বিবিএস’র প্রতিবেদন
অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৪ পিএম
অক্টোবর মাসে বেড়েছে দেশের মূল্যস্ফীতি। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এর ধাক্কা লেগেছে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হিসাবে। এ মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। সেইসঙ্গে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
এ ছাড়া খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। গ্রামে ও শহরে সর্বত্রই মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় নাকাল সাধারণ মানুষ। বাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সংস্থাটি।
বিবিএস বলছে, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাক জাতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সার্বিক মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে। এদিকে সাধারণ ক্রেতারা বাজারে গিয়ে চরম সংকটে পড়ছেন। তারা যে আয় করেন তা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না। চাহিদার অর্ধেক বা তারও কম নিত্যপণ্য কিনে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটেছে। জীবনযাত্রার মান নিচে নেমে গেছে। প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাত্রাও কমে আসছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ মাসে খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ ছাড়া খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ।
এদিকে শহরে অক্টোবর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে হয়েছে ৯ দশমিক ০৬ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই মাসজুড়ে ছাত্র আন্দোলন চলছিল। পরে সেটি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এতে দেশে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়। রাজধানী ঢাকা কার্যত সারা দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্থবিরতা নামে পণ্য সরবরাহ চেইনের মধ্যে। এরই প্রভাবে জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছিল। এর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হয়েছিল, যা গত ১২ বছরের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। তারও আগে খাদ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা যায় ২০১১ সালের অক্টোবরে ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ ছিল।
বিবিএস এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, অক্টোবর মাসে সামান্য বেড়েছে মজুরি হার। যা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ মাসে মজুরি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ০৭ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৮ দশমিক ০১ শতাংশ। অক্টোবরে কৃষিতে মজুরি হার বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। শিল্পে মজুরি হার বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ। এ ছাড়া সেবা খাতে মজুরি হার সামান্য বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।