বাজেট ‘হতাশাব্যঞ্জক’ বলছে রপ্তানিমুখী ৩ সংগঠন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৪, ০৭:৫৬ পিএম
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য হতাশাব্যঞ্জক আখ্যা দিয়েছে রপ্তানিমুখী ৩ সংগঠন। কারণ তৈরি পোশাকের খাতের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেওয়া প্রস্তাবগুলো প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।
শনিবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ। তিন সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন বিজিএমইএ সভাপতি এসএম মান্নান কচি। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন ও বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
লিখিত বক্তব্যে এসএম মান্নান কচি বলেন, কঠিন বাস্তবতায় নানামুখী চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সংকোচনমূলক বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অবকাঠামো ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এগুলো বাজেটের ইতিবাচক দিক। যদিও বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেওয়া প্রস্তাবগুলো প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। তবে বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের জন্য সহায়ক প্রস্তাবনাগুলোকে সাধুবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনকভাবে কমে এসেছে, শুধুমাত্র মে মাসেই কমেছে ১৭ শতাংশ। এ সময় মজুরি বেড়েছে ৫৬ শতাংশ, কিন্তু পোশাকের মূল্য বাড়েনি। বরং গত ৯ মাসে পণ্যগুলোর দরপতন হয়েছে ৮-১৮ শতাংশ।শিল্প যখন এরকম একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে রয়েছে, তখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল সিংহভাগ রপ্তানি আয় অর্জনকারী পোশাক শিল্পকে সহায়তা দেওয়া এবং এর মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা।
বাজেটকে শিল্পের জন্য হতাশাব্যঞ্জক আখ্যা দিয়ে এসএম মান্নান কচি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল বাজেটে পোশাক শিল্পের জন্য সহায়ক কিছু নীতি সহায়তা থাকবে।
বিশেষ করে উৎসে কর ০ .৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং এটিকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করার বিষয়ে গভীর প্রত্যাশা ছিল এবং আছে। পাশাপাশি আরও প্রত্যাশা ছিল বাজেটে ইনসেনটিভের উপর আয়কর অব্যাহতি, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত রাখা, এইচএস কোড ও ওজন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা, ইআরকিউ’র উপর আয়কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে আমদানির উপর কর রেয়াত, পোশাকশিল্পের ঝুটের ওপর ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট ও রিসাইকেল ফাইবার সরবরাহের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা আসবে, যা বাজেটে উঠে আসেনি।
ব্যবসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নীতি প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে এসএম মান্নান বলেন, নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে ব্যবসায় টিকতে না পেরে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নিকট ভবিষ্যতে আরও অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যেমন কোভিডকালে অনেক ক্রেতা মূল্য পরিশোধ করেনি। অনেক অসাধু ক্রেতা পণ্য নিয়ে দাম দেয় না। অথচ সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলো যে কাঁচামাল আমদানি করে, হোক সেটি ত্রুটিপূর্ণ, তার জন্যও মূল্য পরিশোধ করতে হয়, কারখানার একাউন্ট থেকে ব্যাংক টাকা কেটে নেয়। এতে করে অনেক কারখানা পথে বসেছে। এজন্য এক্সিট পলিসি দরকার। পাশাপাশি কারখানাগুলোর সুরক্ষার জন্য এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধা প্রবর্তন করার দাবি জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, শিল্পাঞ্চলের বাইরে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ ও ব্যাংক ঋণ না দেওয়ার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটি প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের জন্য একটি বড় অন্তরায়। কারণ ইতিমধ্যে অনেক কারখানা শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছে। এখন বিদ্যুৎ- গ্যাস সংযোগ না দিলে তারা পথে বসবে, রপ্তানি ও কর্মসংস্থান অন্তত ৫ বছরের জন্য বিঘ্নিত হবে। তাই ৫ বছর সময় দিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকরের আহ্বান জানান তিনি।