স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি যাদের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম আকবর হোসেন পাঠান। সিনেমা জগতে তিনি রুপালি পর্দার হিরো নায়ক ফারুক নামেই পরিচিত।
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ১০টায় চিকিৎসাধীন মারা যান বর্ষীয়ান এ অভিনেতা ।
২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট নিজের ৭৩তম জন্মদিনে নায়করাজ রাজ্জাকের অজানা একটা ঘটনার কথা বলেছিলেন চলচ্চিত্রে ‘মিয়াভাই’ খ্যাত এই অভিনেতা।
ঢাকা ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে নায়করাজ রাজ্জাক বিখ্যাত বিনোদন সাংবাদিক ও লেখক আহমেদ জামান চৌধুরীর মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত করেছিলেন। একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজ্জাকের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সে কাহিনীর বিস্তারিত জানিয়েছেন তিনি।
ফারুক খান বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ কেস পর্যন্ত হয়েছিল। তখনকার চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব খান আতাউর রহমান থেকে শুরু করে নারায়ণ ঘোষ মিতা, কাজী জহিরসহ অনেকেই কিছুই করতে পারছিলেন না এ বিষয়ে। একসময় সবাই সরে গিয়েছিলেন রাজ্জাক ভাইয়ের পাশ থেকে। ঘটনাটা খারাপের দিকে মোড় নিচ্ছিল। একটা মহল চক্রান্ত করছিল, রাজ্জাক ভাইকে আইনের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। তার ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল তারা। সেই সময় চাইলে আমিও প্রতিশোধ নিতে পারতাম। কারণ, আমার সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী ছিলেন তিনি, কিন্তু আমি সেটা করিনি।
সে সময়ে স্মৃতিচারণ করে ‘মিয়া ভাই’ বলেন, রাজ্জাক ভাই একদিন আমাকে বললেন, আমার মানসম্মান বাঁচাও ফারুক। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে ঘটনা খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমার এক সহকর্মী জনপ্রিয় নায়ককে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে, তার মানসম্মান নষ্ট করবে, এটা ভেবে কষ্ট পাচ্ছিলাম খুব। তখন আমি আহমেদ জামান চৌধুরীর সঙ্গে বেশি বেশি যোগাযোগ শুরু করলাম। নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখতাম তার।
দুজনকে মিলিয়ে দেওয়ার ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার তৃতীয় দিনের রাতে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। এরমধ্যেই রাত ১২টার পর রাজ্জাক ভাইকে তার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে আসলাম। সেখানেই আহমেদ জামান চৌধুরী চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। দুজন-দুজনকে দেখে চমকে গেলেন। তাদের মেলানোর জন্য অনেক নাটক করেতে হয়েছিল। এই ঘটনার কথা অনেকেই জানেন না, এটা আমি করেছিলাম। কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হতে দেইনি রাজ্জাক ভাইকে।
প্রসঙ্গত, জলছবি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সিনেমা জগতে প্রবেশ করেন নায়ক ফারুক। প্রথম ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে বলে খ্যাত কবরী। তার প্রথম ছবির পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। উপহার দিয়েছেন একের পর এক জনপ্রিয় সিনেমা।
তিনি প্রায় ১০০+ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার বেশিরভাগ সিনেমাই দর্শকদের হৃদয় জয় করতে পেরেছিল।