Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ব্যাংক খাতের রুগ্ণ দশা

সুশাসন প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিন

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যাংক খাতের রুগ্ণ দশা

বিগত সরকারের আমলে দেশের ব্যাংক খাতে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে এ খাতে জাল-জালিয়াতিসহ লুটপাট হয়েছে। লুটপাটকারীরা ঋণের নামে আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি তা বিদেশে পাচারও করেছে। ওই সময় বিতরণকৃত ঋণ ও ঋণের বিপরীতে আরোপিত সুদ আদায়ে বিঘ্ন ঘটেছে, এমনকি উলটো সুদ মওকুফের ঘটনাও ঘটেছে। এতে ব্যাংকগুলোর আয় কমেছে। ব্যাংকগুলোর মোট আয়ের সিংহভাগই আসে বিতরণ করা ঋণ ও অন্যান্য সম্পদ থেকে। এ খাতে আয় গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে চলে গেছে। গত ১৮ বছরের মধ্যেও এ খাতের আয় এখন সর্বনিম্নে। এছাড়া মূলধন থেকেও আয় কমেছে। এদিকে ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন রাখার হারও কমেছে। কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বস্তুত ব্যাংকগুলোর আয়ের সিংহভাগই আসে সম্পদ থেকে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিতরণ করা ঋণ, বিনিয়োগ, ধার দেওয়া অর্থ, বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৮ বছর ধরে ব্যাংক খাতে সম্পদ থেকে আয়ের হার কমছে। বিগত সরকারের আমলে প্রথম ২ বছর সম্পদ থেকে আয় আগের বছরের চেয়ে সামান্য বাড়লেও এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমেছে। মাঝেমধ্যে বেড়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করে ২০০৯ সালের শুরুতে। ২০০৮ সালে ব্যাংকগুলো ১০০ টাকার সম্পদ থেকে আয় করেছিল ১ টাকা ২০ পয়সা বা দশমিক ২০ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বছরে ২০০৯ সালে এ আয় ১০০ টাকা সম্পদের বিপরীতে বেড়ে দাঁড়ায় ১ টাকা ৪০ পয়সায়। পরের বছর ২০১০ সালেও আয় ১০০ টাকায় বেড়ে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ বা ১ টাকা ৮০ পয়সা। ব্যাংকগুলোর সম্পদ থেকে আয় ২০০৬ ও ২০০৭ সালে দশমিক ৮০ শতাংশ থেকে দশমিক ৯০ শতাংশ ছিল। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গৃহীত সংস্কারের ফলে ব্যাংক খাতে অনেকটা শৃঙ্খলা চলে আসে। আওয়ামী লীগ সরকার এর সুফল পেয়েছিল প্রথম ২ বছরে। দলটি ক্ষমতায় আসার পরই ব্যাংক খাতের সুশাসন দূর হতে থাকে। এর প্রভাবে ২০১১ সালের সম্পদ থেকে আয় কমে ১০০ টাকায় ১ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়ায়। ২০১২ সালে তা আরও কমে। ওই সময়ে সোনালী ব্যাংকসহ ২৬টি ব্যাংকে হলমার্ক গ্রুপের ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এছাড়া আরও কিছু ছোট জালিয়াতি হয়। ফলে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে যায় এবং সুদ মওকুফের হিড়িক পড়ে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর সম্পদ থেকে আয় কমে যায়।

২০১৩ সালে প্রকাশ পায় বেসিক ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনা। এ ঘটনায় ৬ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এসব ঋণও পর্যায়ক্রমে খেলাপি হয়। এরপর একের পর এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। বস্তুত গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাতের ওপর দিয়ে বলা যায় সুনামি বয়ে গেছে। কাজেই এ খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে যা যা করণীয় সবই করতে হবে। ব্যাংকের কর্মীরা যাতে সব ধরনের প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম