এস আলম-মুক্ত হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৩ পিএম
বেসরকারি খাতের আরও একটি ব্যাংক এস আলম গ্রুপের দখল মুক্ত হলো। এবার ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে পাঁচ সদস্যের নতুন পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে। এতে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। বাকি চারজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসাবে।
আগের পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন মোহাম্মদ সাইফুল আলম। তাকেসহ আগের পর্ষদের সবাইকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে রোববার রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি চিঠি ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এমডিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, ব্যাংকটির নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যরা হলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আজিজুর রহমান, উত্তরা ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল কুদ্দুছ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক মো. সাইফুল আলম ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট রাগিব আহসান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা, তাদের আস্থা ধরে রাখার জন্য এবং সার্বিক বাবে ব্যাংকের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনস্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পদক্ষেপ নিয়েছে। এ পদক্ষেপের ফলে ব্যাংকটিতে আমানতকারীদের আস্থা ফিরে আসবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে।
আজ কালের মধ্যেই ব্যাংকের নতুন পর্ষদ বৈঠক করে ব্যাংক পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক ছিলেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম। ব্যাংকের বেশির ভাগ শেয়ারহোল্ডারই ছিলেন ওই গ্রুপের। ফলে ব্যাংকের লাইসেন্সও ছিল ওই গ্রুপের হাতেই। ব্যাংকটি পরিচালনাও করেছে এককভাবে এস আলম গ্রুপ। দীর্ঘ দিন এ ব্যাংকের এমডি ছিলেন গ্রুপেরই একজন পরোক্ষ কর্মকর্তা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিয়ে এস আলম গ্রুপ পথম এটির মালিকানা পেয়েছিলেন।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কিংবা গ্রুপের কাছে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকার বিধান নেই। কিন্তু এস আলম গ্রুপের হাতেই ছিল ব্যাংকের বেশির ভাগ শেয়ার। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি ব্যাংকটি পরিচালনার ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠারও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ব্যাংক দখল শুরু করে। তারা নামে বেনামে শেয়ার কিনে সেগুলো দিয়ে পর্ষদ দখল করে। এ কাজে সহায়তা করে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এতে নিরব ভূমিকা পালন করে এস আলম গ্রুপের ব্যাংক দখলের কর্মকান্ডকে সায় দেয়।
এখন পর্যন্ত এস আলম গ্রুপের দখলে থাকা ছয়টি ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল করা হলো। এর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এসব ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ পুনর্গঠণ করা হয়েছে।
এছাড়া সাবেক ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কবল মুক্ত করা হয়েছে বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক।