
জার্মান স্পোর্টসওয়্যার জায়ান্ট অ্যাডিডাস ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবার লোকসানের মুখ পড়েছো। প্রতিষ্ঠানটি সতর্ক করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্পোর্টসওয়্যার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বেশি মজুত থাকায় উত্তর আমেরিকায় আবারো বিক্রি কমতে পারে। বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
২০২২ সালের অক্টোবরে কানিয়ে ওয়েস্টের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করে অ্যাডিডাস। ফলে অত্যন্ত লাভজনক ইয়েজি স্নিকার বিক্রি স্থগিত রাখতে হয়, এতে ব্যবসা চালিয়ে যেতে কিছুটা লড়াই করতে হয়েছে জার্মান স্পোর্টসওয়্যার জায়ান্টকে।
বিয়র্ন গুলডেন সিইওর দায়িত্ব নিয়ে প্রথম বছরে সাম্বা ও গাজেল জুতার মতো জনপ্রিয় পণ্যগুলোকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেন এবং খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি মজুত থাকা ইয়েজি স্নিকারের বিক্রি পুনরায় শুরুও করেছিলেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নাইকি ও পুমাকে পেছনে ফেলে অ্যাডিডাসের শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
গুলডেন বলেন, যদিও এখনো অনেক ভালো কিছু হয়নি, তবে বছরের শুরুতে আমি যা আশা করেছিলাম, তার চেয়ে ভালোভাবে ২০২৩ শেষ হয়েছে।
গ্রিনিচ মান সময় ১১ টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত অ্যাডিডাসের শেয়ার লেনদেন হচ্ছিল বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বছর উত্তর আমেরিকায় তাদের বিক্রি কমতে থাকবে এবং অ্যাডিডাস ধারণা করছে, এ বছর ওই অঞ্চলে তাদের বিক্রি প্রায় পাঁচ শতাংশ কমতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদার তুলনায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত মজুত থাকায় স্পোর্টসওয়্যার ও পোশাক কোম্পানিগুলো চাপে পড়েছে। অ্যাডিডাস বলেছে, চতুর্থ প্রান্তিকে উত্তর আমেরিকায় তাদের বিক্রি ২১ শতাংশ এবং আগের বছরের চেয়ে ১৬ শতাংশ কমেছে।
গুলডেন বলেছেন, সামগ্রিকভাবে তাদের আউটলেটগুলোর মাধ্যমে মজুত কমিয়ে ২০২৩ সালে সালে ইনভেন্টরি ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ইউরো কমাতে সহায়তা করেছে, যা ২৪ শতাংশ কমেছে।
লোহিত সাগরে সংকটের কারণে দুই থেকে তিন সপ্তাহের শিপমেন্ট বিলম্বের কথাও জানিয়েছে অ্যাডিডাস। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা হার্ম ওহলমেয়ার বুধবার বলেছেন, এই বিঘ্ন অব্যাহত থাকলে কার্যকরী মূলধনের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
অ্যাডিডাস আশা করছে, ২০২৪ সালে ইয়েজি বাদে তাদের ব্যবসার উন্নতি হবে, দ্বিতীয়ার্ধে অন্তত ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। তারা সাম্বা ও গাজেলের মতো স্নিকার থেকে উপকৃত হয়েছে এবং গত বছর উৎপাদন বাড়িয়েছে। এতে চতুর্থ প্রান্তিকে তাদের বিক্রি ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে পোশাক বিক্রি ১৩ শতাংশ কমেছে।
ইউনিয়ন ইনভেস্টমেন্টের পোর্টফলিও ম্যানেজার থমাস জোকেল বলেন, বিয়র্ন গুলডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অ্যাডিডাস সবকিছুতে সঠিক দিকে এগোচ্ছে।
চীনে অ্যাডিডাস আরও ভালো করার প্রত্যাশা করছে। ২০২৩ সালে চীনে তাদের ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পর বিক্রি দ্বিগুণ বাড়বে বলে তাদের প্রত্যাশা।
অ্যাডিডাস গত মাসে মজুত থাকা ইয়েজি পণ্য থেকে কম আয় প্রত্যাশা করেছিল। প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, তারা 'ন্যূনতম দামে' স্নিকার্স বিক্রি করবে।
গত বছর ইয়েজি বিক্রি থেকে অ্যাডিডাস আয় করেছে ৭৫০ মিলিয়ন ইউরো, এতে তাদের ৩০০ মিলিয়ন ইউরো মুনাফা হয়েছে। কোম্পানিটি দাতব্য সংস্থাগুলোকে অনুদানের জন্য ১৪০ মিলিয়ন ইউরো আলাদা করে রেখেছে।
অ্যাডিডাসের বোর্ড ৫৮ মিলিয়ন ইউরোর নিট লোকসান সত্ত্বেও ২০২৩ সালের পারফরম্যান্সে শেয়ার প্রতি শূন্য দশমিক ৭০ ইউরো (০.৭৬৫০ ডলার) অপরিবর্তিত লভ্যাংশ প্রস্তাব করবে, যা ১৯৯২ সালের পর প্রথম।