ছবি: সংগৃহীত
শাহরুখ ভক্তদের পছন্দের সিনেমার প্রথম সারিতে রয়েছে ‘ম্যায় হুঁ না’,কিন্তু জানেন কি এই ছবিতে কিং খানের ভাইয়ের ভূমিকায় অভিনয় করার কথা ছিল হৃতিক রোশনের। কোরিওগ্রাফার তথা পরিচালক ফারাহ খান বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
ফারাহ খান জানান, প্রথমে ‘ম্যা হুন না’ ছবিতে শাহরুখ খানের সঙ্গে অভিনয় করার কথা ছিল হৃতিক রোশানের, কিন্তু বলিউড বাদশার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার বিষয়ে খুব নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন হৃতিক।
তিনি জানান, ‘কাহো না পেয়ার হ্যায়’ করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন হৃতিক। তারপর এই দুই অভিনেতাকে নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। খবর আসতে থাকে তাদের মধ্যে নাকি একটা ঠান্ডা লড়াই চলছে, হৃতিক নাকি শাহরুখের জায়গা নিতে পারেন। কিন্তু এই সব কিছুকে নস্যাৎ করে করণ জোহরের সহযোগিতায় শাহরুখ ও হৃতিককে ২০০১ সালে ‘কাভি খুশি কাভি গম’- এ দুই ভাইয়ের ভূমিকায় দেখা যায়।
তবে ‘ম্যায় হুঁ না’-এর গল্পটা একটু আলাদা। রেডিও নাশাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিষেক বচ্চনের ‘ম্যায় হুন না’- তে ‘লক্ষ্মণ’-এর চরিত্রটি করার যে গুঞ্জন ছড়িয়ে ছিল তা সত্যি কিনা ফারহা খানের কাছে জানতে চাওয়া হলে, পরিচালক জানান, হৃতিককে প্রথমে এটি করার কথা বলা হয়েছিল কারণ, ‘কাহো না পেয়ার হ্যায়’-এর শ্যুটিংয়ের সময় ওর দেওয়া প্রথম শট দেখেই তিনি বুঝেছিলেন হৃতিক ভবিষতে একজন বড় তারকা হতে চলেছেন। একথা ফারহা হৃতিকের বাবা পরিচালক রাকেশ রোশনের কাছে গিয়েও বলেন যে, তার ছেলে একজন বড় তারকা হতে চলেছেন।
আর এ সময় হৃতিককেও ফারহা জানান, তিনি যে একটি স্ক্রিপ্ট লিখেছেন, সেখানের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে হৃতিককে তিনি চান। এটা শুনে হৃতিক খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। শাহরুখ খানও সেই ছবিতে থাকছেন জেনে, হৃতিক জানাতে চেয়েছিলেন, ‘শাহরুখ আমার সঙ্গে কাজ করতে চাইবেন কি?’ এই প্রশ্নের উত্তরে ফারাহ হৃতিককে বলেছিলেন, ‘অবশ্যই।’ এবং তারপরই ‘কাহো না পেয়ার হ্যায়’ মুক্তি পায় এবং হৃতিক রাতারাতি একজন বিরাট মাপের তারকা হয়ে ওঠেন, তারপর বাকিটা তো ইতিহাস।
এরপর ২০০১ সালে শাহরুখ ও হৃতিককে ‘কভি খুশি কাভি গম’- এ দেখা যায় কিন্তু তাদের নিয়ে বাড়তে থাকা গুঞ্জনের জন্য তারা দু'জনেই খুব সচেতন ভাবে এই ছবিতে কাজ করেন। আর এর প্রভাব পড়েছিল সেটেও। এই প্রসঙ্গে করণ জোহর একবার জানিয়েছিলেন, শাহরুখ সেটে হৃতিকের থেকে নিজের দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন। হৃতিক তার জায়গা নিতে পারেন বলে যে গুঞ্জন ছড়ানো হয়েছিল সেটা মোটেই ঠিক নয়, পাশাপাশি অন্যায়ও বটে।
কারণ হৃতিক অনেক জুনিয়র ছিলেন শাহরুখের থেকে। যখন হৃতিক কাজ শুরু করেন তার বহু আগে শাহরুখ রীতিমতো বড় তারকা হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু এমন ভাবে পুরো বিষয়টি প্রচার করা হয়েছিল যে শাহরুখ ও হৃতিককের সম্পর্ক নিয়ে নেতিবাচকতা বাড়তে থাকে। যা খুবই দুঃখজনক। তাই ‘কভি খুশি কাভি গম’- এর শ্যুটিংয়ের সময় হৃত্বিক ও শাহরুখের মধ্যে একটা বন্ধুত্বের জায়গা তৈরি করার চেষ্টা চলছিল, আর করণ জানান এই কাজে সাহায্য করেছিলেন নায়িকা কাজল।
২০০৭ সালে প্রকাশিত অনুপমা চোপড়ার লেখা ‘কিং অফ বলিউড: শাহরুখ খান অ্যান্ড দ্য সিডাক্টিভ ওয়ার্ল্ড অফ ইন্ডিয়ান সিনেমা’- তে এই দুই অভিনেতার মধ্যে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘এটা খুব ভুল ছিল’।
বইটিতে শাহরুখের উদ্ধৃতেও লেখা রয়েছে,‘আপনি আমার দশ বছরের কাজ কেড়ে নিতে পারবেন না। আপনি হঠাৎ একদিন সকালে এসে আমাকে বলতে পারবেন না, ‘আরে আপনি আপনার জায়গা হারিয়েছে, আপনার অনেক বয়স হয়েছে, আপনাকে দিয়ে আর হবে না।’ আসলে কেউ আমাকে জিজ্ঞাসাই করেননি। আমি হৃতিক রোশনকে নিয়ে কী ভাবছি সেটা কি কেউ জানতেন? তাই আমার ব্যাপারে এই লজ্জাজনক গুঞ্জন রটে গেল।'
যার কারণে সেই সময় নানা কারণে হৃতিক আর ‘ম্যায় হুঁ না’ ছবিতে কাজ করেননি হৃতিক। তারপর ‘লক্ষ্মণ’ চরিত্রটির জন্য অফার করা হয় জায়েদ খানকে। পরবর্তীতে তাকেই এই ছবিতে শাহরুখের ভাইয়ের ভূমিকায় দেখা যায়।