ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে শ্রমিকদের ‘কাণ্ডে’ যা বললেন সেলিব্রেটিরা
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০১৯, ০২:২০ এএম
চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের 'নিরাপদ সড়ক চাই' (নিসচা) আন্দোলনে ক্ষুব্ধ পরিবহন শ্রমিকরা। নতুন পরিবহন আইনে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের দাবি পূরণ করা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
এ কারণে এই আন্দোলনের পথিকৃত ইলিয়াস কাঞ্চনের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
পরিবহন মালিক শ্রমিকদের এমন কাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারকারা। তারা ইলিয়াস কাঞ্চলের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
তারকাদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এ কেমন আচরণ করা হলো ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে! সড়কে মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে কে না চায়? সবার ভালোর জন্যই যিনি আন্দোলনটা শুরু করেছেন, ২৫ বছর ধরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন, তাকে নিয়ে পরিবহণ শ্রমিকদের এ কেমন আচরণ?
শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেছেন, ‘আমরা কাঞ্চন (ইলিয়াস কাঞ্চন) ভাইয়ের পাশে আছি। নিরাপদ সড়ক বিষয়ে তার এই সুন্দর কাজের সঙ্গে শিল্পীরা থাকবেন এবং শিল্পী সমিতি আছে। তাকে নিয়ে যারা নোংরামি করছে, তারা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। তারা দেশ ও সমাজের শত্রু। যাকে নিয়ে আমাদের গর্ব করা উচিত তাকেই এমন অপমান করা হলো! এটা মেনে নেয়া যায় না। শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই।’
চিত্রনায়ক মাসুম পারভেজ রুবেল বলেছেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের যে সংগ্রাম তা দেশবাসীর চাওয়া। তিনি এই দাবিতে দীর্ঘদিন শ্রম দিয়ে আসছেন যা দেশব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে। তাই আমি মনে করি গুটি কয়েক বিপদগামী মানুষের কর্মকাণ্ডে ইলিয়াস কাঞ্চন কষ্ট পাবেন না। কারণ তার সঙ্গে দেশের মানুষ রয়েছে। আমরা চলচ্চিত্র সমাজ রয়েছি তার পাশে।
রুবেল আরও বলেন, ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে যেসব মানুষ এ ধরনের পোস্টার তৈরি করেছে, তারা নোংরা মনের পরিচয় দিয়েছে। আমি এ ঘটনার প্রতিবাদের পাশাপাশি তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক বলেন, ‘সারা দেশের মানুষ ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইকে সমর্থন দিয়েছে ও ভবিষ্যতেও দেবেন। কারণ নিরাপদ সড়ক একটি নাগরিক অধিকার। এটা নিয়ে বিরোধ করার কোনো কারণ নেই। বিষয়টি শ্রমিকরা বুঝতে পারছে না বলে মনে করি। অবিলম্বে তাদের ফিরে আশা উচিত।
তিনি যোগ করেন, যারা শ্রমিকদের ভুল বোঝাচ্ছে, তাদের শনাক্ত করা বিচার করা উচিত।
চিত্রতারকা ইমন বলেন, ‘ফেসবুকে কাঞ্চন ভাইকে নিয়ে যারা বাজে ছবি পোস্টসহ কটুক্তি করছেন, আমি তাদের ধিক্কার জানাই। কাঞ্চন ভাইয়ের পাশে গোটা চলচ্চিত্র রয়েছে। কারণ, তিনি আমাদের পথপ্রদর্শক, সিনিয়র অভিনেতা। কাঞ্চন ভাইয়ের স্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এরপর থেকে তিনি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ভূমিকা রেখে আসছেন। আমি মনে করি, কাঞ্চন ভাইয়ের সঙ্গে আমাদেরও একাত্মতা প্রকাশ করা উচিত।’
এছাড়া ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে ফেসবুকে কটুক্তি ছড়ানোর তীব্র সমালোচনা করেছেন অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, পরিচালক গাজী জাহাঙ্গীর, অপূর্ব রানা, বজলুর রাশেদ চৌধুরী প্রমুখ।
উল্লেখ্য,গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবি সম্বলিত ব্যানার টাঙিয়ে কিংবা কুশপুত্তলিকা তৈরি করে সেখানে আগুন দেয়া হচ্ছে। অথচ সড়কে যেন একটিও প্রাণহানীর ঘটনা না ঘটে সেজন্য গত ২৫ বছর ধরে সেই সংগ্রাম করে আসছেন এই অভিনেতা।
শ্রমিকদের এমন আচরণে মর্মাহত ইলিয়াস কাঞ্চন। গণমাধ্যমকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, কখনও-কখনও খারাপ লাগে। এতটাই খারাপ লাগে যে যাদের জন্য আমি এতো কিছু জলাঞ্জলি দিয়েছি কোন কিছু পাওয়ার আশায় নয়। আমি আমার সিনেমার ক্যারিয়ার শেষ করেছি নিরাপদ সড়কের জন্য। আমার সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করেছি।
ইলিয়াস কাঞ্চন মনে করেন, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার পেছনে মালিক-শ্রমিক নেতাদের উস্কানি রয়েছে।
প্রসঙ্গত ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ৯০ দশকের জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন। শোকার্ত ইলিয়াস কাঞ্চন এরপর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, আর সিনেমা করবেন না। তবে সিনেমা ছেড়ে না দিলেও একসময় শুরু করলেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন। গত ২৫ বছর বেশি সময় ধরে তিনি সেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সংগঠনের নাম এখন জাতীয় স্লোগানে পরিণত হয়েছে।