সাত বছর সম্পর্কে থাকার পর অবশেষে বিয়ে করেছেন বলিউড অভিনেত্রী সোনাক্ষী সিনহা ও জাহির ইকবাল। গত ২৩ জুন এ তারকা জুটি আইনি মোতাবেক বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। এর পর রিসেপশনের আয়োজন হয়। এর মাঝেই নবদম্পতিকে নেটিজেনদের মধ্যে শুরু মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিয়ের কয়েক দিন যেতে না যেতেই হাসপাতালে দেখা যায় সোনাক্ষী-জাহিরকে, যার ফলে গুঞ্জন শুরু হয় যে, সোনাক্ষী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার জন্যই নাকি তড়িঘড়ি বিয়েটা সেরে ফেলেছেন এ অভিনেত্রী।
আসন্ন ছবি 'কাকুদা'র প্রচারে গণমাধ্যমে কথা বলেন সোনাক্ষী। সেখানে বিয়ে থেকে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার গুজন নিয়ে মুখ খুললেন তিনি।
এ অভিনেত্রী দাম্পত্য জীবন প্রসঙ্গে বলেন, এর চেয়ে ভালো জীবন আর কখনো ছিল না। তবে মজার ব্যাপার হলো— আমার অনুভূতিটা আগের মতোই আছে। আমি খুশি যে বিয়ের আগে আমার যে জীবন ছিল, এখনো সে রকমই আছে। আর কাজে ফিরতে পেরে আমি ভীষণ খুশি।
অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে সোনাক্ষী বলেন, ‘একমাত্র পরিবর্তন হলো— আমি এখন হাসপাতালে যেতে পারি না। কারণ আমি হাসপাতালের বারান্দায় পা রাখলেই সবাই মনে করেন আমি গর্ভবতী’।
সোনাক্ষী ও জাহির হাসপাতালে যাওয়ার সময় অনেকেই ভেবে নেন সোনাক্ষী অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু নেটিজেনরা জানেন না আদতে সোনাক্ষীর বাবা শত্রুঘ্ন সিনহা জ্বরে আক্রান্ত। তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
এ বিষয়ে তৃণমূল সংসদ সদস্য সিনহাপুত্র লব সিনহা পিটিআইকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমার বাবার প্রচণ্ড জ্বর ছিল এবং আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যাতে তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। আমি প্রতিদিন সেখানে (হাসপাতালে) যাচ্ছি, তাই আমি আপনাকে বলতে পারি যে, এখনো অস্ত্রোপচার হয়নি।
এদিকে সোনাক্ষী সিনহা ও জাহির ইকবালের বিয়ে নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। বিয়ের দিন রিসেপশেন দেখা যায়নি অভিনেত্রীর দুই ভাই লব সিনহা ও কুশ সিনহার। এ নিয়ে চারদিকে সমালোচনা শুরু হয়। বিয়েতে এসেছিলেন শত্রুঘ্ন সিন্হাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। এ নিয়ে নেটিজেনদের মাঝে মিশ্র সমালোচনা হয়।
নানা রকম সমালোচনার মাঝে অবশেষে মুখ খুললেন লব সিন্হা। সামাজিকমাধ্যমে একটি পোস্ট করে সোনাক্ষী ও জ়াহিরের বিয়ে নিয়ে কথা বলেন তিনি। লব সিনহা বলেন, এত সমালোচনা সত্ত্বেও পরিবারের প্রতি তার ভালোবাসা কোনোভাবেই কমবে না। পরিবারই তার কাছে প্রাথমিক বিষয়।
কেন তিনি বিয়েতে উপস্থিত থাকেননি জানিয়ে লব সিনহা লিখেছেন— কেন আমি বিয়েতে উপস্থিত থাকিনি, এটিই হলো প্রশ্ন! আমার বিরুদ্ধে কিছু মিথ্যে কথা প্রচার করে কোনো লাভ নেই। আমার কাছে সব সময় আমার পরিবারই অগ্রাধিকার পাবে।
এমন প্রশ্ন সোনাক্ষীর আরেক ভাই কুশ সিনহাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সেই সময় লব বলেছিল— ‘দু’একটা দিন সময় দিন। আমার যদি মনে হয়, তা হলে আমি নিশ্চয়ই এই প্রশ্নের উত্তর দেব।
বিয়েতে আসেন শত্রুঘ্ন সিনহা। বাবা হিসেবে মেয়ের বিয়েতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়বেন এটাই স্বাভাবিক। সিনহা পরিবারের নয়নমণি সোনাক্ষী সিনহা। মা-বাবার চোখের মধ্যমণি। তাই বিয়ের দিনে বাবা শত্রুঘ্ন সিনহা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। কন্যার জীবনের নতুন ইনিংসে যেমন তিনি উচ্ছ্বসিত, তেমনি চাপাকান্না বুকে কষ্ট।
নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্ট ‘অওরিয়েত’-এ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের সাক্ষী রেখে আইনি বিয়ে সারেন সোনাক্ষী সিনহা ও জাহির ইকবাল। পরনে নবদম্পতির দুধ সাদা পোশাক। মেয়ের পাশেই হাসিমুখে দাঁড়িয়েছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। সেই অনুষ্ঠানে প্রবীণ অভিনেতা বললেন, ‘মেয়েকে পছন্দের পাত্রের হাতে তুলে দেবেন বলে সব বাবাই এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। জাহিরের সঙ্গে আমার মেয়েকে সব থেকে বেশি খুশি থাকতে দেখেছি। তারা সুখে থাকুক, এ প্রার্থনাই করি।
জাহির ইকবালের প্রশংসায় পঞ্চমুখ শত্রুঘ্ন সিনহা বলেন, ‘গুড বয়’ জাহির। খুব ভালো ছেলে। আমার মেয়েকে ভালো রাখবে ও…।
তিনি আরও বলেন, ৪৪ বছর আগে আমি একজন সফল, সুন্দরী ও ভীষণ ট্যালেন্টেড একটি মেয়েকে নিজের পছন্দে বিয়ে করেছিলাম। সে হচ্ছে পুনম সিনহা। আজ আমার মেয়ে সোনাক্ষীর পালা। ওর পছন্দই আমাদের পছন্দ। ওর নিজের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার এই সিদ্ধান্তকে আমি পূর্ণ সমর্থন করি।
উল্লেখ্য, এর আগে সোনাক্ষী-জাহিরের বিয়ের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে আসতেই শোনা গিয়েছিল শত্রুঘ্ন নাকি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি বলেছিলেন— এই প্রজন্মের সন্তান কারও অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। ওরা শুধু নিজেদের সিদ্ধান্ত জানায়। সেই থেকেই জল্পনার সূত্রপাত যে, জামাই হিসেবে জাহির ইকবালকে হয়তো পছন্দ নয় শত্রুঘ্ন সিনহার তাই এমন কথা বলেছিলেন! তবে বিয়ের দুদিন আগেই নিন্দুকদের ‘চুপ’ করে দিয়ে জাহির ইকবালকে বুকে টেনে নেন শত্রুঘ্ন সিনহা।
সূত্র: আনন্দবাজার