‘আমার দৃশ্য বেশি থাকলে অভিনেতারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন!’
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:২০ পিএম
রূপালি পর্দা থেকে বিদায় নিচ্ছেন কৌতুক অভিনেতা জনি লিভার, না কি অভিনয় থেকে সাময়িক বিরতি নিতে শুরু করেছেন তিনি? এই প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মুখ খোলেন অভিনেতা।
পুরো সাম জন প্রকাশ রাও জনুমালা। তবে বলিপাড়ায় বেশি পরিচিত জনি লিভার নামে। ১৯৮৪ সালে অভিনয় জগতে পা রেখেছিলেন তিনি। এখনও পর্যন্ত ৩০০টিরও বেশি ছবিতে কাজ করে ফেলেছেন জনি।
জন প্রকাশ রাও জনুমালা। তবে বলিপাড়ায় বেশি পরিচিত জনি লিভার নামে। ১৯৮৪ সালে অভিনয় জগতে পা রেখেছিলেন তিনি। এখনও পর্যন্ত ৩০০টিরও বেশি ছবিতে কাজ করে ফেলেছেন জনি।
কিন্তু জনির কেরিয়ার গ্রাফ এখন অপরাহ্নে। একটা করে বছর পেরিয়ে যাচ্ছে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে জনিকে বড় পর্দায় দেখার সুযোগও কম মিলছে।
এর কারণ কী? অভিনেতা আগে যেমন একের পর এক ছবিতে চুটিয়ে কাজ করতেন, এখন হঠাৎ তাকে বড় পর্দায় এত কম দেখা যাচ্ছে কেন? জনি কি তবে ধীরে ধীরে বলিপাড়া থেকে বিদায় নিচ্ছেন, না কি অভিনয় থেকে সাময়িক বিরতি নিতে শুরু করেছেন? এই প্রসঙ্গে একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুখ খোলেন তিনি।
জনির বক্তব্য, এখনকার অভিনেতারা অনেক বেশি সাবলীল। তারা সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন। ছবিতে কোনও চরিত্রে কৌতুকরস ঢালার প্রয়োজন হলে তা নায়ক-খলনায়কের চরিত্র নির্বিশেষে নির্মাণ করা হয় বলে জানিয়েছেন জনি।
নিজের কর্মজীবনের পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি যে সময় চুটিয়ে অভিনয় করতাম, তখন কী ভাবে বড় পর্দায় চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলব, তা নিয়ে কেউ আমায় পথ দেখাতেন না। আমার চরিত্র নির্মাণের জন্য আলাদা কোনও লেখক ছিলেন না সেই সময়। তাই নিজের মাথা খাটিয়ে কৌতুকরসে ভরিয়ে তুলতাম সেই চরিত্রটিকে।’’
অবশ্য জনির দাবি, সেই সময় বয়স কম ছিল, তাই প্রতি বার নতুন উদ্দীপনা নিয়ে কাজে নেমে পড়তেন তিনি। ১৯৮৪ সাল থেকে অভিনয় করলেও আলাদা করে ‘বাজ়িগর’ ছবির কথা মনে পড়ে জনির।
১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে শাহরুখ খান, কাজল এবং শিল্পা শেঠীর মতো বলি তারকার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তিনি। জনির ধারণা, এই ছবি তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
‘বাজ়িগর’ ছবিতে অভিনয় করার সময় নাকি তাকেই সব পাঞ্চলাইন যোগ করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনি নিজেই। তিনি বলেন, ওই সময়গুলো খুব ভাল ছিল। আমরা যারা এই পেশার সঙ্গে যুক্ত, সবাই ভীষণ পরিশ্রম করতাম।
নিজের জীবনের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েও মুখ খুলেছেন জনি। সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, আগে কমেডি ঘরানার ছবি স্বীকৃতি পেত। জনি যে ছবিগুলিতে অভিনয় করতেন, সেই ছবিগুলিতে তার অভিনীত দৃশ্যগুলি নিয়েই বেশি চর্চা হত বলে মন্তব্য করেছেন অভিনেতা।
বলিপাড়ার নামকরা তারকারা নাকি জনিকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন। এমনটাই দাবি করেছেন জনি। তিনি বলেছেন, ছবিতে আমার অভিনয় দেখে দর্শকরা কেমন প্রতিক্রিয়া জানাতেন তা নিজেদের চোখের সামনে দেখতে পেতেন তারকারা। আমাকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন।’
জনির বক্তব্য, এমন সময়ও গিয়েছে যখন বলিপাড়ার তারকারা ছবির পরিচালক-প্রযোজকের কাছে যেতেন। ছবি থেকে জনির অভিনয় করা দৃশ্যগুলি কাটছাঁট করে ফেলার অনুরোধ করতেও বাকি রাখতেন না অভিনেতারা।
এমনকি, বলি অভিনেতাদের চরিত্র নির্মাণের সময় যেন তাদের চরিত্রেও কৌতুকের ছিটেফোঁটা থাকে, সেই অনুরোধ করতেন চিত্রনাট্যকারদের কাছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ছবিতে কমিক দৃশ্যগুলি ভাগ করে দেওয়া শুরু হল। সব মজার সংলাপ জনির মুখে দেওয়া হত না। অভিনেতাদের জন্যেও মজাদার দৃশ্য, মজাদার সংলাপ তৈরি করা হত।
ধীরে ধীরে কমেডি ঘরানার ছবির ক্ষেত্রে ধারা বদল হতে থাকে। শুধু মাত্র একটি চরিত্রই কৌতুকরস ফুটিয়ে তুলবে তা নয়, সকলেই যেন সমান ভাবে মজাদার চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান, সে দিকে নজর দেওয়া হতে থাকে।
এখন কয়েকটি ছবিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েও জনি সেই ছবিগুলি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বলছেন, এখনকার লেখনীর মান ভাল নয়। কমেডি চরিত্র নিয়ে লেখার জন্য কোনও লেখক নেই। সকলে ভাবেন, জনি ভাই তো রয়েছেন। উনি সব সামলে নেবেন। আরে বাবা! নিজের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্যও তো একটা ব্লুপ্রিন্ট দরকার হয়। তা-ও ঠিকমতো পাওয়া যায় না।
বর্তমানে কৌতুকশিল্পী হিসাবে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছেন জনির কন্যা জেমিও। নেটমাধ্যমের পাশাপাশি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের প্রশংসা কুড়োচ্ছেন জেমি। বাদ যান না জনির পুত্র জেসিও। কখনও জেমির সঙ্গে নেটমাধ্যমের ভিডিওতে, কখনও বা ছবির পর্দায় দেখা যায় তাঁকে। পুত্রকন্যারাও জনির পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন বলা যায়।