরিত্র পেয়েছি। ‘মহরৎ’ ছবিতে একজন সাংবাদিকের চরিত্রে দেখা যাবে আমাকে।
ঋত্বিকা বলেন, আমার মনে হয় বয়সের তুলনায় আমি যথেষ্ট বেশি কাজের সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু দর্শকের মনে হয়, আমার আরও বেশি কাজ করা উচিত। দর্শক যে আমাকে নিয়ে ভাবে, এটি তো আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আমি ‘বরবাদ’ ছবিতে অভিনয় করেছিলাম। কেউ এটা বিশ্বাস করে না যদিও। তবে হ্যাঁ, এমন কিছু চরিত্রও রয়েছে, যেগুলো দেখে মনে হয়েছে— আমি করতে পারলে ভালোই হতো।
‘আরশিনগর’-এ দেবের সঙ্গে কাজ করেছেন ঋত্বিকা। দেবের প্রযোজনা সংস্থা থেকে আর ডাক আসে না—এমন প্রশ্নে ঋত্বিকা হেসে বললেন, আরশিনগরে আমায় একটুও মেকআপ করতে দেওয়া হয়নি। মেকআপ করতে দিলে হয়তো বয়স আরেকটু বেশি লাগত। তখন খুব কম বয়স ছিল। দেবদা সুপারস্টার। কিন্তু আমারও দেখে মনে হয়েছিল, হয়তো বয়সের ব্যবধান একটু বেশি লেগেছে। কিন্তু চিত্রনাট্যের খাতিরে যদি বয়সের সেই ব্যবধান প্রয়োজন হয়, তা হলে আবার কাজ করব।
টালিউডে পার্টিতে সেভাবে কখনো ঋত্বিকাকে দেখা যায় না। এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, আমি পার্টি করতে ভালোবাসি না। নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে সবচেয়ে ভালো লাগে। তবে হ্যাঁ, মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ভালোবাসি। মাঝে মধ্যে বাধ্য হয়েছি কিছু পার্টিতে যেতে। তবে এখন মানুষকে না বলতেও শিখেছি।
‘না’ বলতে না জানলে তো ইন্ডাস্ট্রিতে নানা রকমের প্রস্তাবের সম্মুখীন হতে হয়? এমন প্রশ্নে ঋত্বিকা বলেন, সদ্য ‘না’ বলতে শিখছেন। তবে বরাবরই নিজের চারপাশে একটা অদৃশ্য ঢাল রেখে চলেন। তিনি বলেন, আমি অনেক ছোট থেকে কাজ করছি। আমায় অনেকেই তাই চেনেন। নতুনদের কাছে হয়তো ‘কাস্টিং কাউচ’-এর প্রস্তাব আসতে পারে। কিন্তু আমায় এ ধরনের প্রস্তাব দিলে আমি কী উত্তর দিতে পারি, তা সবাই জানা। সেই জন্য আমায় কেউ এ ধরনের প্রস্তাব দেন না।
পছন্দের সহ-অভিনেতাদের প্রসঙ্গ আসতেই দেব, আবীর চট্টোপাধ্যায় ও অঙ্কুশ হাজরার নাম উল্লেখ করেন ঋত্বিকা সেন। তবে এক সহ-অভিনেতার সঙ্গে তার তিক্ত অভিজ্ঞতাও আছে বলে জানান এ অভিনেত্রী। নাম না বলে ঋত্বিকা বলেন, দর্শক আমাদের জুটিকে পর্দায় দেখে পছন্দ করেছে ঠিকই; কিন্তু পছন্দের সহ-অভিনেতাদের মধ্যে ওর নাম নিতে চাই না। ওই কাজের সময়ে আমি খুবই ছোট ছিলাম। তখনই আমার নামে এমন কিছু গুজব রটানো হয়, যা আমার ভালো লাগেনি।
কাজের অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ উঠতেই ঋত্বিকা বলেন, অপর্ণা সেনের পরিচালনায় কাজ করা তার কাছে বিরাট প্রাপ্তি। মানুষ হিসেবেও তার থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তাই ভবিষ্যতেও আবার তার সঙ্গে কাজ করতে চাই। কৌশিকদার সঙ্গেও কাজ করতে চাই।