চালবাজ রিভিউ: হালকা মেজাজের রোমান্টিক কমেডি ছবি
অনিন্দ্য মামুন
প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০১৮, ০২:৩৪ পিএম
চালবাজ সিনেমার পোস্টার
শাকিব খান ও কলকাতার শুভশ্রী অভিনীত দ্বিতীয় ছবি চালবাজ। গত ২০ এপ্রিল ছবিটি কলকাতায় মুক্তি পেলেও এক সপ্তাহ পর ২৭ এপ্রিল মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশে।
প্রথমে ছবিটি যৌথ প্রযোজনায় নির্মিতে হলেও পরে যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা কড়কড়ি হওয়ার দরুণ ভারতীয় ছবি হিসেবেই সাফটা চুক্তির আওতায় মুক্তি পেল বাংলাদেশে।
প্রথমেই বলে রাখি, শিরোনামে রিভিউ শব্দটি বলা হলেও আদতে এটি রিভিউ নয়। বলতে পারেন একজন সাধারণ সিনেমাপ্রেমির চেয়ারে বসে লেখা ছবিটি দেখার অভিজ্ঞতা।
তবে রিভিউ লিখতে গেলে ছবিটির পুরো গল্প বলতে হবে। মুক্তির দুইদিনের মাথায় গল্প বলে রিভিউ দেয়া ছবিরি জন্য ক্ষতিকার।
এখানে যা বলা হবে সেটা ছবিটিতে যারা ভুল খুঁজতে চাইবেন তাদের ভালো নাও লাগতে পারে।
তবে যারা বাংলা ছবি নিয়মিত দেখেন বা ঢাকাই ছবি হলে দেখতে এসে হেসে লুটোপুটি খেতে বা শীষ বাজাতে চান তাদের ভালো লাগবে।
ছবিটি দেখার আগে কলকাতার একটি ম্যাগাজিনের অনলাইন ভার্সনে ছবিটির নেতিবাচক রিভিউ পড়েছেন অনেকে।
যেখানে শিরোনাম ছিল ‘চালবাজ রিভিউ: অতিরিক্ত দীর্ঘ, দুর্বল অভিনয়’ শিরোনামটি দেখে ছবিটি দেখার আগ্রহ অনেকের কমেছে।
কারণ রিভিউটিতে শুধু ছবিটির নেতিবাচক দিকই তুলে ধরা হয়েছে। কারণ কলকাতার অনেকের কাছেই এখন শাকিব খান ঈর্ষার কারণ।
তার অভিনীত ছবি কলকাতায় বাজারে ব্যবসা সফল হলে এটা অনেকেই অসম্মানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।
সেখানে শাকিব খানের পক্ষে যেমন লেখা হবে তেমনিই বিপক্ষেও লেখা হবে। এটাই স্বাভাবিক। উদার মানসিকতা নিয়ে রিভিউটি যে লেখা হয়নি এটা প্রায় সবার মাথায় খেলেছে।
চালবাজ পুরোপুরি একটা বিনোদন নির্ভর ছবি। অনেকে তামিল বা হিন্দি ছবির নকল বলবেন হয়তো। কিন্তু নকল হলেও ছবিটি উতরে গেছে।
অনেক সময় দেখা যায় নকল করে পাশের ছেলেটি জিপিএ-৫ পেয়ে যান। কিন্তুর যারটা দেখে নকল করেছেন তার ভাগ্যে জিপিএ ফাইভ মিলে না। চালবাজের ক্ষেত্রে এমনটি বলা যায় অনায়াসে।
ছবিটি দেখতে আসা হলভর্তি দর্শকদের হাঁসতে হাঁসতে পেটে খিল ধরানোর বিষয়টি ছিল অন্যরকম আনন্দের।
ছবিটির লগ্নীকারক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান হলেও এতে এক মুহুর্তের জন্য শাকিব খানকে সিক্যুন্সের আড়াল হতে দেখা যায়নি। পুরো ছবিটিতেই পর্দাজুড়ে ছিল শাকিব খান।
তার এতো উপস্থিতি বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি একটুও। বরং ভালোলাগা ছিল অফুরন্ত। বিশেষ করে শাকিব খানের নতুন লুক ও মার্জিত পোষাক পছন্দ হয়েছে সবার।
ছবিটি দেখা হয়েছে রাজধানীর বড় এক সিনেপ্লেক্সে। কয়েক বছর আগেও যেখানে শাকিব খানের ছবি চলবে ভাবাই হতো না। সেখানে বর্তমানে ছবিটি ‘অ্যাভেঞ্জার দ্যা ইনফিনিটি ওয়ার’র সঙ্গে লড়ছে।
যারা বলছেন চালবাজ অনেকগুলো বলিউডি রোমান্টিক কমেডি ছবির থেকে কিছু-কিছু ঘটনা তুলে একটা গল্প বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
এ অভিযোগের বিপরীতে বলা যায়, যে গল্প বানানো বা বলার চেষ্টা করা হয়েছে পরিচালক জয়দ্বীপ মুখার্জী সেটা পেরেছেন।
শাকিব খানও চেষ্টা করেছেন সেরাটাই দিতে। তার কমিডি অভিনয়ও দারুণ ছিল। যার বিনিময়ে হলভর্তি দর্শকদের হাততালি পাচ্ছেন তিনি।
ছবিটির প্রথমার্ধ শুটিং হয়েছে লন্ডনে। আর দ্বীতিয় অর্ধের শুটিং কলকাতায়। চালবাজকে চেনা ছকে বাঁধা হালকা মেজাজের রোমান্টিক কমেডি ছবিই বলা যায়।
এতে শাকিবের মুখের অভিব্যক্তি তার মারামারি সবই ছিল ঢাকাই ছবির দর্শকদের জন্য একেবারে নতুন।
দীর্ঘদিন ধরে শাকিব খানের কাছ থেকে যেন তার ভক্তরা এমনটিই আশা করছিলেন। চালবাজের মাধ্যমে সেটা যেন পেয়েও গেলেন।
ছবিটি গ্ল্যামার কুইন শুভশ্রীকেও কম ভালো লাগেনি। তবে আগের শুভশ্রীর মতো অতটা না লাগলেও খারাপ লাগেনি। কিছুটা গাল মোটাসোটা শুভশ্রী উপস্থিত এখানে।
রজতাভ দত্তের অভিনয় স্বভাবতই ভাল। এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি যে লুকে চালবাজে হাজির হয়েছেন তা রীতিমত সাহসের পরিচয়।
চিরাচরিত আশিস বিদ্যার্থীকে পাওয়া গেছে এতে। তবে ছবিটির কোথায় যেন খরাজ মুখার্জীর অনুপস্থিতি অনুভব করেছেন দর্শক।
সব মিলিয়ে চালবাজ পুরোপুরি বিনোদনে ভরপুর একটা ছবি। হাসির সংলাপগুলো দর্শকদের হাঁসাতে পেরেছে। চালবাজের সাফল্য তো এখানেই।