বাংলায় ক্রাইম থ্রিলার: প্রথম সিজনেই বাজিমাত ‘মানি হানি’র
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০১৯, ০৯:৫৩ এএম
বাংলায় ক্রাইম থ্রিলার মানি হানি। ছবি: সংগৃহীত
জন্ম থেকেই কেউ অপরাধপ্রবণ হয়ে গড়ে ওঠে না। প্রত্যেক অপরাধীর পেছনেই থাকে কোন না কোন ঘটনা যেটি মোড় ঘুরিয়ে দেয় জীবনের। এমনই এক মোড় ঘোরানো ঘটনার জালে বাঁধা পরে শাহরিয়ার, আকবর আর সোহেলের ভবিষ্যৎ। নিতান্ত নিরুপায় হয়েই ব্যাংক ডাকাতির সিদ্ধান্ত নেয় ঘটনাচক্রে গড়ে উঠা এই ত্রিমূর্তি। এমনই এক গল্প নিয়ে বাংলা ভাষায় শীর্ষস্থানীয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘হইচই’ এ স্ট্রিমিং হচ্ছে অরিজিনাল ওয়েব সিরিজ ‘মানি হানি’।
পেশায় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্মকর্তা আর নেশায় জুয়াড়ি শাহরিয়ার কাজের পাশাপাশি অনেকের এজেন্ট হয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার কাজটি করে দেয়। সবই ঠিকঠাক ভাবে চললেও একসময় শেয়ার মার্কেটে ধ্বস নামার সাথে সাথে ধ্বস নামে শাহরিয়ারের জীবনেও। যাদের হয়ে বিনিয়োগ করতো তাদের অব্যাহত ক্ষতি ও হুমকি সামাল দিতে অনন্যোপায় শাহরিয়ার। দেনা মেটাতে চাই অনেক টাকা, মেটাতে না পারলে অপেক্ষমাণ মৃত্যু হুমকি।
মফস্বল শহরের এক ব্যবসায়ী আকবর, ব্যবসায় সব খুইয়ে ব্যাংকের দেনা মেটাতে না পেরে নিজের ঘরবাড়িও হারায় নিলামে। একদিকে নিজের ভিটে মাটি উদ্ধারের তাগিদ আর অপরদিকে আপন ভাগ্নের দেনা মেটানোর চাপ। সব মিলিয়ে হন্যে হয়ে টাকার খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে টাকার সন্ধানে।
সোহেল, প্রবাসী খনি শ্রমিক। প্রবাসজীবনের সব আয় ব্যবসায়ী মামার হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে চাইলেও মামার দেউলিয়া হবার সূত্রে হারায় তার সবকিছুই। এই অবস্থায় মামা-ভাগ্নে সিদ্ধান্ত নেয় প্রয়োজনে ব্যাংক ডাকাতি করে হলেও অর্থ জোগাড় করার। এদের সাথেই দেখা হয়ে যায় একই পথের যাত্রী শাহরিয়ারের।
স্বাভাবিক জীবনে থাকা তিনজন মানুষ কিভাবে ক্রমে অপরাধ প্রবণ হয়ে ওঠে, তার গল্পই ‘মানি-হানি’। বাংলা কন্টেন্ট এর ক্ষেত্রে অপরাধ উপজীব্য কন্টেন্ট খরার মাঝে রীতিমতো সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই কন্টেন্ট দর্শকদের জন্যে দারুণ সুখবর নিয়ে এসেছে।
তবে ‘মানি হানি’র সবচেয়ে দারুণ দিক এর একের পর এক টুইস্ট। যখনই মনে হবে আপনি প্রায় পুরো গল্পটা বুঝে গেছেন, তখনই আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে গল্পের মোড়। গল্পের যতো গভীরে যেতে থাকবেন, ততোই স্পষ্ট হতে থাকবে সমান্তরাল আরেকটা গল্পের উপস্থিতি।
একটা দর্শকপ্রিয় গল্প হতে যা প্রয়োজন এর সব উপকরণই রয়েছে ‘মানি হানি’ গল্পে, কিন্তু কিছু ভালো উপকরণও উপাদেয় কিছুতে পরিণত হতে ব্যর্থ হয় রাঁধুনির দক্ষতা আর সঠিক মশলার অভাবে। তবে আশার কথা এই যে এর কোনটিরই কমতি হয়নি ‘মানি হানি’ সিরিজ নির্মাণে।
বিশেষ করে পুরনো ঢাকার চেনা সব অলিগলি আর বিউটি বোর্ডিং এর মতো ঐতিহাসিক স্থানে রাতযাপন, বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা হোটেল খ্যাত সদরঘাটের ভাসমান বোর্ডিং এ রাতযাপন আর নিখুঁত ভাবে এক ব্যাংকের সরূপ ফুটিয়ে তোলায় অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন পরিচালকদ্বয়।
আর অভিনয় এর কথা আলাদা করে বলতেই হচ্ছে। আকবর চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছেন লুৎফর রহমান জর্জ, তাঁর মতো শক্তিমান অভিনেতার কাছে অবশ্য এটুকু আশা করাই যায়, কিন্তু শাহরিয়ার চরিত্রে দুর্দান্ত করেছেন শ্যামল মাওলা। অন্যান্য চরিত্রেও ভালো করেছেন সকলেই।
প্রতিটি ২০ মিনিটের মোট ১২ এপিসোডে সমাপ্ত হয়েছে ‘মানি হানি’ এর প্রথম সিজন। প্রতিটি এপিসোডের পরিসর ছোট বলে চাইলে এক বসাতেই দেখা নেয়া সম্ভব এই সিরিজটি। প্রথম সিজনেই গল্প কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যে না পৌঁছালেও প্রত্যাশার পারদ বেশ ভালো মতোই বাড়িয়ে দিয়েছে ‘মানি হানি’।ফলে দর্শকদের পরবর্তী সিজনের জন্যে যেভাবে অপেক্ষায় রাখতে চলেছে ‘মানি হানি’ এ থেকে নিশ্চিত ভাবেই বলা চলে প্রথম সিজনেই বাজিমাত করে দিয়েছে বাংলাদেশে ‘হইচই’ এর দ্বিতীয় অরিজিনাল সিরিজটি।