মাদক কারবারে পুলিশ, এ যেন শর্ষের ভেতর ভূত!

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

গত সরকারের আমলে অবৈধ ইয়াবা ব্যবসা ছিল নিয়মিত এক ঘটনা। বিশেষত কক্সবাজার এলাকায় ইয়াবা ব্যবসার বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল। এমনকি কক্সবাজারের তৎকালীন সংসদ-সদস্য কুখ্যাত আব্দুর রহমান বদির বিরুদ্ধেও ছিল ইয়াবার অবৈধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ। গত সরকার বিদায় হলেও ইয়াবা ব্যবসা বিদায় হয়নি। বরং এ ব্যবসার সঙ্গে খোদ একজন পুলিশ সুপারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে যে, অবিশ্বাস্য হলেও পুলিশ সুপারের সম্মতি নিয়েই বড় ধরনের ইয়াবা চালান বিক্রি করা হয়েছে। উল্লেখ করা যায়, ১০ কোটি টাকার ইয়াবা বিক্রি করা হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ টাকায়। শুধু তাই নয়, বিক্রির মোটা অঙ্কের টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন ওই এসপিসহ পুলিশের কয়েকজন সদস্য। ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। দুই পুলিশ কনস্টেবলকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল, তাদেরও দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার পিস ইয়াবা। অভিযানে আটক চারজনের মধ্যে তিন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। এর পরের ঘটনা আরও মারাত্মক। যুগান্তরের অনুসন্ধানে যাবতীয় তথ্য বের হওয়ার পর অভিযুক্তরা প্রথমে ঘটনা অস্বীকার করেছিল, তবে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ থাকায় প্রতিবেদককে নিশ্চুপ থাকার চেষ্টা করেছেন পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ। সুপারের নির্দেশে ডিবির ওসি জাহাঙ্গীর আলম প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করে সব অভিযোগ স্বীকার করেন এবং রিপোর্ট বন্ধ করতে ব্যাগভর্তি মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেন। যুগান্তরের কাছে অন্য তথ্য-প্রমাণাদি ছাড়াও পুলিশ সুপার, দুজন এএসপি এবং ওসিসহ বেশ কয়েকজনের ৫০ মিনিটের অডিও রেকর্ড রয়েছে।
ইয়াবাসংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এ যেন শর্ষের ভেতর ভূত! অপরাধ দমনের দায়িত্ব যাদের ওপর বর্তায়, তারাই যদি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন, তাহলে অপরাধের মাত্রা বাড়তে বাধ্য। কক্সবাজার একটি অপরাধপ্রবণ এলাকা। রোহিঙ্গাদেরও অনেকে এ অঞ্চলে নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ ইয়াবা ব্যবসা সামগ্রিক অপরাধচিত্রের এটি বড় অংশ। উপরের ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন উঠবে যে, কক্সবাজার এলাকাটিকে সত্যিই কি অপরাধমুক্ত করা সম্ভব? প্রশ্নটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা, সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সম্পর্কিত। দেশের পুলিশ বাহিনী বর্তমান সরকারকে কতটা সহযোগিতা করছে, এ প্রশ্ন সরিয়ে রেখেও বলা যায়, এ বাহিনীকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা না গেলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সম্ভব হবে না।
বর্তমান সরকার পুরোনো সমস্যাগুলো নিয়েই হিমশিম খাচ্ছে, নতুন সমস্যা তৈরি হলে, তা-ও আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সৃষ্ট, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা দুরূহ হয়ে পড়বে। তাই কক্সবাজারের ঘটনাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে এবং দোষীদের কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনতে হবে। দ্বিতীয় কথা, এ ঘটনার তদন্ত পুলিশ বাহিনীর সদস্য দ্বারা করলে চলবে না, কারণ অভিযুক্তদের অনেকেই এ বাহিনীর সদস্য শুধু নয়, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা হবে, এটাই প্রত্যাশা।