বাংলাদেশে সিনেমা নির্মাণের পর সেটি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করতে চাইলে অবশ্যই আগে সেন্সর ছাড়পত্র নিতে হবে। এ ছাড়পত্র বা সনদ দেয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড নামে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান।
এ প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রক তথ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেন্সর বোর্ড থেকে অনেক সময় সিনেমা আটকে দেওয়া হয়। বা বোর্ড সসদ্যরা সিনেমা দেখার পর বিভিন্ন শর্তে ছাড়পত্র প্রদান করেন। কিছু কিছু সিনেমা আবার প্রদর্শনের অযোগ্য বলেও বাতিল করেন। বোর্ড থেকে প্রাথমিক প্রদর্শনে বাতিল হলে সিনেমাসংশ্লিষ্টরা বোর্ডেরই আপিল বিভাগে আপিল করতে পারেন।
আপিল বোর্ড থেকেও যদি প্রদর্শনের অযোগ্য বলে রায় আসে তখন নির্মাতা বা প্রযোজকের শেষ রাস্তা থাকে আদালত। সম্প্রতি ‘শনিবার বিকেল’ নামে একটি সিনেমা সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকার পর আপিল বিভাগ শর্তসাপেক্ষে মুক্তির নির্দেশনা দেন। কিন্তু একই সময় ‘মেকআপ’ নামে আরেকটি সিনেমাকে প্রদর্শনের অযোগ্য বলে রায় দেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, সেন্সর বোর্ডে কেন সিনেমা আটকে থাকে। বা বোর্ড থেকে ছাড়পত্র না দেওয়ার কারণ কী? এ নিয়ে কথা হয়েছিল বোর্ডের বর্তমান কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে।
সেন্সর বোর্ডের সদস্য চিত্রপরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘একটি সিনেমা আটকে রাখলে সেন্সর বোর্ডের কোনো লাভ হয় না। বরং মুক্তির ছাড়পত্র দিলে ইন্ডাস্ট্রিরই লাভ। তবে নির্মাণের দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি একজন পরিচালককে শিখতে হবে সেন্সরের রুলসগুলো। যেহেতু আইন আছে, অবশ্যই সে আইন মানতে হবে। যে সিনেমা রাষ্ট্র কাঠামোতে আঘাত হানবে; সে সিনেমা অবশ্যই আটকে রাখার অধিকার রাষ্ট্রের আছে।
অন্যদিকে সেন্সর বোর্ডের সদস্যদের অনেকেই দোষারূপ করেন। এটি উচিত নয়। কারণ, আমাদের বোর্ড সদস্যদের একক কোনো ক্ষমতা নেই যে সিনেমা মুক্তিতে বাধা দেবে বা আমাদের কথায় সিনেমা মুক্তি দেওয়া হয়; বিষয়টি এমনও নয়। সিনেমা মুক্তির অনুমতি তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে আসে। আমরা শুধু সিনেমাটি দেখি। মতামত দেই। সত্যি বলতে নির্মাতাদের আইন মেনে সিনেমা পরিচালনা করা উচিত বলে আমি মনে করি।’
এ প্রসঙ্গে সেন্সর বোর্ডের আরেক সদস্য অভিনেত্রী রোজিনা বলেন, ‘সিনেমা আটকে রাখার ক্ষমতা কী আমাদের? আমরা তো মত দিতে পারি। সেন্সর বোর্ডের সদস্য হিসাবে বলতে পারি, এ সিনেমার এ জায়গাটি অনেক ভালো হয়েছে। এ সিকোয়েন্সটা হিট করতে পারে। কিন্তু সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা কখনো বলতে পারে না এ সিনেমা যাবে না। একটি সিনেমা মুক্তি দেওয়ার অনুমতি রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসে; বিশেষ করে তথ্য মন্ত্রণালয় সিনেমা মুক্তির অনুমতিপত্র দিয়ে থাকেন।’
রোজিনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেন্সর বোর্ডের সদস্য অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস বলেন, ‘সেন্সর বোর্ড নিয়ে আমারও ভুল ধারণা ছিল। একটা সময় আমিও মনে করতাম সেন্সর বোর্ড মনে হয় সিনেমা আটকে রাখে। বিষয়টি সত্যি নয়। বোর্ডের সদস্যরা একটি সিনেমা শুধু দেখেন এবং ভালো-মন্দ বলেন। কিন্তু সিনেমা মুক্তির অনুমতি দেন স্বয়ং তথ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সচিবদ্বয়। সেন্সর বোর্ড ও সদস্যদের দোষারোপ করে কোনো কিছু হবে না।’
বোর্ড সদস্য নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘সেন্সর বোর্ড সিনেমা নির্মাণ, সম্পাদনা, গল্পটা কেমন এসব বিষয় নিয়ে কথা বলে। কিন্তু বোর্ড কিংবা কোনো সদস্য কখনো একটি সিনেমা মুক্তি-বন্ধ করতে পারে না। এ বিষয় নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে কথা বলতে হবে। রাষ্ট্রই অনুমতি দেন কোন সিনেমা মুক্তি দেওয়া হবে কোনটা হবে না।’
এ বিষয়ে প্রখ্যাত অভিনেতা তরিক আনাম খান বলেন, ‘সিনেমা মুক্তির অনুমতি না দেওয়ার পুরো বিষয়টি ঘোলাটে! একটি সিনেমা অনেক কষ্ট করে নির্মিত হয়। সিনেমা যদি খারাপ হয় তবে দর্শকই মুখ ফিরিয়ে নেবে। অনেক সিনেমা, অনেক বাজেটে নির্মিত হয় অথচ দর্শক নেয় না, তেমনি কম বাজেটের সিনেমা অনেক সময় হিট সুপার হিট হয়। সিনেমা দেখে দর্শক ভালো-মন্দ বিচার করবে। কিন্তু দর্শকের কাছে পৌঁছাতে কেন এত বাধা দেওয়া হয় বুঝি না। সত্যিকার অর্থে এমন পরিস্থিতি থেকে আমরা রেহাই চাই।’