Logo
Logo
×

অর্থনীতি

অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি, ঈদ পণ্যেও স্বস্তি নেই ক্রেতার

Icon

ইয়াসিন রহমান

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:০৫ পিএম

অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি, ঈদ পণ্যেও স্বস্তি নেই ক্রেতার

রোজায় বাড়তি মুনাফা করতে তিন মাস আগে থেকেই পণ্যের দাম বাড়ায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। অস্থির করে তোলে বাজার। পনেরো রোজার পর দাম কিছুটা কমালেও এবার ঈদ পণ্যের ওপর থাবা বসিয়েছে। কারসাজি করে বাড়িয়েছে দাম। ফলে খুচরা বাজারে পোলাও চাল, ঘি ও মুগডাল এখন থেকেই বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি দুধ, চিনি, সেমাই ও কিশমিশের দামও বাড়তি। সঙ্গে মসলা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্য কিনতে এখন থেকেই ক্রেতার বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এতে বরাবরের মতো এবারও ঈদ ঘিরে পণ্য কিনে ঠকছেন ভোক্তা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক মাস রোজা রাখার পর ঈদে সব শ্রেণির মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে। নতুন পোশাকের সঙ্গে সামর্থ্য মতো ঘরে ভালো খাবারেরও আয়োজন করা হয়। এতে বাজারে এক ধরনের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। আর এই চাহিদাকে পুঁজি করে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ক্রেতার পকেট কাটতে বাড়ায় পণ্যের দাম। প্রতি বছরের মতো এবারও বাজারে সেই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এক প্রকার নির্বিকার কর্তৃপক্ষ। 

শুক্রবার রাজধানীর জিনজিরা বাজার, নয়াবাজার ও রায়সাহেব বাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর রোজার ঈদের আগে ২০০ গ্রামের প্রতিপ্যাকেট চিকন সেমাই ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবার ৪৫-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি খোলা চিকন সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকা দরে, যা আগে ১০০ টাকা ছিল। ২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, যা আগে ৪০ টাকা ছিল। ৪০০ গ্রামের প্রতিপ্যাকেট পাস্তা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা, যা আগে ৭৫ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতিকেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০ টাকা, যা ১৩০-১৪০ টাকা ছিল। এছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকা, যা গত বছর ৭২০-৭৫০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা, যা গত বছর ১৭০-১৮০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, যা আগে ১১০-১১৫ টাকা ছিল।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, ২০০ গ্রামের মিল্কভিটা ঘি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা, যা গত বছর ঈদে বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা। প্রতিকেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা, যা আগে ৬০০-৭০০ টাকা ছিল। দারুচিনি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২০-৫৩০ টাকা, যা আগে ৪৫০-৫০০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০-১৯০০ টাকা, যা আগে ১৫০০ টাকা ছিল। দেশি আদা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৬০ টাকা, যা আগে ২২০-২৩০ টাকা ছিল। দেশি হলুদের কেজি ৩০০ টাকা, আগে ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া গুঁড়া দুধের মধ্যে প্রতিকেজি ডানো প্যাকেটজাত দুধ বিক্রি হচ্ছে ৮৬০ টাকা, ফ্রেস ব্র্যান্ডের প্রতিকেজি গুঁড়া দুধ বিক্রি হচ্ছে ৮২০ টাকা। 

রাজধানীর নয়াবাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. সাঈদ বলেন, বাজারে কোনোভাবেই স্বস্তি নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রিতে বিক্রেতারা কারসাজি করেন। রোজা এলেই পণ্যের দাম বাড়ান। আবার ঈদ আসার আগেও বিক্রেতারা আরেক দফা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে নাজেহাল করেন। প্রতি বছরের মতো এবারও একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই। প্রতি বছর একই অবস্থা হলেও সংশ্লিষ্টরা তাদের শাস্তির আওতায় আনে না। ফলে ভোক্তার নাভিশ্বাস ওঠে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, রোজা-ঈদসহ কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান এলে দেশে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তাই ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে হলে সংশ্লিষ্টদের কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে। 

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এমকে মুজেরি বলেন, রমজানের আগেই অসাধুরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাকে দিশাহারা করে তোলে। আবার নাজেহাল করে ঈদের আগে। কারণ বাজারে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। পর্যাপ্ত তদারকি না থাকায় কোনো কিছু ফলপ্রসূ হচ্ছে না। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রোজা ও ঈদ ঘিরে বাজার সার্বিকভাবে তদারকি করা হচ্ছে। অনিয়ম পেলেই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক অসাধু ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। এতে রোজার মধ্যে কিছু পণ্যের দাম কমতে শুরু করে। আশা করা যাচ্ছে ঈদের আগে পণ্যের দাম আরও কমবে। এ জন্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম