তার মা-বাবার দেওয়া নাম গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী। ভারতীয় চলচ্চিত্রে ১৯৭৬ সালে তার অভিষেক হয় মিঠুন চক্রবর্তী হিসাবে। মৃনাল সেন পরিচালিত ওই প্রথম সিনেমা ‘মৃগয়া’ দিয়েই বাজিমাত করেন তিনি। সেরা অভিনেতা হিসাবে বগলদাবা করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। অভিষেকের পর থেকে অভিনয় করেছেন প্রায় ৪০০ সিনেমায়। ১৯৮২ সালে ‘ডিস্কো ড্যান্সার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নাচে তৈরি করেন নিজস্ব ঘরানা।
তার অভিনীত চলচ্চিত্রের ভিলেন প্রায় অসাড় হন তার সংলাপবাণে। ‘মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে’, ‘আমি সেই ফাটাকেস্ট’ সংলাপগুলো দিয়ে তিনি পরিণত হন মহিরুহে। তার পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের বরিশালের ঝালকাঠিতে। ১৯৫০ সালে কলকাতায় জন্ম নেওয়া সেই ‘ফাটাকেস্ট’র কাল জন্মদিন।
মিঠুন চক্রবর্তী একাধারে চলচ্চিত্র অভিনেতা, গায়ক, প্রযোজক, লেখক, সমাজসেবক, উদ্যোক্তা, টেলিভিশন উপস্থাপক এবং সাবেক সংসদ সদস্য। এ পর্যন্ত কাজের স্বীকৃতি হিসাবে অর্জন করেছেন দুটি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড ও দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বাংলা, হিন্দি, ওড়িয়া, মারাঠি, ভোজপুরি, তামিল, তেলেগু, কান্নাড়া ও পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৮৯ সালে প্রধান অভিনেতা হিসাবে তার ১৯টি সিনেমা মুক্তি পাওয়ায় তিনি হন লিমকা বুক অব রেকর্ডসের অধিকারী।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- দো আনজানে, আখেরি ইনসাফ, খোয়াব, কস্তুরি, ট্যাক্সি চোর, ত্রয়ী, ওয়ান্টেড, বক্সার, ঘর এক মন্দির, বাজি, কসম পয়দা কারনে ওয়ালো কি, ড্যান্স ড্যান্স, গুরু, প্রেমপ্রতিজ্ঞা, অগ্নিপথ, পাপ কি কামাই, রোটি কি কিমত, তাহাদের কথা, দিল আশনা হ্যায়, পরদেশি, জল্লাদ, স্বামী বিবেকানন্দ, তিতলী, বাঙালি বাবু, গুরু, সন্ত্রাস, এমএলএ ফাটাকেস্ট, মিনিস্টার ফাটাকেস্ট, কালপুরুষ, রহমত আলী প্রভৃতি।
বাংলাদেশের কয়েকটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী। ১৯৮৫ সালে দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘অন্যায় অবিচার’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। শক্তি সামন্ত পরিচালিত ওই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন আরেক কিংবদন্তি অভিনেতা উৎপল দত্ত। দারুণ ব্যবসা করেছিল সেটি। এরপর ২০১০ সালে অভিনয় করেছিলেন আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘গোলাপি এখন বিলাতে’ সিনেমায়।
এখনো অভিনয়ে সম্পৃক্ত রয়েছেন কলকাতার এ জীবন্ত কিংবদন্তি। বর্তমানে তিনি অভিনয় করছেন ‘বাপ’ নামের একটি হিন্দি চলচ্চিত্রে। বিবেক চৌহান পরিচালিত এ সিনেমায় আরও অভিনয় করছেন সঞ্জয় দত্ত, সানি দেওল, জ্যাকি শ্রফ, জনি লিভার প্রমুখ।
এ পর্যন্ত মিঠুন চক্রবর্তীকে নিয়ে লেখা ৭টি বই বেরিয়েছে বাজারে। এগুলো হচ্ছে-আমার নায়িকারা, অনন্য মিঠুন, মিঠুনের কথা, সিনেমায় নামতে হলে, মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে, অরুণ কুমার রাভ, লিভ ডিস্কো ড্যান্সার অ্যালোন। ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া থেকে স্নাতক পাশ করা মিঠুন চক্রবর্তী ২০১৪ সালে তৃণমূল সাংসদ হয়ে রাজ্যসভায় বসেছিলেন।
পরে সারদা কেলেঙ্কারিতে তার নাম জড়িয়ে পড়ায় ২০১৬ সালে রাজ্যসভা থেকে পদত্যাগ করেন। যদিও ওই মামলায় তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। ২০২১ সালে মিঠুন কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত এক মেগা সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তে যোগ দেন। অভিনেত্রী যোগীতা বালীকে বিয়ে করেন মিঠুন চক্রবর্তী। তিন পুত্র এবং এক কন্যা রয়েছে এই দম্পতির। বর্তমানে তাদের মোট সম্পত্তির মূল্য ২ হাজার ৬১৬ কোটি রুপি।