গতকাল থেকে সারাদেশে বইছে বৈশাখের আমেজ। পহেলা বৈশাখে বর্ণিল আয়োজনে মেতেছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষেরা।
তবুও সে আনন্দকে ছাপিয়ে যে ঘটনাটি বৈশাখের রঙিন দিনটিকেও কালো করেছে তাহলো ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষা কেন্দ্রে আগুনে পুড়িয়ে নুসরাত জাহান রাফির হত্যার ঘটনাটি।
বৈশাখের রঙ ম্লান হয়ে গেছে নুসরাতের বিয়োগ ব্যথায়। তার মৃত্যুতে সর্বত্র নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোবিজেও এর রেশ দেখা গেছে। নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে ও ন্যায় বিচারের দাবিতে এরই মধ্যে মানববন্ধন করেছে শোবিজ অঙ্গনের তারকারা।
সেই শোকের ছায়া পড়েছে জনপ্রিয় ব্যান্ডদল চিরকুটে। নুসরাতের জন্য গান প্রকাশ করল দলটি। গানটির শিরোনাম ‘পারলা দয়াল পারলা’। শনিবার দলটির নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে গানটি প্রকাশ হয়েছে।
গানটিতে ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়াও পড়েছে। ফেসবুকে আপলোডের পর ৪৬ হাজার বার দেখা হয়েছে ভিডিউটি।
গানটি প্রসঙ্গে ব্যান্ডের ভোকালিস্ট শারমীন সুলতানা সুমি বলেন, ‘নুসরাতের ঘটনায় সবার মতো আমরাও স্তব্ধ। যন্ত্রণা দিয়েছে আমাদের। তাই চুপ বসে থাকতে পারিনি। নুসরাতের জন্য অবমুক্ত করলাম গানটি। গানের মাধ্যমেই একজন সংগীতশিল্পী তার প্রতিবাদ, প্রতিরোধ জানাতে পারে। সেটাই করেছি আমরা। ’
গান ভিডিওর শুরুতে লেখা আছে, ‘সব বৈশাখে রঙ থাকে না। নুসরাতের জন্য গাইতে হলো।’
গানের ভিডিওটি ফেসবুকে প্রকাশ করে সুমি লিখেছেন, ‘বিচার চাইতে গিয়ে আগুনে পোড়ার ঠিক শেষ মুহূর্তে জানি না নুসরাতের এমনটাই মনে হয়েছিল কি না। এপারে জীবন ভার, রূঢ়, বর্বর, অস্বাভাবিক। ওপারে তুমি নিশ্চয় ভালো থাকবে নুসরাত।’
‘পারলা দয়াল পারলা’ গানের ভিডিও নির্মাণ করেছেন স্থপতি মারুফ।
‘পারলা দয়াল পারলা’ গানের ভিডিও-
প্রসঙ্গত, ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসাছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে এমন সংবাদে তিনি ছাদে যান। সেখানে বোরকাপরা ৪-৫ জন তাকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়।
অস্বীকৃতি জানালে তারা রাফির গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় সোমবার রাতে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন অগ্নিদগ্ধ রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই দিনই অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার মামলার দ্বিতীয় নূর উদ্দিন ও তৃতীয় আসামি শামীম জবানবন্দি দিয়েছে।