বাণিজ্যিক ব্যাংকে এমডি নিয়োগ, পুনঃনিয়োগ
প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কমিটি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৪, ১১:০০ পিএম
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ বা পুনঃনিয়োগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের সার্বিক যোগ্যতার মূল্যায়নের জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে যারা ব্যাংকের এমডি হবেন বা এমডি হিসাবে পুনঃনিয়োগ পাবেন তাদের এই কমিটির কাছে সাক্ষাৎকার দিয়ে ব্যাংক পরিচালনার সার্বিক যোগ্যতার বিচারে উত্তীর্ণ হতে হবে।
কমিটি অনুমোদন করলেই কেবল সংশ্লিষ্ট প্রার্থী ব্যাংকের এমডি হিসাবে নিয়োগ বা পুনঃনিয়োগ পাবেন। তবে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এ বিধান কার্যকর হবে না। কেবল সরকারি-বেসরকারি সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হবে।
এ বিষয়ে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বিশেষায়িত ব্যাংক ছাড়া অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকের পরবর্তী পর্ষদ সভায় সার্কুলারের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতে হবে। এ বিষয়টি ব্যাংকের সব কর্মকর্তার নজরে আনার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে তার আওতায় এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগে এ ধরনের কোনো কমিটি ছিল না। ব্যাংকের পর্ষদ এমডি নিয়োগ বা পুনঃনিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অনুমোদন দিয়ে দিত। নতুন নিয়মে এখন থেকে ব্যাংকের পর্ষদ এমডি নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বাছাই করে বা পুনঃনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রস্তাব তৈরি করে সব কাগজপত্রসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই কমিটি প্রার্থীকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকবে।
ওই সাক্ষাৎকারে প্রার্থীর যোগ্যতা মূল্যায়নের পাশাপাশি তিনি ব্যাংক কীভাবে পরিচালনা করবেন সেগুলো জানতে চাওয়া হবে। একই সঙ্গে পুনঃনিয়োগের ক্ষেত্রে এমডির আগের কার্যক্রম খেলাপি ঋণ ও অবলোপন করা ঋণ আদায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। তার সময়ে নতুন খেলাপি ঋণ কেমন হলো সেগুলোও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
এর ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই কমিটি প্রস্তাব অনুমোদন করলে তিনি কাজ শুরু করতে পারবেন। আর অনুমোদন না করলে তিনি আর এমডি হতে পারবেন না। তখন পর্ষদকে নতুন প্রস্তাব পাঠাতে হবে। তবে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যাংকে তিন মাসের বেশি এমডির পদ খালি রাখা যাবে না।
সার্কুলারে বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এমডি পদে নিয়োগ বা পুনঃনিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন করে। এ কারণে ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সদস্য হিসাবে রয়েছেন একই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক, অফসাইট সুপারিভশন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক। এছাড়া ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের পরিচালক সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
কমিটি প্রার্থীর দায়িত্বের প্রতি অঙ্গীকার, অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা, বয়স ও নেতৃত্বের গুণাবলির বিষয়াদি যাচাই করবে। মনোনীত ব্যক্তি আগে কোনো ব্যাংকের এমডি হিসাবে থাকার সময় তার কাজের মূল্যায়ন করা হবে।
সূত্র জানায়, ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে এমডি মূল ভূমিকায় থাকেন। এ কারণে এমডি শক্তভাবে ব্যাংক পরিচালনা করলে কোনো পক্ষই অবৈধ সুবিদা নিতে পারে না। আগে যেসব ব্যাংকে জাল-জালিয়াতি হয়েছে তার বেশির ভাগের সঙ্গেই ব্যাংকের এমডি জড়িত বা তিনি সুবিধাভোগী ছিলেন। কিছু ক্ষেত্রে এমডি সব জেনে কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেননি।
এ কারণে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এমডি নিয়োগে গুরুত্ব দিয়েছে। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো সরকারের বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করে বলে ওই খাতে সরকার থেকেই এমডি নিয়োগ করা হয়। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই।