‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানের সুর বিকৃত করায় ছায়ানটের নিন্দা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১০:০৭ পিএম
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের অমর সৃষ্টি ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানের বিকৃতিতে ধিক্কার ও নিন্দা জানিয়েছে দেশের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট।
মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে নিন্দা জানান ছায়ানট শিল্পীরা।
বিবৃতিতে বলা হয়, উপমহাদেশে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময়, ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে কাজী নজরুল ইসলাম স্বদেশ প্রেমের পটভূমিতে ‘ভাঙার গান’ শিরোনামে ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটি রচনা করেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তো বটেই, ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত ভাগের পর পূর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক জাগরণ এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ কোটি বাঙালিকে সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে বিদ্রোহী কবির এই গান।
সম্প্রতি ভারতীয় একটি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন সুর এবং আঙ্গিকে কালজয়ী গানটি পরিবেশিত হয়েছে। আমরা মনে করি, এই উদ্যোগ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের চরম অবমাননা, স্রষ্টার অমর্যাদা এবং সংস্কৃতিবিনাশী কাজ।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল রচিত, পরাধীনতায় জর্জরিত মানুষকে জাগিয়ে তোলার এই গান বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ; অঙ্গাঙ্গী মিশে আছে আমাদের মর্মে, আত্মপরিচয়ের বিশ্বাসে। যে সুর ও বাণীর এমন ঐতিহাসিক পটভূমি, গভীর তাৎপর্যতার ন্যূনতম বিচ্যুতি বাঙালি সইবে না, মানবে না কোনো বাণিজ্যিক চটুল বিকৃতি।
বলা হয়, কাজী নজরুল ইসলামের সব সৃষ্টিই বাঙালি তথা বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। সেই স্রষ্টার কালোত্তীর্ণ কর্মকে পণ্য করে কোনো ব্যক্তিবিশেষ কিংবা গোষ্ঠীর হীন বাণিজ্য করবার অপপ্রয়াস আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য।
বিবৃতিতে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্বকালে পাকিস্তানি শাসকেরা কাজী নজরুলকে খণ্ডিতভাবে উপস্থাপনের অপপ্রয়াসে লিপ্ত ছিল, কিন্তু মুক্তবুদ্ধির অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী বাঙালি প্রতিবাদে মুখর হয়ে সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। বিকৃত-সংস্কৃতির আগ্রাসনে আবারো সেই সম্মিলিত প্রতিবাদ-ঝড় তোলার সময় সমাগত।
অমর গানটির প্রকৃত সুর-আবেদন-আবেগে আমূল পরিবর্তন আমাদের সংস্কৃতি ও মননে অপূরণীয় ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। ছায়ানট এই ধরনের ধৃষ্টতা ও সাংস্কৃতিক তাণ্ডবের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং বিকৃত গানটির প্রচার অবিলম্বে বন্ধ করে, প্রয়োজনে অবিকৃত গানের সংযোজন ও প্রকাশের দাবি জানাচ্ছে।
ছায়ানট রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ বাংলার সকল গীতিকার ও সুরকারের নিজস্ব ও অনুমোদিত বাণী ও সুরের শুদ্ধ চর্চা ও প্রসারে নিয়োজিত এবং সে সব সৃষ্টির যে কোনো ধরনের বিকৃতিকেই অপরাধ বলে মনে করে।