কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নীতিমালা
খেলাপি ঋণ মাত্রাতিরিক্ত বাড়লে তা হবে বড় ঝুঁকি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ পিএম
প্রতীকী ছবি
ব্যাংক খাতের ঝুঁকি নিরূপণে নতুন নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ ঝুঁকি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঋণের বিপরীতে জামানতের মূল্যমান হ্রাস পেলে, ব্যাংকের চাহিদার চেয়ে প্রভিশন সংরক্ষণ কম হলে, গ্রাহকদের আমানত তোলার প্রবণতা বেড়ে গেলেও ব্যাংকের জন্য ঝুঁকি হিসাবে বিবেচনা করতে হবে।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারির মাধ্যমে নীতিমালার বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক খাত সংস্কারের আওতায় এ পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন সূচকের মানদণ্ড আরও কঠোর করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়ে দিয়েছে এখন থেকে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হবে।
নীতিমালায় বলা হয়, ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গেলে তা হবে সর্বোচ্চ মানের ঝুঁকি। এর মধ্যে কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩ শতাংশ অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সাম্প্রতিক পাঁচ ত্রৈমাসিকে খেলাপি ঋণ গড়ে এর বেশি বাড়লে তা হবে নিম্নমানের ঝুঁকি। তবে এর বেশি বাড়লে তা পর্যায়ক্রমে উচ্চ ঝুঁকিতে পৌঁছবে। কোনো ব্যাংকের দুজন শীর্ষ ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে তা হবে নিম্নমানের ঝুঁকি। শীর্ষ তিনজন ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে তা হবে মাঝারি মানের ঝুঁকি এবং শীর্ষ পাঁচজন ঋণ গ্রহীতা খেলাপি হলে তা হবে বড় মানের ঝুঁকি।
ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের থাকা জামানতের মান কমে যাওয়াকে ঝুঁকি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঋণের বিপরীতে ব্যাংকে থাকা মোট জামানতের মান ৩০ শতাংশ কমে গেলে তা হবে নিæমানের ঝুঁকি। ৪০ শতাংশ কমলে হবে মাঝারি মানের ঝুঁকি ও ৫০ কমলে হবে বড় মানের ঝুঁকি।
ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত ঋণ ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত হারে প্রভিশন রাখতে হয়। চাহিদার তুলনায় প্রভিশন ১০ শতাংশ কম থাকলে নিম্ন ঝুঁকি, ১৫ শতাংশ কম থাকলে মাঝারি মানের ঝুঁকি ও ২০ শতাংশ কম থাকলে বড় মানের ঝুঁকি হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে।
এভাবে ঋণ, সুদহার, বিনিময় হার, সম্পদ মান, বাজার ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মানের ভিত্তিতে বিভিন্ন সূচকে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি নিরূপণ করতে হবে। এসব ঝুঁকি সমন্বয় করে ব্যাংকগুলোর সার্বিক ঝুঁকি নিরূপণ করতে হবে। এর মাধ্যমে কোনো ব্যাংক যদি অব্যাহতভাবে ঝুঁকির দিকে ধাবিত হয় তাহলে ওই ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে। একই সঙ্গে ঝুঁকির মাত্রা বাড়লে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকেও জবাবদিহি করতে হবে।
ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন সূচকে ঝুঁকির মান নিরূপণ করতে হবে প্রতি ত্রৈমাসিকের শেষে। এর মধ্যে প্রতি বছরের মার্চ, জুন, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকের ঝুঁকিভিত্তিক প্রতিবেদন তৈরি করে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে পরবর্তী মাসের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে।