Logo
Logo
×

অর্থনীতি

ডিসিসিআইর সেমিনারে বক্তারা

আর্থিক খাতে সুশাসন ফেরানো ঋণের সুদ কমানোর পরামর্শ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২৫ পিএম

আর্থিক খাতে সুশাসন ফেরানো ঋণের সুদ কমানোর পরামর্শ

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান প্রেক্ষাপটে উদ্যোক্তারা আস্থার সংকটে ভুগছেন। উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের হার ডাবল ডিজিটে উন্নীতকরণ, মন্দ ঋণ কমাতে নজরদারি বাড়ানো, আর্থিক খাতে সুশাসন এবং ঋণের সুদ হার কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি রোধে বাজার কঠোর নিয়ন্ত্রণের তাগিদ দিয়েছেন তারা।

শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহিম খান।

মূল প্রবন্ধে তাসকীন আহমেদ বলেন, উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের হার ডাবল ডিজিটে উন্নীতকরণ, মন্দ ঋণ কমাতে নজরদারি বাড়ানো, আর্থিক খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা আনয়ন এবং ঋণের সুদ হার হ্রাস একান্ত অপরিহার্য। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙতে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ভ্যাট হ্রাসের পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়াতে বিলাসবহুল পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো উচিত। এ ছাড়াও স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নীতি সহায়তার ধারাবাহিকতা, অবকাঠামো খাতের সমন্বিত উন্নয়ন এবং বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে আফ্রিকার বাজারে মনোযোগ দেওয়া যেতে পারে। এসএমই খাতের উন্নয়নকল্পে ঋণ প্রাপ্তিতে বিদ্যমান নীতিমালার সহজীকরণ, স্বল্প সুদে অর্থায়নের লক্ষ্যে বিকল্প অর্থায়ন ব্যবস্থার প্রবর্তন ও ডিজিটাল ফাইন্যান্সিং ব্যবস্থার সম্প্রসারণ অপরিহার্য বলে মনে করেন তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আব্দুর রহিম খান বলেন, আমাদের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে মাত্র ৪০ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব আহরণ কোনো ভাবেই কাম্য নয়। লজিস্টিক পলিসি ও বাণিজ্য সহায়তা সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে সামগ্রিক বাণিজ্য ব্যয় ১০-১৫ শতাংশ কমানো সম্ভব। হালকা প্রকৌশল শিল্পকে গেমচেঞ্জার উলে­খ করে তিনি বলেন, এ খাতের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গাজীপুরে একটি টেকনোলোজি সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। রাজস্ব আহরণ বাড়ানো এবং রপ্তানিনির্ভর বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা না গেলে বিনিয়োগ ব্যবধান হ্রাস পাবে না বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।

সেমিনারে নির্ধারিত আলোচনায় পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. সায়েরা ইউনুস অংশ নেন। 

পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে বিলম্ব ও অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর কারণে বিগত দিনগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিলক্ষিত হয়েছে, যদিও ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়ার কারণে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি জানান, রিজার্ভ সংকটের কারণে কাঁচামালের আমদানি ও মেশিনারিজ আমদানিতে বিধি-নিষেধের ফলে আমাদের সাপ্লাইচেইনে স্বল্পতা দেখা দেয়, যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে এবং চলতি বছরের মধ্যে রিজার্ভ ২৫-২৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হলে শিল্প খাতে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিস্বল্পতা কেটে যাবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার সক্ষমতা, কার্যকর উদ্যোগ ও বাস্তবায়ন জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। রিজার্ভ বাড়াতে তিনি শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং শিল্প-কারখানায় অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের ওপর জোরারোপ করেন, যার মাধ্যমে আমাদের রপ্তানি ৫-৭ বিলিয়ন বৃদ্ধি পাবে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং আগামী অর্থবছরে গতানুগতিক বাজেট প্রণয়ন করা হলে বিদ্যমান সংকট সমাধান করা সম্ভব নয়। বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ বেশি হলে এবং সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বাড়লে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হবে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বাজেট, মুদ্রানীতি ও বাজার ব্যবস্থার সমন্বয় একান্ত জরুরি। রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে বিদ্যমান ভ্যাট ব্যবস্থার অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।

বিআইডিএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিল্প খাতে আমাদের কমপ্লায়েন্স বাড়ানোর পাশাপাশি গবেষণার ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি খাতের মধ্যকার সমন্বয়ও বাড়াতে হবে। এ ছাড়াও সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও জয়েন্ট ভেঞ্চারের ওপর জোরারোপ করা উচিত বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের ওষুধ এবং চামড়া খাতের ওপর আরও অধিক হারে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. সায়েরা ইউনুস বলেন, বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতার কারণে আমাদের পণ্য আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে এবং সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি হার সমন্বয়ের মাধ্যমে সেটা মোকাবিলার চেষ্টা করেছে। তবে, ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে পণ্য আমাদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি কাক্সিক্ষত মাত্রায় হ্রাস পায়নি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ২০২৬ সালে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে এবং আগামী বছর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ডাবল ডিজিটে উন্নীত হবে।

অনুষ্ঠানের মুক্ত আলোচনায় ইআরডির অতিরিক্ত সচিব এএইচএম জাহাঙ্গীর বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। পরিকল্পনা কমিশনের সচিবের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট খাতের সমন্বয়ের মাধ্যমে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সবার মতামতের ভিত্তিতে পজিশন পেপার তৈরির পর সরকার এ ব্যাপারে চ‚ড়ান্ত সিদ্বান্ত গ্রহণ করবে। তবে, এলডিসি উত্তরণ আমাদের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা নির্ধারণ করে সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগ ও সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।

ঢাকা চেম্বারে সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এবং পরিচলনা পর্ষদের সদস্যরাসহ সরকারি-বেসরকারি খাতের আমন্ত্রিত অতিথিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম