ঠাকুরগাঁও-১: ভোটের মাঠে মির্জা ফখরুলের স্ত্রী সন্তানরা!

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৬:৫৩ পিএম

মির্জা শামারুহ ঠাকুরগাঁও-১ আসনে ধানের শীষের প্রচারে অংশ নেন
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৩ দিন বাকি। প্রচারণার জন্য হাতে আছে খুবই কম সময়। আর তাই প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও। শুধু প্রার্থীই নয়, ভোট চাওয়ার কৌশল হিসেবে মাঠে কাজ করছে স্ত্রী, সন্তানও।
ভোট যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই পরিবর্তন হচ্ছে ভোটার ও ভোটের মাঠের প্রেক্ষাপট। গণসংযোগ, প্রচারণা, উঠান বৈঠক ও সভাসহ নানা কার্যক্রমে ব্যন্ত ঠাকুরগাঁও-১ আসনের প্রার্থীরা। প্রেস্টিজ ইস্যু হওয়ায় নানা প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নিজ নির্বাচনী আসনে ধানের শীষের ভোটের জন্য ভোটারদের মন জয় করতে ব্যতিক্রমভাবে প্রচারণা শুরু করেছেন বিএনপির মহাসচিব। নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছেন তার স্ত্রী সন্তানরাও।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম ও অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে আসা তার বড় মেয়ে মির্জা শামারুহ ঠাকুরগাঁও-১ আসনে ধানের শীষের প্রচারে অংশ নিতে দিনরাত গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও ভোট প্রার্থনা করছেন।
বাবার জন্য কন্যারাও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন ধানের শীষে ভোট চাইছেন। এতে করে দিন দিন মির্জা ফখরুলের পক্ষে সাধারণ মানুষের জোয়ার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অনেকেই অভিব্যক্ত করেছেন।
ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২১ হাজার। তবে এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার সংখ্যালঘু ভোটার। এই আসনে ফলাফল নির্ধারণে বড় নিয়ামক এই সংখ্যালঘু ভোটাররা। তাই সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে টানতে মির্জা ফখরুল আলাদা মন্ত্রণালয় তৈরি করে নানা রকম সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তাছাড়া ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য বেকার যুবকদের ভাতা, নারীদের জন্য বিশেষ ভাতা প্রদানের কথাও বলছেন ভোটের মুহূর্তে বিভিন্ন পথসভা ও গণসংযোগে।
মির্জার স্ত্রী রাহা আরা বড় মেয়ে শামারুহকে ভোটের প্রচারে পেয়ে খুশি ঠাকুরগাঁওয়ের জনগণ। সবাই তাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। এরাও প্রচারে বেশ সাড়া ফেলছেন।
মির্জার বড় শামারুহ বলেন, আমার বাবা ৭০ বছর বয়সেও আপনাদের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। এবারের ভোট শুধু ধানের শীষের জন্য নয়, বরং দেশ রক্ষার জন্য হলেও ধানের শীষকে জয়ী করতে হবে।
অপর দিকে গণসংযোগের সময় ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম ধানের শীষ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করে বলেন, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে এ নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিএনপিকে জয়ী করার আহ্বান জানান তিনি।
ধানের শীষে ভোট চেয়ে ও বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে। যারা বেকার রয়েছেন তাদের কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা প্রদান করা হবে। এছাড়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নানা রকম সমস্যার জন্য আলাদা একটি মন্ত্রণালয় গঠন করে তা সমাধান করা হবে।
ভোটারদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, এই সরকারের পরিবর্তন একমাত্র আপনারাই করতে পারেন। আমরা শান্তি চাই, ভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন চাই। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণকে পুলিশ প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে মামলা করে আবারও ক্ষমতায় আসতে চায়। মামলা, হামলা, ভয় দেখিয়ে ক্ষমতাই বেশিদিন টিকে থাকা যায় না।
আসনটিতে জয়ের হিসেবে আওয়ামী লীগের পাল্লাই ভারি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় ৬ বার, আর বিএনপির ৩ বার। দুই হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন ও মির্জা ফখরুল জনপ্রিয়তা সমানে সমান হওয়ায় ফলাফল যে কোনো দিকেই যেতে পারে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মির্জা ফখরুলের ইসলামের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। তিনি ও দলটির নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় বেশ সাড়া ফেলেছেন।
আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বলেন, রমেশ চন্দ্র সেন এখানে এবার পরাজিত হবেন কারণ দলীয় অভ্যন্তরীণ কারণে। তিনি গত ১০ বছরে ঠাকুরগাঁওয়ে মাত্র ৩ জন লোককে নিয়ে চলেছেন। যারা নিজেদের পকেটে কোটি কোটি টাকা কুড়িয়েছেন। যা অন্যান্য ত্যাগী ও রাজপথের নেতারা প্রতিরোধ নেবে এবার। তাই লোক দেখানো প্রচারণায় আছেন অন্যান্য নেতাকর্মীরা। ৩০ তারিখে তারা রমেশ সেন হারানোর সকল পরিকল্পনা ইতিমধ্যে শেষ করেছে।
উল্লেখ্য, মির্জা ফখরুলের বড় মেয়ে শামারুহ এর আগেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে সরকারের দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। বাবার জেলজীবন নিয়ে তার আবেগঘন স্ট্যাটাস এখনো অনেকের মনে আছে।