সম্প্রতি চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ এনে শিল্পী সমিতিসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সমিতিতে লিখিত অভিযোগ জমা দেন ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির অন্যতম প্রযোজক রহমত উল্লাহ।
সেই অভিযোগের পর রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার উদ্যোগ নেন শাকিব। এছাড়া সেই প্রযোজকের বিরুদ্ধে নানান কথা বলেন শাকিব।
এরই জবাবে প্রযোজক রহমত উল্লাহ বলেন, আমি অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছেছি। এখানে আসার পর জানতে পারলাম অভিনেতা শাকিব খান আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে প্রথমে গুলশান থানায় যান। সেখানে অভিযোগ দায়েরে ব্যর্থ হয়ে তিনি ডিবি পুলিশের কাছে অভিযোগ দেন। তিনি বলেছেন আমি নাকি প্রযোজকদের একজন ছিলাম না। তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন যে আমি চাঁদাবাজি এবং প্রতারণা করছি।
এই ব্যাপারে আমার জবাব এবং বক্তব্য তুলে ধরলাম।
বিগত ছয় বছর ধরে আমি নানাভাবে যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে এক রকম নিরুপায় হয়েই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্প সমিতিতে অভিযোগ দিয়েছিলাম। আমার অভিযোগটি খুবই সিম্পল। অভিনেতা শাকিবকে অভিনয় করার জন্যে অস্ট্রেলিয়াতে আনা হয়েছিল। এই জন্যে তো তাকে পারিশ্রমিক দেয়া হয়েছিল। পেশাগত কাজে মনোনিবেশ না করে তিনি এমন কিছু অনৈতিক এবং অবৈধ কাজ করেছিলেন যে কারণে ওই ছবির কাজ আর শেষ হলো না। একটি প্রজেক্টে অর্থ বিনিযোগ করে যদি অন্য ব্যক্তির কারণে আমার সেই বিনিয়োগ নষ্ট হয়, তাহলে সেই ব্যক্তিকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে পারার নৈতিক এবং আইনি অধিকার আমার আছে।
তিনি বলেন, নিজের নাম, পরিচয় এবং যোগাযোগের মাধ্যম সঠিকভাবে উল্লেখ করে প্রকাশ্য দিনের আলোয় বাংলাদেশ শিল্পী সমিতিতে সশরীরে হাজির হয়ে আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। গভীর রাতের অন্ধকারে চুপিসারে এমনটি করিনি। ওই অভিযোগে যদি একটুও মিথ্যা থাকতো অথবা আমার যদি অসৎ কোনো উদ্দেশ্য থাকতো, তাহলে কি আমি এমন সাহস দেখাতে পারতাম বলে আপনাদের মনে হয়? আমার সাথে কথা বলে কি আপনাদের কখনো মনে হয়েছে যে আমার মধ্যে মিথ্যা বলার প্রবণতা আছে? বিগত প্রায় দুই যুগের মতো সময়ে ধরে আমি অগণিতবার বাংলাদেশী শিল্পীদের অস্ট্রেলিয়ায় পারফর্ম করার ব্যাপারে স্পন্সর করেছি। কেউ কি বলতে পারবেন আমি কখনো কোনোদিন কারো সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলাম? অভিনেতা, অভিনেত্রী, গায়ক, গায়িকা, এমন কেউ কি আছেন আমার সততা নিয়ে একটি অভিযোগ করতে পারবেন?
সেই প্রযোজক বলেন, আমি অভিযোগ জমা দিয়েছিলাম ১৫ মার্চ দুপুর বেলা। সেদিন ছিল বুধবার। এটি ছিল একটি কার্যদিবস। এর পরদিন বৃহস্পতিবারও একটি কার্যদিবস ছিল। শাকিব খান একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি। তার তো লিখিত অভিযোগ দেখেই বুঝে যাওয়ার কথা এখানে কোনো মিথ্যা বলা হয়েছিল কিনা। যদি শাকিব খানের সেই সৎ সাহস থাকতো, এই দুইটি কার্যদিবসের মধ্যেই তিনি আমার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারতেন।
অথচ আইনের আশ্রয় না নিয়ে তিনি আমার কাছে পাঠালেন প্রাক্তন স্ত্রী অপু বিশ্বাসকে। সেই অপু আমাকে জানালেন শাকিব মধ্যস্থতা করতে চায়। আমি সরল বিশ্বাসে সাকিবের সাথে দেখা করতে রাজি হলাম। ১৬ মার্চ গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় সাকিবের সাথে আমার দেখা হয়। তিনি আমাকে লগ্নিক্রিত অর্থে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবার প্রস্তুতি দেন। শাকিব ছাড়াও সেই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, অপু বিশ্বাস, সাকিবের চাচাত ভাই মনির এবং অন্য একজন ব্যক্তি যার নাম আমার জানা নেই।
১৬ মার্চের সেই মিটিং -এ আমি শাকিব খানকে জানাই যে ১৯ মার্চ রাত ১টা বাজে আমি ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইনের ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করছি।
পরিশেষে তিনি বলেন, আমি পালিয়ে যাইনি। সেই প্রয়োজনও আমার নেই। প্রয়োজনে আমি আবার দেশে আসব।
আমাকে যারা সহযোগিতা করেছেন আমি তাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশেষ করে সাংবাদিক বন্ধুদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক এবং শিল্পী সমিতির সকল শুভানুধ্যায়ীদের জন্যে রইলো আন্তরিক ভালোবাসা এবং ধন্যবাদ।