দুর্নীতি ও ব্যবস্থাপনার দোষে বন্ধ হয়েছে বেক্সিমকো: অর্থ উপদেষ্টা

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৩ পিএম

দুর্নীতি ও ব্যবস্থাপনার দোষে বন্ধ হয়েছে বেক্সিমকোর ১৪টি প্রতিষ্ঠান। ওদের দায় সরকারের ঘাড়ে নেওয়া ঠিক হবে না। সরকার টাকা দিয়ে তাদের (বেক্সিমকো) ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখবে- মনে রাখতে হবে সরকারের টাকা মানে জনগণের টাকা। এ টাকা অন্য খাতে ব্যয় করতে হয়। বিশেষ করে দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তার খাতে ব্যয় বেশি করতে হয়।
বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় ও ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি আরও বলেন, বেক্সিমকোর বিষয়টি ছিল চ্যালেঞ্জ। বরং সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের প্রতি (বেক্সিমকোর শ্রমিক) আমাদের নজর আছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ জোনের (বেজা) সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যদি রিলোকেট করা যায়।
এর আগে ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এক লাখ মেট্রিক টন চাল, দুকার্গো এলএনজি, মসুর ডালসহ পাঁচটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি কমছে। অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম কমে যাওয়া এর প্রধান কারণ। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ায় সাধারণ মানুষের আয়ের ওপর প্রভাব পড়েছে। যদিও সরকার ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি খারাপ নেই, অর্থনীতি ধ্বংসের পথে নেই। অন্তর্বর্তী সরকার বরং অর্থনীতি উদ্ধার করেছে বলে যোগ করেন অর্থ উপদেষ্টা।
তৈরি পোশাক খাতের কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। আরও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এই খাত সচল রাখার চেষ্টা চলছে।
ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের ঋণে গৃহীত প্রকল্পের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আপাতত এসব বন্ধ করার চিন্তা নেই। সব বিষয় খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এসব প্রকল্প যে সরকারই নিক না কেন, তা বিবেচ্য বিষয় নয়। একটি দেশের সঙ্গে যখন এ রকম চুক্তি হয়, তখন অর্থনীতির স্বার্থ খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। চট করে প্রকল্প বাতিল করা যায় না। বাজার ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, আমি সন্তুষ্ট। আরেকটু বেটার হলে ভালো হতো। গত বছরের তুলনায় অনেক পণ্যের দাম এখন কম।
সামনে গরম আসছে, এলএনজি সংকট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা- প্রশ্নের জবাবে বলেন, এলএনজি সংকটের কোনো সম্ভাবনা নেই। আজকে আমরা দুইটা লটে এলএনজি আমদানি করতে বলেছি।
ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত : দেশীয় প্রতিষ্ঠান কাফকো থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনা হবে। এর ব্যয় হবে প্রায় ১৫৫ কোটি টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ৪২২ মার্কিন ডলার।
এ ছাড়া ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনা হচ্ছে। ব্যয় হবে ৯৫ কোটি টাকা। প্রতি কেজি ডালের মূল্য ৯৫.৪০ টাকা। শেখ অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে এ ডাল কেনা হবে।
বৈঠকে সুইজারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর থেকে দুই কার্গো এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত হয়। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুযায়ী স্পট মার্কেট থেকে এই দুই কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে এক হাজার ৪৯৬ কোটি ৩৭ লাখ ১৯ হাজার ৬৮০ টাকা।