পর্দা নামল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার
সেরা প্যাভিলিয়ন হলো যমুনা ইলেকট্রনিক্স
শেষ দিনে হুমড়ি খেয়ে পড়েন ক্রেতারা, খুশি বিক্রেতারাও
যুগান্তর প্রতিবেদন, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪০ পিএম
মাসব্যাপী আয়োজিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শুক্রবার শেষ হয়েছে। বিভিন্ন ছাড়ের অফারে রাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনার ধুম। অধিকাংশ স্টলের সব পণ্য বিক্রি হয়ে যায়। ছাড়ে পণ্য কিনে খুশি ক্রেতারা, আর পণ্য বিক্রি করতে পেরে খুশি বিক্রেতারাও। মেলায় সেরা প্যাভিলিয়ন হিসাবে প্রথম পুরস্কার অর্জন করেছে যমুনা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইলস লিমিটেড।
পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের মালটিপারপাস হলে শুক্রবার বিকালে আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুর রহিম, এফবিসিসিআই’র প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান।
এবার বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৪৩টি দেশি-বিদেশি স্টল, মিনি প্যাভিলিয়ন ও প্যাভিলিয়ন অংশ নেয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়ার ১১টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।
মেলায় বিভিন্ন ধরনের কাপড়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, টয়লেট্রিজ, গৃহসজ্জা ও গৃহস্থালি সামগ্রী, ক্রোকারিজ, সৌন্দর্যবর্ধক সামগ্রী, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, হারবাল, ফার্নিচার, ইমিটেশনের গহনা, কসমেটিকস, আইসক্রিম, প্লাস্টিক সামগ্রী, সিরামিক, স্পোর্টস গুডস, মেলামাইন, খেলনা, চামড়াজাত পণ্য, স্যানিটারি ওয়্যার, হস্তশিল্প, পাটজাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের স্টল ছিল। এছাড়া কয়েদিদের তৈরি কারাপণ্য, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় এমআরটিএফের প্যাভিলিয়ন, প্রতিবন্ধীদের তৈরি পণ্যের স্টল, সেনাকল্যাণ সংস্থার স্টল, তুরস্কের কার্পেট ঘরের প্রতি ছিল দর্শনার্থীদের প্রধান আকর্ষণ।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমাতে হবে। সব ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে হবে। আগামীতে বাণিজ্যমেলা আরও দৃষ্টিনন্দন করা হবে। সবুজায়ন, সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, পয়ঃনিষ্কাশনসহ সার্বিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। হস্তশিল্পকে ‘একটি গ্রাম একটি পণ্যে’ পরিণত করতে হবে। দক্ষ কারিগরকে তুলে আনতে হবে, উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, কুড়িল থেকে বিআরটিসি বাসে ১৪-১৫ মিনিটে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা বাণিজ্যমেলায় আসতে পেরেছেন। স্টল বরাদ্দ থেকে শুরু করে মেলার সব কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়েছে। ই-টিকিটিং ছিল এবার ব্যতিক্রম। ৫১টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুর রহিম বলেন, পণ্যের প্রসার ঘটাতে এ মেলার আয়োজন। পণ্য বহুমুখীকরণ ও রপ্তানি বাড়াতে হবে। তবেই মেলার আয়োজন সার্থক হবে।
এফবিসিসিআই’র প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, মেলার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ছিল সন্তোষজনক।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব বিবেক সরকার বলেন, ৩০০ ফুট সড়কের উন্নয়নকাজ শেষ হওয়ায় এখন আর বাণিজ্যমেলা ঢাকা থেকে দূরে নয়। প্রাকৃতিক ও মনোরম পরিবেশ থাকায় এবারের বাণিজ্যমেলায় বিপুল সংখ্যক ক্রেতা ও দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে। মেলার আয়োজন সার্থক হয়েছে।
মেলায় সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে এবার জাতীয় সংসদ ভবন খেজুর বাগান এলাকা থেকে, কুড়িল বিশ্বরোড, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে মেলাপ্রাঙ্গণ পর্যন্ত ১০০ থেকে ১৫০টি বিআরটিসি ডেডিকেটেড শাটল বাস নিয়মিত দর্শনার্থীদের আনা-নেওয়া করেছে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৫১টি প্রতিষ্ঠানকে ট্রফি প্রদানের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সেরা প্যাভিলিয়ন হিসাবে প্রথম পুরস্কার অর্জন করে যমুনা ইলেকট্রনিক্স ও অটোমোবাইলস লিমিটেড। প্যাভিলিয়নের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন যমুনা ইলেকট্রনিক্সের পরিচালক (মার্কেটিং) সেলিম উল্যাহ সেলিম, হেড অব সেলস মেজবাহ উদ্দিন আতিক ও হেড অব সার্ভিস রাজিব সাহা।