অকার্যকর ওয়াসার পয়োবর্জ্য লাইন
নগরবাসীর সেবার মান বাড়ানোর পদক্ষেপ নিন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা ওয়াসার সেবার নিম্নমানের বিষয়টি বহুল আলোচিত হলেও সেবার মান বাড়াতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন তা নগরবাসীর কাছে স্পষ্ট নয়। জানা যায়, অকেজো হয়ে রয়েছে ঢাকা ওয়াসার পয়োবর্জ্য লাইনগুলো। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ৫ শতাংশও সেবা দিতে পারছে না সংস্থাটি। এরপরও পয়োনিষ্কাশন সেবা বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল আদায় করা হচ্ছে। বিস্ময়কর হলেও সত্য, পানির সঙ্গে দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে পয়োবর্জ্য নিষ্কাশন সেবা বিলও। এভাবে গত ১৪ বছরে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞ, গ্রাহক ও ঢাকা ওয়াসাসংশ্লিষ্টদের। বস্তুত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কার্যকর সিস্টেম না থাকায় অপরিশোধিত পয়োবর্জ্য পানি ও পরিবেশে ভয়াবহ দূষণ সৃষ্টি করছে। এর প্রভাবে নানা রোগব্যাধিতেও আক্রান্ত হচ্ছেন নগরবাসী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন লাইন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এরপরও সেবা না দিয়ে বছরের পর বছর এ বাবদ অর্থ আদায় করা অন্যায়। তারা বলেন, সেবা না দিয়ে অর্থ আদায়ের বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ঢাকা ওয়াসাকে এ অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, পয়োনিষ্কাশন লাইনগুলো পুরোনো এবং অনেকাংশে হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য নতুন একটি প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে কতটুকু সেবা দেওয়া যাচ্ছে, তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা মহানগরীর প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় ছিল। যথাযথ পর্যবেক্ষণ, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা-ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। ফলে পয়োবর্জ্য বাসাবাড়ি বা অফিস থেকে সরাসরি নিকটবর্তী ড্রেনেজ লাইনে যাচ্ছে। কোথাও আবার খোলা ড্রেনেও ফেলা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এসব বর্জ্য খাল, লেক, নদীতে মিশছে। রাজধানী ও এর আশপাশের খাল, জলাশয়, নদ-নদী দূষণের এটিও বড় কারণ। অকার্যকর ঢাকা ওয়াসার পয়োবর্জ্য লাইন মেরামতের বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে নগরবাসী এটাই দেখতে চায়। নগরীকে দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পদ্ধতি চালু করা না হলে এ লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না।
ঢাকা ও চারপাশের নদী, খাল ও জলাশয়গুলোর দিকে দৃষ্টি দিলেই বোঝা যায়, এগুলোর পানি কতটা দূষিত। কোনো কোনো নদীর পচা-দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে জলজ প্রাণীর পক্ষেও বেঁচে থাকা কঠিন। আর এ দূষণ সৃষ্টির এক বড় কারণ হলো বর্জ্য। রাজধানীর প্রায় শতভাগ মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করে ঢাকা ওয়াসা। পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাকৃত পানিকে ওয়াসা ‘নিরাপদ’ বললেও প্রতিদিন নানাভাবে তা দূষণের শিকার হচ্ছে। অনেকে পানি ফুটিয়ে পান করলেও তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন না হওয়ায় নগরবাসী নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশুদ্ধ পানির সংকট মোকাবিলায় মানুষ যে বিকল্প উৎসের অনুসন্ধান করবে, তারও কোনো উপায় নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বোতলজাত ও কনটেইনারে সরবরাহকৃত বিশুদ্ধ পানির নামেও চলে ভয়াবহ প্রতারণা। যারা বোতলজাত পানি কিনে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে অক্ষম, তাদের কী হবে? ঢাকা ওয়াসার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। বস্তুত এ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক সেবার মান হতাশাজনক। এ অবস্থার উত্তরণে কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হবে, এটাই প্রত্যাশা।