
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের বিরুদ্ধে এবার ফুঁসে উঠেছেন প্রতিষ্ঠানটির জুনিয়র কর্মকর্তারা।
বুধবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মকর্তারা বিএসইসি ঘিরে স্লোগান দিতে থাকেন। চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ তিন কমিশনারকে তারা চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এ সময় কর্মকর্তারা চেয়ারম্যানসহ কমিশনারদের পদত্যাগ দাবি করেন। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে উদ্ধার করে যৌথবাহিনী। বিকালের দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে দাবি আদায়ে আজ থেকে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকটি কারণে বিএসইসির ভেতরেও কর্মকর্তারা কমিশনের ওপরও ক্ষুব্ধ। এর মধ্যে রয়েছে-প্রতিষ্ঠান চালাতে অদক্ষতা, দুর্নীতি, অপেশাদার আচরণ, অধীনস্থদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার এবং একজন নির্বাহী পরিচালককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর ঘটনা। তাদের মতে, বিএসইসি’র ইতিহাসে এবারই প্রথম প্রতিষ্ঠানের ভেতরের লোকজন কমিশনকে অবরুদ্ধ করে রাখে। অন্যদিকে চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে বিনিয়োগকারীরাও বুধবার বিএসইসির সামনে বিক্ষোভ করেন। সবকিছু মিলে শেয়ারবাজারে চরম অস্থিরতা চলছে। তবে এসব ব্যাপারে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিএসইসির মুখপাত্রও কথা বলতে রাজি হননি।
জানা গেছে-বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএসইসির চেয়ারম্যান, কমিশনারসহ কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে বিএসইসি ভবনের চতুর্থতলায় বৈঠক করছিলেন। ওই সময়ে সর্বস্তরের কর্মকর্তারা পঞ্চম ফ্লোরে নেমে আসেন। তারা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এ সময়ে তারা পুরো কমিশনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এরপর বিএসইসি ভবনের মূল ফটক তালাবদ্ধ রাখা হয়। সেই সঙ্গে বিএসইসি চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের ফ্লোর পঞ্চমতলা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিএসইসি ভবনে কেউ ঢুকতে বা বের হতে পারেনি। দুপুর ১টা থেকে রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবিতে বিএসইসির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী বিক্ষোভে অংশ নেন। কমিশনের একাধিক সূত্র বলছে, জুনিয়র কর্মকর্তারা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে তাদের ঘেরাও করে রাখে। এমনকি তারা শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে বর্তমান চেয়ারম্যানের দালাল আখ্যা দিয়ে নানাভাবে হেনস্তা করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যৌথবাহিনী আসে। প্রথমেই কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। তবে শেষে তারা জানায়, তাদের ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। যার ফলে তারা লাঠিচার্জ করে। লাঠিচার্জে কয়েকজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর প্রতিবাদে তারা এই কর্মসূচি পালন করছেন। এর আগে মঙ্গলবার এক আদেশে সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠান রাশেদ মাকসুদ। তবে নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর সাইফুর রহমানকে ওএসডি করা হয়েছিল। এখন তাকে অবসরে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর দেশের অর্থনীতির অন্যান্য খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও ব্যতিক্রম শুধু শেয়ারবাজার। বৃদ্ধি তো দূরের কথা, উলটো প্রতিদিনই কমছে মূল্যসূচক ও বাজারমূলধন। কমছে তারল্যপ্রবাহ। গত সাড়ে ৬ মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক প্রায় ১ হাজার পয়েন্ট কমেছে। এতে ডিএসইর বাজারমূলধন কমেছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। সবকিছু মিলে শেয়ারবাজার গভীর খাদের কিনারায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের এই অবস্থার পেছনে বিএসইসির নেতৃত্বের দুর্বলতা দায়ী। একদিকে বর্তমান কমিশনের শেয়ারবাজারের মতো টেকনিক্যাল খাতের ব্যাপারে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নেই। পুরো কমিশন বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন। অংশীজনের সঙ্গে কথাও বলেন না বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকসুদ। কেউ দেখা করতে চাইলেও সাক্ষাৎ দেন না। অর্থাৎ কমিশন অনেকটাই বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন। কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এতে তাদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে। যার বিস্ফোরণ ঘটে বুধবার।