গার্মেন্ট খাতে অস্থিতিশীলতা: স্বাভাবিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-67b5080484818.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
গার্মেন্ট খাতে অব্যাহত অস্থিরতার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যেহেতু এটি দেশের প্রধান রপ্তানি খাত এবং আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি, সেহেতু এ খাতকে কোনোভাবেই অস্থিতিশীল হতে দেওয়া উচিত নয়। অনেক দিন ধরেই লক্ষ করা যাচ্ছে, এ খাতকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল করে তোলা হচ্ছে। জানা যায়, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এ অস্থিরতার নেপথ্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বিদায়ি ফ্যাসিবাদী সরকারের পলাতক দোসররা, যারা আওয়ামী ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত। এ অসন্তোষের জেরে গত সাড়ে ৫ মাসে বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক কারখানা। এছাড়া এ সময়ে গার্মেন্ট শিল্প এলাকায় ১ হাজার ১৪৭টি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-অগ্নিকাণ্ড, ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ, লুটপাট, কর্মবিরতি ও চুরির ঘটনা। রমজান সামনে রেখে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে-এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, এর নেপথ্যে একটি পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি জোরালোভাবে সক্রিয় রয়েছে। পরাজিত ওই শক্তিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যেই ‘ভায়োলেন্স ক্রিয়েটার গ্রুপ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। এ গ্রুপটি মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে অবরোধ, মিছিল, জ্বালাও-পোড়াওসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচারের কারণে বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমেছে। জানা যায়, কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা গার্মেন্ট খাতে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
এমনিতেই সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। এ সময় পোশাকশিল্পে অস্থিরতা বিদেশি ক্রেতাদের নেতিবাচক বার্তা দিতে পারে। এ খাত নিয়ে যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তারা সফল হলে দেশের রপ্তানি খাতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে, যার প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ এসেছে গার্মেন্ট খাত থেকে। এ শিল্পে বতর্মানে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। কাজেই এ শিল্পে বড় কোনো সংকট সৃষ্টি হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের কত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তা সহজেই অনুমেয়। বস্তুত সামগ্রিকভাবে এ শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। সম্প্রতি বহিরাগতদের ইন্ধনে কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। যারা এসবের পেছনে সক্রিয়, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। এ খাতের কোনো সমস্যা জিইয়ে না রেখে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। রপ্তানিমুখী এ শিল্পকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। রিজার্ভ সংকটের এ সময়ে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানার স্বাভাবিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো উপায়ে।